জাবি ছাত্রীর আত্মহত্যা

ইমন রহমান
Published : 11 August 2011, 02:46 AM
Updated : 11 August 2011, 02:46 AM

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৫তম ব্যাচের মেধাবী ছাত্রী মারজিয়া জান্নাত সুমী গতকাল মঙ্গলবার জাহানারা ইমাম হলের ৩২৩ নম্বর কক্ষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। এর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে প্রেমঘটিত কারণে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্নাতক পরীক্ষায় তিনি প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। গত ২ আগস্ট তাঁর স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ হলেও তিনি হলে অবস্থান করছিলেন। গতকাল সুমির আত্মহত্যার খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁকে একনজর দেখার জন্য বন্ধু ও প্রিয়জনরা ভিড় জমাতে থাকে। সুমির সহপাঠীরা জানান, স্নাতক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম হওয়ার পর ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে গত ২ আগস্ট ভালোভাবে স্নাতকোত্তর শ্রেণীর পরীক্ষা শেষ করেছেন তিনি। স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ফলেও তিনি প্রথম হবেন বলে জানান ওই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। স্নাতকোত্তরে প্রথম হতে পারলে তাঁর অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হবে বলে বান্ধবীদের কাছে প্রায়ই বলতেন সুমি। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা সঠিক জানা যায়নি। সুমির গ্রামের বাড়ি জামালপুরে। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। বাবার নাম আবদুস সালাম।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রীরা জানালা দিয়ে সুমিকে ৩২৩ নম্বর কক্ষে ওড়না দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে বিষয়টি হল প্রশাসনকে অবহিত করেন। হল প্রশাসন পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করায় হলের ছাত্রীরা কক্ষের দরজা ভেঙে সুমিকে বের করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল ও পরে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর সুমির লাশ জাহানারা ইমাম হলে নিয়ে আসা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁর জামালপুরের গ্রামের বাড়িতে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে জনিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. আরজু মিয়া। এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত সুমির অভিভাবকরা কেউ ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছাননি। ঘটনার পর সুমির কক্ষ থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জনিয়েছেন হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট ড. কে এম মহিউদ্দিন। তবে ওই ডায়েরিতে কী লেখা আছে সে সম্পর্কে কিছু বলেননি তিনি। ডায়েরিটি আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম ডায়েরি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ডায়েরি দেখে সুমির আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ বোঝা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রেমঘটিত কারণে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুমির ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগের এক শিক্ষকের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ এক বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সুমি তাঁদের বলেছিলেন, স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তাঁরা বিয়ে করবেন। কিন্তু হঠাৎ করে ওই শিক্ষক তাঁকে বিয়ে করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সুমির আত্মহত্যার পর ওই শিক্ষকের মুঠোফোনে গতকাল বিকেল পর্যন্ত একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে পরে ওই নম্বর থেকে ফোন করেন বোটানি বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী আকন্দ। তিনি জানান, ওই শিক্ষকের সঙ্গে মাস ছয়েক আগে সুমির পরিচয় হয়েছে বলে তিনি জানতেন। ইতিহাস বিভাগের অন্য এক শিক্ষকের মাধ্যমে সুমির সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে কথা হয় ওই শিক্ষকের। এরপর তাঁদের মধ্যে ফোনে কথা হতো। মাস দুয়েক আগে সুমির আগের বিয়ে এবং স্বামী তাঁকে ডিভোর্স দিয়েছেন_এমন তথ্য পাওয়ার পর থেকে সুমির বিষয়ে আর আগ্রহ দেখাননি তিনি।