বাংলার মানুষ পথে নেমে কখনোই ব্যর্থ হয়নি, এবারও হবে না নিশ্চয়?

মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধূরী
Published : 11 Feb 2013, 09:02 AM
Updated : 11 Feb 2013, 09:02 AM

১৯৫২(ভাষার দাবী), ১৯৭১(মুক্তিযুদ্ধ- নতুন দেশের দাবী), ১৯৯০(স্বৈরশাসকের পতনের দাবী) এবং ২০১৩(যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবী)তে বাংলার মানুষ পথে নেমেছে। প্রথম বাংলার মানুষ ভাষার দাবীতে পথে নেমেছিল ১৯৫২ সালে…সেই দাবী আদায় করে ছেড়েছে। ১৯ বৎসর পর ১৯৭১ সালে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণ ও নিপিড়ন থেকে মুক্তির জন্য পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে আবারো গর্জে উঠে বীর বাঙ্গালী…সেই দাবীও আদায় করে ছেড়েছে। ফলে আমার পেয়েছি স্বাধীন একটি ভূখন্ড এবং পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন একটি দেশ, যার নাম বাংলাদেশ। গণতন্ত্রের সাফল্যকে ঘরে তোলার আগেই সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু সেনাকর্মকর্তা নব গঠিত এই দেশটির জাতির পিতাকে নির্মম ভাবে হত্যা করলো। ভূলুন্ঠিত হলো নতুন দেশ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন।

তারপর ক্ষমতার পালা বদলে সামরিক শাসনের কবলে পড়লো লক্ষ শহীদের দেশ সোনার বাংলাদেশ। সামরিক সেনা শাসন ও স্বৈরচারের কবল থেকে দেশ রক্ষা জন্য স্বাধীনতার ২০ বৎসর পর আবারো বাংলার মানুষ পথে নামলো। স্বৈরচারের পতন ঘটিয়ে এবারও বাংলার মানুষ দাবী আদায় করে ছাড়লো। তারপর আশা করেছিল এবার হয়ত সত্যিকারের গণতন্ত্রের স্বাদ পাবে বাংলার মানুষ।
কিন্তু গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বারবার নিজের ভোট প্রদান করে সরকার নির্বাচিত করার পরও বিএনপি বা আওয়ামীলীগ কোন দলেই জনগণের আশা পূরণ করতে পারেনি। যখন যে দল ক্ষমতায় গেছে…তখন বিরোধী দল বরাবরেই থেকেছে সংসদের বাইরে। ফলে জনগণের পক্ষ হয়ে কোন দল সত্যিকারের গণতান্ত্রিক আচরনও করেনি এবং জনগণের প্রত্যাশাও পূরন করেনি আজ পর্যন্ত। শুধু মাত্র ক্ষমতার মসনদে বসে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে নিজেদের আখের গোছানোর চেষ্টা করেছে প্রতিবার।

আর এই ক্ষমতার পালা বদলের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতার ৪২ বৎসর অতিবাহিত হয়ে গেল। আওয়ামীলীগ বা বিএনপি দুদলেই যুদ্ধাপরাধী জামাত-শিবিরকে নিজেদের ক্ষমতায় আরোহণের সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধের মতো জগণ্য নৃশংসতার বিচার পর্যন্ত করতে পারেনি। কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকার ২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আরোহণ করে। যুদ্ধাপরাধী হিসাবে বাচ্চু রাজাকারের প্রথম রায় মৃত্যুদন্ড দেওয়া হলে বাংলার মানুষ খুশি মনে তা মেনে নেয়। কিন্তু ২য় রায় হিসাবে ৬টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি সন্দাহতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরও কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কেউ মেনে নিতে পারেনি। বিশেষ করে তরুণ সমাজ। ফলে ব্লগাররা ফুঁসে উঠে। কয়েকজন ব্লগার মিলে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবীতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচীর ডাক দেয়। এই ডাকে সাড়া দিয়ে সৃষ্টি হয় গণজোয়ার…. নতুন প্রজন্মের আরেক মুক্তিযুদ্ধের। এই যুদ্ধ সব যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে দেশকে কলন্কমুক্ত করার যুদ্ধ। আজ সময়ের দাবী, নতুন প্রজন্ম আজ জেগে উঠেছে….এভাবে আর নয়।

৪২ বৎসর পর্যন্ত সব সরকার রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের মন্ত্রীত্ব দিয়ে দেশের পতাকাকে কলন্কিত করেছে বিএনপি সরকার। এর আগে আওয়ামীলীগও জামাতের সাথে একজোট হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছে। অর্থাৎ রাজনীতির প্রশ্নে ক্ষমতাভোগী বড় দুটি দলেই জামাতকে ব্যবহার করেছে নিজ নিজ স্বার্থে। সুতরাং বাংলার জনগণ দুটি বড় দলের প্রতিই সন্দেহ পোষন করে এবং করাটাই সমচিন। এখানেও সেই একই প্রশ্ন ৪ঠা ফেব্রয়ারী'১৩ইং মতিঝিলে জামাত-শিবিরকে পুলিশ প্রটেকশনে সমাবেশ করার সুযোগ দেওয়া, যুদ্ধাপরাধী হিসাবে ৬টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরও কাদের মোল্লার ফাঁসি না হওয়াতে…..বাংলার তরুণ প্রজন্ম বর্তমান সরকারের সাথে জামাতের কোন ধরনের আঁততের গন্ধ পাচ্ছে। আর বিএনপি, শাহবাগের প্রজন্ম চত্ত্বরের গণজাগরনের সাথে সংহতি প্রকাশ না করে উল্টো ৯ই ফেব্রুয়ারী'১৩ইং চট্টগ্রামে জামাত-শিবিরের দেওয়া সকাল-সন্ধ্যা হরতালকে সমর্থন দিয়েছেন। সুতরাং এ সব কার্যক্রম থেকে বুঝা যায় বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই না। তাই এখন আন্দোলনরত লক্ষ লক্ষ তরুণ প্রজন্মের সাথে সমগ্র দেশবাসীর একটি প্রশ্ন সব যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারের শেষ পর্যন্ত ফাঁসি হবে তো? নাকি কু-রাজনীতির কাছে তরুণদের এই জাগরণ, এই গণদাবী হার মানবে। আমরা ১৯৫২, ১৯৭১, ১৯৯০ আন্দোলনে জয়ী হয়েছি…এবারও নিশ্চয় যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের ফাঁসির দাবী আদায়ে জয়ী হবো ইনশাল্লাহ।

গণজাগরনের আরো কিছু ছবি:-


ছবি: পতাকার মান রক্ষার শপথে নতুন প্রজন্ম।


ছবি: গণজোয়ারের মাঝে নতুন প্রজন্ম।

ছবি: আমাদের পতাকার মান আমরাই রক্ষার করবো।

ছবি: লাল সবুজের মিশেলে পতাকার মিছিল।

ছবি: এই মিছিল পতাকার মান রক্ষার।

ছবি: আলোর পথে নতুন প্রজন্ম এই মিছিল রাজাকারদের ফাঁসি চাই ।