::মহেশখালির মিষ্টি পানের খিলি::

মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধূরী
Published : 10 Sept 2012, 12:08 PM
Updated : 10 Sept 2012, 12:08 PM

সংস্কৃত 'পর্ণ' থেকেই বাংলায় পান শব্দটি এসেছে। প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পান একটি জনপ্রিয় খাবার হিসাবে পরিগনিত হয়ে আসচ্ছে। এই দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, লাওস এবং ভিয়েতনাম। মধ্যযুগীয় কবি আলাওল তার পুঁথি সাহিত্যে পানের বর্ননা করেছেন এভাবেই -"অধর রাতুল কৈল তাম্বুল রসে" । রাতুল মানে হলো লাল আর পানের আরেক নাম তাম্বুল; পানের পিকের তামাটে রঙের দিকে খেয়াল রেখে সংস্কৃত তাম্র থেকে তাম্বুল শব্দটি এসেছে। তাই সংস্কৃত ভাষায় পানকে তাম্বুল বলা হয়। হিন্দুশাস্ত্র মতে, সুপারী, খয়ের ও চুন একসাথে হলে তাকে 'তাম্বুল' আখ্যা দেয়া হয়। এক সময় হিন্দু বিধবাদের জন্য পান নিষিদ্ধ ছিল। যেহেতু পান আনন্দের প্রতীক, সেহেতু বিধবারা এটা চিবানোর অনুমতি পেতেন না। পান নিয়ে গান শেফালী ঘোষের কন্ঠে চট্টগ্রামের খুবই জনপ্রিয় একটি আঞ্চলিক গান হচ্ছে- 'যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, বক্সির হাটের পানের খিলি তারে বানাই খাবাইতাম'। যেটি পরবর্তীতে "মহেশখালির পানের খিলি" নামে একটু পরির্বতন করে আজিজুর রহমানের 'সাম্পানওয়ালা' নামক ছবিতে সংযোগ করা হয়। অথবা উপমহাদেশের বিখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার কন্ঠে -"পান খেয়ে ঠোঁট লাল করিলাম" আবেদনভরা এই গানটি প্রবল জনপ্রিয়তা পায় একসময়। পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে বন্ধুর দৃষ্টি আকর্ষন করা এই পান এখন আর শুধু বাঙালি নারীর ঠোঁটই লাল করে না; গ্রামবাংলার বরজের পান এখন চলে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বাজারেও। পান নিয়ে বোম্বের 'ডন' ছবিতে অমিতাভ বচ্চন অভিনীত 'খাইকি পান বানারাস ওয়াল, খুল য্যায়ে বান্ধ আকাল তালা' এই গানটি জনপ্রিয়তায় পান নিয়ে গানের সকল রের্কডকে ছাড়িয়ে যায়। বিয়ে বাড়ীতে কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়ী বেড়াতে গিয়ে অথবা নিজ বাড়ীতে খাওয়া-দাওয়ার পর মুখ পরিস্কার করতে পান না খেলে যেনো অনেকেরই চলেনা। ঐতিহাসিকেরা মনে করেন, আজ থেকে প্রায় হাজার বছর আগে থেকেই দক্ষিন এশিয়ার মানুষ পান খাওয়া রপ্ত করে ফেলেছিলো। পাঁচ হাজার বছর আগে লেখা শ্রীমদ্ভগবতে লেখা আছে, দেবতা কৃষ্ণ পান খেতেন। বলা হয়ে থাকে, দেব চিকিত্সক ধন্বন্তরীর সহায়তায় আয়ুর্বেদ পণ্ডিতরা এটা আবিষ্কার করেন। ইতিহাসে রয়েছে, সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রিয়তমা রানী নূরজাহান অন্দরমহলে নারীদের কাছে পান জনপ্রিয় করে তোলেন। পানের প্রকারভেদ বাংলা, মিঠা, সাচি, কর্পূরী, গ্যাচ, নাতিয়াবাসুত, উজানী, মাঘি, দেশী, মহানলী, চেরফুলি, ভাবনা, সন্তোষী, জাইলো, ভাওলা, ঝালি প্রভৃতি জাতের পান আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় পান ভালো ফলন দেয়। সাধারণত উঁচু জমি এবং দোঁআশ মাটি পান চাষের জন্য বেশি উপযোগী। পানের ঔষধী গুন পানের নাকি অনেক ঔষধী গুন আছে। পানে প্রচুর মাত্রায় ক্লোরোফিল থাকে৷ এইজন্য পানের রস ওষুধের মত কাজ করে৷ 'ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সী ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার [আইএআরসি]' তাদের এক গবেষনাপত্রে বলেছে, সুপারী দিয়ে পান চিবানো স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। সুপারী খেলে অনেক জটিল রোগের হাত থেকে ভালো থাকা যায়। পান চিবুলের পানের ভেতর থেকে বের হয়ে আসা রস স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। পানে ইউজিনল এবং সুপারীতে এ্যারেকোলিন ও টারপিনিয়ল নামক রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এগুলো শরীরের তাপ কিছুটা বাড়ায়, ঘামের উদ্রেক করে এবং হার্টবিট রেট ও রক্তচাপ বাড়ায়। পান-সুপারী আমাদের শরীরের জন্য মৃদু উত্তেজক। পান-সুপারীর কিছু ভাল দিক আছে। মনে করা হয় এগুলো দাঁতের ক্ষয় রোধ করে, দাঁতের এন্টিসেপ্টিক হিসেবে কাজ করে, মুখের দুর্গন্ধ দূর করে, কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়, কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে এবং হজমে সাহায্য করে, আর চুনের ক্যালসিয়াম দাঁতের জন্য বাড়তি উপকার করে। সূত্রঃ- ইন্টারনেট। ছবির স্থান: আগাঁরগাও, ঢাকা। তারিখ: ১০/০৯/২০১২ইং, সময়: বেলা ১২:০৬ মিনিট। ছবিটি আইফোনে তোলা।