আলিফ লাইলা-৩: র‌্যাংকিং-এর গুড়ে বালি!

শিশির ভট্টাচার্য্যশিশির ভট্টাচার্য্য
Published : 22 Dec 2011, 07:27 AM
Updated : 15 July 2019, 10:08 AM

[পূর্বকথা: তথাকথিত চরিত্রহীনা এক বেগমের পরকীয়ার যারপরনাই নারাজ হয়ে হিন্দুস্তানের বদমেজাজি বাদশাহ শাহরিয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, প্রতি রাতে তিনি এক যুবতীকে নিকাহ-এ-মুতা করবেন এবং ভোর হলেই এক রাতের সেই বেগমকে কতলের আদেশ দেবেন। কয়েক বৎসরে বেঘোরে ইন্তেকাল ফরমালো শত শত যুবতী কন্যা। ক্ষুরধার বুদ্ধিমতী উজিরকন্যা শেহেরজাদি স্বজাতির প্রতি করুণাপরবশ হয়ে বোন দিনারজাদির সঙ্গে সল্লা করে নিজে থেকেই বাদশা শাহরিয়ারকে নিকাহ করেন। জীবনের শেষ রাতে শেহেরজাদির আবদার রাখতে বাসরঘরে ডেকে আনা হয় দিনারজাদিকে। রাত গভীর হলে পূর্বপরিকল্পনামাফিক শেরজাদিকে এক সওয়াল পুছেন বোন দিনারজাদি: 'দিদি, সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং-এ বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হয় না কেন?' শেহেরজাদিও কালবিলম্ব না করে একের পর এক কারণ বাৎলাতে শুরু করে দেন, কিন্তু ভোরের আজান হওয়া মাত্র জওয়াব বন্ধ করে শুয়ে পড়েন। বাদশাহ বাকি কারণগুলো জানতে আগ্রহী ছিলেন বলে সেদিনকার মতো মৃত্যুদণ্ড বাতিল হয় শেহেরজাদির। আজ সেই সওয়াল-জওয়াবের তৃতীয় রাত্রি]

প্রিয় ভগ্নী দিনারজাদি। প্রাচীনকাল থেকে পাঠাগার হচ্ছে যে কোনো বিদ্যায়তনের প্রাণভোমরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির কী করুণ দশা যদি একবার গিয়ে দেখতে! মলাটছেঁড়া, পাতাকাটা ধূলিধূষরিত একেকটি বই বার্ধক্যজনিত কারণে কোমর ভেঙে কাত হয়ে কতকাল ধরে যে এক জায়গায় পড়ে রয়েছে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া প্রায় শতাব্দীপ্রাচীন কাঠের শেলফগুলোতে! ধূলা ঝেড়ে এই বই পড়ে কার সাধ্য! ছাত্ররা এখানে নিজে এসে বই হাতে নিতে পারে না। কোন বইটি প্রয়োজন, কর্মচারীদের তারা বলবে এবং এর পর কর্মচারীরা সেই বই খুঁজে এনে দেবে। অদ্ভূত নিয়ম। ছাত্রদের হাত লেগেওতো কিছু ধূলা দূর হতে পারতো! অবশ্য বই এখানে কেউ পড়ে বলেও মনে হয় না। শিক্ষার্থীরা তো বিসিএস গাইড গিলতে ব্যস্ত।

সেই একই নাক খুঁটতে থাকা, আনস্মার্ট, কাজ করতে অনিচ্ছুক কর্মচারীর দল কখনই একটি বই খুঁজে দিতে পারেনি শেহেরজাদিকে। পান চিবাতে চিবাতে এসে জানিয়েছে, হয় বইটি হারিয়ে গেছে, নয়তো চুরি হয়ে গেছে অথবা মিসপ্লেসড হয়েছে কোথাও। নামাজের সময় গেলে তো তুমি কাউকেই পাবে না। কোথাও কেউ নেই, সব সুনসান। দুই শেলফের মাঝখানে হাঁটতে গিয়ে মাকড়শার জাল আটকে যাবে তোমার মাথায়। এক শ বছরের বছরের পুরনো জাল হয়তো নয়, কারণ গ্রন্থাগার এবং তার ব্যবস্থাপনা গত একশ বছর ধরে একই রকম অকার্যকর থাকলেও মাকড়শারা চিরজীবী হয় না– তাদের বোনা জালও চিরস্থায়ী হবার কোনো কারণ নেই।

প্রায় ত্রিশ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য্য। তিনি সাকুল্যে এই গ্রন্থাগারে ত্রিশ দিন গেছেন কিনা সন্দেহ। অথচ প্যারিস, মন্ট্রিয়ল, ওসাকা, টোকিওর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি পাঠাগারেই পড়ে থাকতেন। কেন যেতে ইচ্ছে করে না তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে? বিদেশে থাকতে থাকতে ওনার নাকটা কি একটু বেশিই উঁচু হয়ে গেছে? আর কিছু নয়, শুধু ধূলার কারণেই এই লাইব্রেরি ব্যবহার-অযোগ্য ঘোষিত হতে পারে। আর্দ্রতা, তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র আছে। ধূলা মাপার জন্যে 'ডাস্টোমিটার' জাতীয় কোনো যন্ত্র থাকলে ভালো হতো। পাঠাগারের ধূলার পরিমাণের উপর যদি র‌্যাংকিং নির্ভর করতো, তবে র‌্যাংকিং-এ পিছনে পড়ে থাকতো না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এত নিম্নমানের পাঠাগার নিয়ে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হবার স্বপ্ন কি সাজে? কীভাবে আগামি কয়েক বছরের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার আগাম ঘোষণা দেয়া একটি দেশের প্রধানতম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এবং সেই দেশের সরকার এমন একটি মুমূর্ষু পাঠাগার এখনও সহ্য করছেন ভেবে পাই না। এঁরা যখন দেশবিদেশে যান সরকারি খরচে, তখন কি দেখেন না, সেখানকার লাইব্রেরিগুলো কেমন? দেশের উন্নয়নই যদি না হলো, তবে দেশের টাকায় বিদেশভ্রমণে কী ফায়দা? কোটি কোটি টাকা খরচ হয় এই এক লাইব্রেরির পেছনে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দিব কোথা? ভালো পাঠাগার না থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং থেকে বাদ পড়ার অষ্টম কারণ।

আগে তো দর্শনধারী, তার পর গুণবিচারি। আমাদের যুগে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাালিক উপস্থিতি অপরিহার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন বা বাহ্যিক পরিবেশ সুন্দর হলেই শুধু চলবে না, এর ওয়েবসাইট বা আন্তর্জালিক ভবনটিও নান্দনিক এবং মানসম্পন্ন হতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট কিংবা বাংলাদেশের বেশিরভাগ সরকারি ওয়েবসাইট দেখে আদৌ উচ্চমানের মনে হয় না, কী নান্দনিকতায়, কী ব্যবহারবান্ধবতায়। দেখেই মনে হয়, এগুলো একেকটি শিল্পবোধহীন কোনো ওয়েব ডিজাইনারের হাতে গড়া। দুর্বল ওয়েবসাইট র‌্যাংকিং থেকে বাদ পড়ার নবম কারণ।

অথচ বাঙালি যে পারে না তাতো নয়। শাহজালাল কিংবা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট যথেষ্ট নান্দনিক এবং ব্যবহার-বান্ধব। অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ ইত্যাদি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটগুলো কখনও কি খুলে দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্তা-কর্তা-বিধাতারা? তুলনা করেন না তাঁরা নিজেদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট কেমন হওয়া উচিত, সেটা জানতে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটটি অন্তত (ঠিকানা: iml.du.ac.bd) দেখা যেতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজের ওয়েবসাইটখানা প্রাইভেট সার্ভার ভাড়া করে চালায়। নিজস্ব একটি সার্ভার পর্যন্ত নেই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের, সেও নাকি র‌্যাংকিং-এ আসতে চায়! যদি সেই ভাড়াটে সার্ভারে কোনো সমস্যা হয়, তবে ঢাবির ওয়েবসাইট কেমন খাবি খাবে? বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় দূরে থাক, ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিল, গ্যোটে ইনস্টিটিউটের মতো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানেরও নিজস্ব সার্ভার রয়েছে বলে শুনেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সার্ভার থাকতেই হবে। এই সার্ভার বাইরে ভাড়া দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বাড়ানোও সম্ভব। আশ্চর্যের বিষয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয় তাতে ব্যবহৃত প্রোগ্রামগুলোর বেশিরভাগ, যেমন উইন্ডোজ কিংবা মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল… বেআইনীভাবে কপি করা। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে এই বেআইনী কাজ করে? বৈদ্যুতিন চৌর্যবৃত্তি র‌্যাংকিং থেকে বাদ পড়ার দশম কারণ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোটি নান্দনিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোমবাতি মার্কা সেকেলে লোগো বদলানো উচিত। 'শিক্ষাই আলো' কথাটিও ভুল। জ্ঞানই আলো, শিক্ষা জ্ঞান বা আলোক-প্রাপ্তির উপায় মাত্র। তাছাড়া মোমবাতির মিটমিটে আলোর টিমটিমে শিক্ষাব্যবস্থা বদলানোর সময় কি আসেনি? বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোতে চোখের ভিতরে রয়েছে বাংলা অক্ষর 'অ', কিন্তু বেশির ভাগ বিভাগে, এই যেমন ধরুন ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে, ইংরেজিতে পড়ানো বাধ্যতামূলক, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে বাংলা ভাষা আন্দোলন হয়েছিল। হায়রে কপাল!

চীনের ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান। এই বিশ্ববিদ্যায়ের নতুন ক্যাম্পাস দূরে থাক, পুরনো ক্যাম্পাসেরও ধারে কাছে আসতে পারবে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নান্দনিকতা ও সুযোগ-সুবিধায়। হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী পড়ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা হাতে গোনা। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যার উপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং নির্ভর করে। এক সময় বহু দেশের শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতো। এখন বাংলা শিখতেও কেউ আসতে চায় না এই বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে। বাংলাদেশে শিক্ষার্থী-ভিসা পাওয়া সহজ নয়। বিদেশি কোনো ছাত্র অনেক কাঠখড় না পুড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে বলে মনে হয় না। হতাশ হয়ে অনেক বিদেশি বাংলা শিখতে সৌদি আরব কিংবা পাকিস্তান চলে যায় বলেও শুনেছি। যথেষ্ট সংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী না থাকা র‌্যাংকিং-এ স্থান না হবার একাদশতম কারণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের কক্ষ দখল করে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ বা আধবুড়ো শিক্ষকেরা, বছরের পর বছর ধরে, কারণ ভাড়াটা এখানে তুলনমূলকভাবে কম। সেই এক দেড়খানা রুমেই সন্তানের জন্ম হচ্ছে, সন্তান বড় হচ্ছে, কারও কারও সন্তানের বিয়েও হয়তো হচ্ছে। অনেকের বাইরেও বাসা আছে, কিন্তু এই রুম ছাড়ে না কেউ। বিদেশে গেলেও কোনো আত্মীয়কে বসিয়ে দখল রাখে। যে কয় খানা কক্ষ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ভাগে পায়, সেগুলোর সুযোগ-সুবিধাও কি র‌্যাংকিং-এ আসার মতো? শিক্ষকেরা শুধু যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কক্ষ জবরদখল করে থাকেন শুধু তাই নয়, এই ছাত্রাবাসের বারান্দায় দড়ি টাঙিয়ে তাদের বৌয়েরা অন্তর্বাস থেকে শুরু করে ঘরের ছেঁড়া ন্যাকড়া পর্যন্ত কী না শুকাতে দেন। ছি! 'রুচি' শব্দটা ঢাবির শিক্ষকদের অভিধান থেকে কি মুছেই গেল! সার্বিক নান্দনিকতার অভাব র‌্যাংকিং থেকে ছিঁটকে পড়ার দ্বাদশতম কারণ।

ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ে ডজন ডজন খাবারের জায়গা আছে। আছে দোকান, সুপার মার্কেট, চারতারা হোটেল বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনের ভিতরেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে সেই আদ্যিকালের মধুর ক্যান্টিন আর হাকিম চত্বরের মতো নোংরা, অস্বাস্থ্যকর, বাসি খাবার। মুখের খাবারে ঢাবি পিছিয়ে আছে, মনের খাবারেও এগিয়ে নেই। ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা সংস্থা থেকে গত এক শ বছরে ৫,০০০ এর বেশি পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে, চীনা ভাষায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত পুস্তকের সংখ্যা কি ৫০০ অতিক্রম করেছে? এই ৫০০ পুস্তকও কি মানসম্পন্ন?

এত কিছুর পরও ইউনান বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং-এ আসে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং-এর স্বপ্ন কেন দেখে? সম্প্রতি কোনো এক ডিন লন্ডনে গিয়ে এক সভায় বলেছেন, র‌্যাংকিং নিরুপণ সংস্থাকে মোটা অংকের টাকা দেওয়া হয়নি বলে নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তারা নাকি অন্যায়ভাবে র‌্যাংকিং-এ রাখেনি। পাগল নাকি পেট খারাপ বুঝি না। র‌্যাংকিং কি একটা? হাজারটা র‌্যাংকিং আছে এবং কোনটিতেই অন্তর্ভুক্ত হবার বিন্দুমাত্র যোগ্যতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই।

পরিত্রাণের উপায়? গরীব যখন অসুস্থ হয় তখন সে কী করে? চিকিৎসার ক্ষমতা যার নাই সে প্রার্থনা করে আর অপেক্ষা করে। প্রার্থনা করে কখন ঈশ্বর মুখ তুলে তাকাবেন, আর অপেক্ষা করে কখন এক শেখ মুজিব এসে স্বাধীনতার ডাক দেবে। 'ওয়েটিং ফর গোদো'– বেকেটের নাটক। ঈশ্বরে কেউ বিশ্বাস করুন বা না করুন, ভরসাটা তেনার উপর করতে বাধ্য আমরা সবাই। যদি কখনও সেই মহোদয় বাঙালি জাতির প্রতি সুপ্রসন্ন হন, মুখ তুলে চান, তবে সরকার এমন কোনো ব্যক্তিকে উপাচার্য নিয়োগ দিয়েও ফেলতে পারেন যাঁর অল্পস্বল্প ভিশন আছে। কিন্তু সেই ভীষণ ভালো ঘটনাটি ঘটার জন্যে বাঙালিদের ভীষণ রকম অপেক্ষাও করতে হতে পারে। ঈশ্বরের কখন কী মর্জি হয় তা মরণশীল মনুষ্যের জানবার কথা নয়।

প্রার্থনা শব্দের একটা মানে 'চাওয়া', 'প্রাপ্তির প্রত্যাশা করা'। কেন্দ্রীয় মসজিদ থাকা সত্তেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে গড়ে তোলা হয়েছে প্রার্থনার স্থান। অথচ কাজাকিস্থানের মতো মুসলিমপ্রধান দেশে শিক্ষায়তনে ধর্মচর্চা নিষিদ্ধ। ঈশ্বরকে ডাকতে ডাকতে বাঙালি মুখে ফেনা তুলে ফেলছে, কিন্তু ছিঁচকাদুনে বাচ্চার উপর মা যেমন বিরক্ত হয়, বাঙালির উপর ঈশ্বরও সম্ভবত তিতিবিরক্ত হয়ে আছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এত প্রার্থনা সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ঈশ্বরের ইদৃশ বিরক্তিজনিত অমনোযোগ র‌্যাংকিং থেকে বাদ পড়ার ত্রয়োদশতম কারণ।

বিশ্বের বাকী সব বিশ্ববিদ্যালয় যখন র‌্যাংকিং-এ এগিয়ে যাবে এবং বাঙালিরা 'হা র‌্যাংকিং, হা র‌্যাংকিং' মাতম করতে করতে পড়ে থাকবে সবার পেছনে, বহু পেছনে। কেউ কেউ ঢাকা কিংবা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে দোষ দিয়ে মনে শান্তি পেতে পারেন, কিন্তু 'ভূতাবস্থা অপরিবর্তিত থাকিলে' প্রাইভেট তো দূর কী বাত, বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান তো দূরে থাক, আগামি কয়েক প্রজন্মে কোনো বিশ্বর‌্যাংকিং-এ স্থান পাবে না, অলৌকিক কিছু যদি না ঘটে যায়– এ কথা (চট্টগ্রাম অঞ্চলে লোকজন যেমন রাগ করে বলে থাকে) 'কাইন্যা আঙ্গুলত ছেপ দি' বাঁ হাতে লিখে দিতে পারি।

[বাদশা এবং দিনারজাদি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলেন। ইতিমধ্যে পূবের আকাশে সুবেহ-সাদিকের চিহ্ন ফুটে উঠলো এবং ভোরের আযানও শোনা গেল: 'আস সলাতু খাইরুম মিনান নাউম' অর্থাৎ 'নিদ্রাপেক্ষা নামাজ উত্তম।' শেহেরজাদি পূর্বরাত্রির মতোই কথা থামিয়ে দিলেন। ফজরের নামাজ পড়ে নকশি-লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লেন দুই বোন। বাদশা শাহরিয়ারও বেরিয়ে গেলেন ফজরের নামাজ পড়তে। ডজন ডজন কারণের মধ্যে ১৩টি মাত্র জানা হয়েছে। বাকি সব কারণ জানার আগ্রহ ছিল বলে বাদশাহ শেহেরজাদির মৃত্যুদণ্ড চতুর্থ দিন পর্যন্ত স্থগিত করলেন।]