একটা সময় ছিল তাঁত শিল্পের হাতে বুনা কাপড় বাংলার পোশাককে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি দিয়েছিল তার মধ্যে মসলিন অন্যতম। তাছাড়া জামদানী, বেনারসী, তাঁতের শাড়ী বা লুঙ্গির কদরও কম ছিলনা। আজ আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং কাপড় বুনার সরঞ্জাম সুতা, রং ইত্যাদির মূল্য বৃদ্ধি হওয়াতে অনেক তাঁতীই তাদের পৈত্রিক এই ব্যবসাটি ছেড়ে দিয়েছেন। তারা পেট বাঁচানোর দায়ে এখন অন্য পেশাতে ঢুকে পড়ছেন। তারপরও কিছু কিছু তাঁতী তাদের বাপ-দাদার পেশাকে অতি কষ্টে টিকিয়ে রেখেছেন। এমন একটি দৃশ্য দেখতে পেলাম মানিকনগর, ঝিটকা, মানিকগঞ্জে গিয়ে। সবিতা রাণী তার শশুর বা দাদা শশুরের পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্য একাই লড়ে যাচ্ছেন। যদিও পেটের দায়ে তার স্বামী অন্য পেশায় ঢুকে পড়েছেন। অন্য দিকে বৃদ্ধ আব্দুল আজিজও তার বাপ-দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্য এখনো এই পেশা ছাড়তে পারেন নি। তারা দুজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি পিস লুঙ্গি বুনতে তাদের ২দিন সময় লাগে। ৬ পিসের একরোলে লাগে ১১ থেকে ১২ দিন। প্রতি পিস লুঙ্গি বুনতে খরচ পড়ে প্রায় ৪০০ টাকা। আর বিক্রি করতে পারেন ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি পিস লুঙ্গিতে তাদের লাভ হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা। এতে তারা প্রতি দিন গড়ে ৭৫ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক হিসাবে পায়। যেহেতু বর্তমানে অন্য পেশায় একজন শ্রমিকের গড় আয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পড়ে সেখানে তারা পায় মাত্র ৭৫ টাকার মতো। এর ফলশ্রুতিতে ক্রমশঃ এই পেশা থেকে তাঁতীরা তাদেরকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়া বাজারে আধুনিক মেশিনে বুনা প্রতিটি ভালমানের লুঙ্গি এখন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। ফলে হাতে বুনা তাঁতীদের লুঙ্গির দাম মেশিনে বুনা লুঙ্গির চেয়ে বেশি পড়ার কারণেও অনেক ক্রেতা কিনতে চায় না এই লুঙ্গি। তবে কিছু দেশী সৌখিন ও বিদেশী ক্রেতারাই নাকি এই লুঙ্গি বেশী কিনে থাকেন। এই শিল্পকে বাঁচাতে অবশ্যই সরকারী ও বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।
ছবির স্থান: মানিক নগর, ঝিটকা, মানিকগঞ্জ। তারিখ: ১১/০৫/২০১২ইং, সময়: বিকাল ০৩:৩০ মিনিট।