আমরা আর লাশ দেখতে চাইনা

ইমামুল হুসাইন ইমন
Published : 4 August 2014, 12:58 PM
Updated : 4 August 2014, 12:58 PM

লিখতে ইচ্ছে করছিলো না, তারপরও চেষ্টা করলাম। কারণ টিভির পর্দায় মুন্সিগঞ্জের লঞ্চ ডুবির সংবাদটি দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেছে। না জানি এখানে কতজন মারা যাবে। যাইহোক যে শিরোনামটি দিয়েছি তার আলোকে কিছু লিখতে চেষ্টা করলাম। শিরোনামটি দেখে অনেকের হয়তো অনেক কিছুই মনে হতে পারে। যদি ভালো লাগে তাহলে পড়বেন, না লাগলে পড়ার দরকার নাই।

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা, লঞ্চ ডুবির ঘটনা ঘটছে সেটি পেছনের দিনগুলির চেয়ে অনেক হারেই বেশি। লঞ্চ ডুবি একটু বিরতি নিয়ে হলেও সড়ক দুর্ঘটনা যেন নিত্য নৈমেত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন আমরা বাড়ি থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হই এক অজানা শঙ্কা নিয়ে। যে শঙ্কা আমাদের মানসিক অশান্তিরও একটা কারণ। আসুন এইবার একটু গভীরে যাওয়া যাক।

আমাদের দেশে প্রতিদিনই কেউ না কেউ দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। সুস্থ্য মানুষ বাড়ি থেকে বের হয়ে হয়তো লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে। কথাটি কিন্তু আমি বানিয়ে বলছিনা। সড়ক দুর্ঘটনা এখন একটি ব্যাধির মতো। যেটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমাদের চারপাশে। সামনে দু'কদম হাটলেই আমরা আক্রান্ত হতে পারি সেটা দ্বারা। জানিনা এই ব্যাধি থেকে নিস্তারের কোন পথ আছে কিনা?

আমাদের দেশে কোন দুর্ঘটনা ঘটার পর বেশ কিছুদিন আমরা সেটিকে পুঁজি করে নানান কর্মসূচীর উদ্যোগ গ্রহণ করি। কিন্তু ক্ষত শুকিয়ে গেলেই যে যবর যা, তে যবর তা এই অবস্থায় ফিরে আসে। এই ধরুন মুন্সিগঞ্জের লঞ্চ ডুবির জন্য আগামীকালকে আমাদের দেশের পত্রিকা গুলোতে বড় বড় শোক বার্তা বের হবে। উপরি মহলের কতিপয় ব্যক্তিবর্গ একটু নড়েচড়ে বসবে। লঞ্চ ডুবি ঠেকাতে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এভাবে চলবে অন্তত কিছু দিন। তারপর মরা মানুষের খোঁজ কে রাখে। প্রতি বছরই আমাদের দেশের কিছু মানুষের প্রাণ বিসর্জন যায় জলের ভিতরে অথবা চাকার তলে। যা থেকে পরিত্রানের কোন উপায় হয়তো আমাদের মতো ছাপোষা মানুষদের নেই। শুধু এটি মেনে নিতে হবে নিয়তির নির্মম পরিহাস।

মুন্সিগঞ্জের লঞ্চ ডুবির ঘটনায় ০২ টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু প্রায় ২০০ মানুষের উদ্ধার কাজে নিয়োগ করা হয়েছে মাত্র ১২ জন ডুবুরিকে। ঘটনা ঘটলেই তদন্ত কমিটি। তারপর এই তদন্ত কমিটি প্রত্যক্ষদর্শী দু'চার জনের বয়ান নিয়ে ৮০-৯০ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন তৈরী করবে। লঞ্চ ডুবির কারণ হিসেবে হয়তো দুষবে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনকে। প্রতিবেদনটি দেখে এই বিভাগে নিয়োজিত কর্মকর্তাগণ আমাদেরকে আশ্বস্ত করবে যথাযত ব্যবস্থা গ্রহণের। এভাবে টিভির পর্দা গরম হবে বেশ কিছুদিন। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে দুর্ঘটনা কমানোর কোন উদ্যোগই গ্রহণ করা হবে না কোন কালে। লঞ্চ ডুবি কি আমাদের দেশে নতুন কোন ঘটনা? পূর্বেও এইরকম ঘটনা ঘটেছে অনেক। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের ঘটনাও নতুন নয়। কিন্তু এটি বন্ধ হচ্ছেনা কেন?

তারপর ধরুন সড়ক দুর্ঘটনার কথা। সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো কি? হয়তো অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যান, ভাঙা রাস্তা । কিন্তু এই কারণগুলো কি সমাধান যোগ্য নয়? অবশ্যই সমাধান যোগ্য। আমাদের দেশের বড় পীরগুলো যদি একটু উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে হয়তো সড়ক পথে কোন সমস্যায় থাকবেনা। আমরা দেখি বিশেষ দিগুলো উপলক্ষ্যে আমাদের দেশের রাস্তাগুলো পুটিং করা হয়। বছরের বেশিরভাগ সময়ই এই রাস্তাগুলোই মাছ চাষের উপযোগী থাকে। শুধু বিশেষ কিছু সময়ে এগুলো ফসল চাষের উপযোগী করা হয়। এটি সত্য কিনা? আপনাকে উত্তর দিতেই হবে "হ্যাঁ"।

যাইহোক কথা বাড়াবো না। শুধু বড় পীরদের কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করবো, আপনারা দুর্ঘটনা কমানোর জন্য বাস্তবিক কোন উদ্যোগ গ্রহণ করুন। আমরা আর লাশ দেখতে চাইনা! আমাদের আপনজন পথে পড়ে মরুক এটা আমরা চাইনা। আমরা জানি আপনারা ইচ্ছে করলে রাতারাতি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আপনাদের পায়ে পড়ি, আপনারা সমস্যাগুলো একটু দেখুন।