ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত দেশের ৪৫ লাখ শিশু শ্রমিক

ইমরুল কায়সার ইমন
Published : 25 June 2011, 07:49 AM
Updated : 25 June 2011, 07:49 AM

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে শিশু শ্রমিকদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি জরিপ অনুযায়ী দশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৭৯ লাখ। এসব শিশু শ্রমিকের মধ্যে ৬৪ লাখ গ্রামাঞ্চলে এবং বাকী ১৫ লাখ শহরে বিভিন্ন শ্রমে নিয়োজিত। এসব শ্রমিকের মধ্যে ৪৫ লাখ শিশু শ্রমিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত। এদের মধ্যে ৩২ লাখ শিশু সপ্তাহে ১৪ ঘণ্টা এবং ১৩ লাখ শিশু শ্রমিক সপ্তাহে ৪৩ ঘণ্টা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে।

শিশু শ্রমিকদের কাজের বিষয়ে দেশের অন্যতম শিশু শ্রম প্রতিরোধ মূলক সংগঠন সোস্যাল ইকোনমিক এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম সিপ সমন্বয়কারী মহসিন উদ্দিন জানান, শিশু শ্রমের ওপর বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং আইএলও'র জরিপ অনুযায়ী ৪৫ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ রয়েছে। এর মধ্যে ৪১ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের অংশগ্রহণ রয়েছে। ফলে দেখা যায় মাঠ-শ্রমিকের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ হচ্ছে শিশু।মাট শিশু শ্রমিকের মধ্যে ৭৩.৫০ ভাগ ছেলে এবং ২৬.৫০ ভাগ মেয়ে। শিশু শ্রমিকের ৬.৭০ ভাগ আনুষ্ঠানিক খাতে এবং ৯৩.৭০ ভাগ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে।

বর্তমান পরিস্তিতিতেয বয়সে একটি শিশুর শিক্ষা ও বিনোদনের যথাযথ সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে বিকশিত হওয়ার কথা,সই বয়সে তাদেরকে জীবিকা নির্বাহের জন্য শ্রম দিতে হচ্ছে। যা কিনা আন্তর্জাতিক শ্রম আইন পরিপন্থী। এসব শিশু শ্রমিকেরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। বরং তারা সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে নানা মাত্রার বঞ্চনা এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মেয়ে শিশুদেরকে যৌন হয়রানির মতো অমানবিক নির্যাতন পোহাতে হচ্ছে। স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ না থাকায় শিশু শ্রমিকেরা জড়িয়ে পড়ছে জুয়া, নেশাসহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে তাদের ভবিষ্যৎ।

এছাড়াও শহরে ও গ্রামের শিশু শ্রমিকরা বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক খাত যেমন ট্যানারী, শিল্প কলকারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, জাহাজ ভাঙ্গা, পরিবহন সেক্টর এবং অনানুষ্ঠানিক খাত কৃষি, পশু পালন, গৃহকর্ম, নির্মাণ কর্ম, ইট ভাঙ্গা, রিকশা-ভ্যান চালানো,লাহা কাটার কাজসহ প্রভৃতি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছে। যা কিনা একজন মানুষের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।

হাজারীবাগ ট্যানারিতে শিশু শ্রমের বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানাস এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ জানান, ট্যানারিতে মোট শ্রমিকের ১০%থকে ১৫% মিশু শ্রমিক রয়েছে। এসকল শিশু শ্রমিকের দ্বারা ভারি বা কঠিন কোনো কাজ করানো হয়না। শুধু মাত্র কোনো কিছু আনা বা লাইনম্যান অপারেটর বা অন্যান্য শ্রমিকদের সাহায্যকারী হিসেবে এই সকল শিশু শ্রমিক কাজ করছে। তিনি জানান, তার জানা মতে এই ট্যানারি এলাকাতে গুরুতর কোনো শিশু শ্রমিক নির্যাতনে ঘটনা ঘটেনি।

দেশে মিশু বন্ধের লক্ষে কয়েক জন বিশেষজ্ঞের কাছে মতামত জানতে চাইলে তারা জানা, শিশুশ্রম নিরসন নীতি ২০১০ এর গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য অংশের সকল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যথাযথ প্রচারের এবং এর বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা। শিশু শ্রমিকের সঠিক সংখ্যাসহ সকল তথ্য উপাত্তের জন্য নির্ভরযোগ্য ও সঠিকভাবে জরিপ পরিচালনা করা এবং এইসব তথ্য উপাত্ত প্রতিনিয়ত হালনাগাদের ব্যবস্থা করা, সঠিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে শিশুশ্রম নিরসন নীতি ২০১০ এর আলোকে শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন মেয়াদী জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা, শিশুশ্রম নিরসন নীতি ২০১০ এর আলোকে শিশুশ্রমের ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রগুলো নির্দিষ্ট ও এর ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করে নীতি, কর্মসূচি ও আইনের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন ত্বরান্বিত করা, শিশুশ্রম সম্পর্কিত আইনসমূহ যুগোপযোগীভাবে সংশোধন ও প্রয়োজনবোধে নতুন আইন প্রণয়ন করা, শিশুশ্রম বন্ধ করার লক্ষ্যে আশাপ্রদ ফলাফলের জন্য সরকার ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের এডভোকেসি-নেটওয়ার্কের কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন করা এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে কার্যকরি ও জোরদার মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা।