এম এল এম কোম্পানী (যেমন- ডিসটিনি ২০০০ লি): প্রতারক চক্র যে জাল ছড়াচ্ছেই

এম. হামিদুজ্জামান সুমন
Published : 25 July 2011, 03:51 PM
Updated : 25 July 2011, 03:51 PM

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এম এল এম) কোম্পানী নামের প্রতারক চক্র (যেমন- ডিসটিনি ২০০০ লি:) প্রতারণার এক গভীরতর জাল ছড়াচ্ছেই, যদিও খালি চোখে এই প্রতারণা চোখে পড়ে না । এর কারণ সাধারন মানুষের জ্ঞানের দুর্বলতা ও অর্থ লোভ। এদেশের সাধারণ মানুষের হিসাব জ্ঞানে দুর্বলতা, অর্থ লোভ ও অন্ধবিশ্বাসকে পুঁজি করে তথাকথিত মাল্টি লেভেল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত স্বল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে।

একটা পণ্য বিক্রির মাধ্যমে আপনাকে সদস্য করে এম.এল.এম পদ্ধতির মাধ্যমে এক বিশেষ কৌশলে কমিশন দিচ্ছে এবং বলছে প্রতিষ্ঠান তার পণ্য বিক্রির মাধ্যমে বেকার যুব সাধারণ সহ সবাইকে একটা কমিশন দিয়ে কর্ম সংস্থানের সুযোগ দিচ্ছে। কিন্তু এই পদ্ধতির পরিণতি সম্পর্কে আপনাকে জানাচ্ছে না।

ডেসটিনি ও এম.এল.এম কোম্পানীতে চাকুরী নিতে হলে প্রথমে নিজে একটি পণ্য বা পণ্যের প্যাকেজ ক্রয় করতে হয়। তারপর সে ডানে একজন ও বামে একজন, মোট দুইজন লোক কোম্পানীতে নিয়ে আসতে পারলেই পরিবেশকের কমিশন লাভ শুরু হয়। অতঃপর তার নীচে জালের মত নেট যতই প্রসারিত হবে, ততই পরিবেশকের কমিশনের পরিমাণ বাড়তে থাকবে। এ কথাটি শুনতে খুবই ভাল লাগে। কিন্তু বাস্তবে রূপ দেয়া বড় কঠিন। আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব থেকে ভুলিয়ে বালিয়ে দুইজন লোক সংগ্রহ করা সহজ হতে পারে। কিন্তু তারপর ঐ দুইজনের মাধ্যমে নেট অগ্রসর হওয়া অনিশ্চিত। এই অনিশ্চয়তার জন্যে এ সমস্ত কোম্পানীতে যোগ দেয়ার ব্যপারে হারাম হওয়ার সম্ভ্যবতা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

এই কমিশন লাভ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। কারণ তার নিজের বানানো দু'জন ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের বিষয়টি সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। কারণ তার নীচের লোকেরা নেট সম্প্রসারণ করতে না পারলে লোকটি কমিশন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে, যে কমিশনের লোভেই মূলত লোকটি কোম্পানীতে যুক্ত হয়েছে।

ধরা যাক প্রথম সদস্য কমিশন পেতে থাকলো এবং এক পর্যায় ক্রয়কৃত পণ্যটির মূল্য সম্পুর্ণ ফেরত পেল। তাহলে আমরা দেখতে পাবো যে, প্রথম সদস্য যখন টাকা পেয়ে লাভবান হতে শুরু করলো, তখন সর্বমোট ২৫৫ জন এই জালে ধরা পড়লো। এই হিসেবে আড়াই হতে তিন লক্ষ জনসংখ্যার কোন শহরে যখন ২৬২১৪৪ জন লোক সদস্য হবে তখন লাভবান হতে শুরু করবে মাত্র ৪০৯৬ জন সদস্য। লক্ষ্য করুন তারা কেবল লাভবান হতে শুরু করবে; অর্থাৎ তার বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাবে মাত্র। সুতরাং এই জালিয়াতির সহজ রূপটি দেখা যাচ্ছে যে, এতে মাত্র গুটি কতক মানুষ লাভবান হচ্ছে আর বাকী ব্যপক জনসাধারণ প্রতারিত হচ্ছে।

অপর দিকে বাজারে কোন পণ্যের চাহিদা থাকলেই কেবল ঐ পণ্যটির যোগান তৈরী হয়। কারণ, কেবল আপনার চাহিদা থাকলেই আপনি ঐ পণ্যটি কিনতে আগ্রহী হবেন। অর্থনীতির ভাষায় চাহিদার অনুমিত শর্ত হলো, ১. পণ্যটির প্রয়োজনীয়তা বোধ করতে হবে; ২. পণ্যটি কেনার ইচ্ছা থাকতে হবে; ও ৩. পণ্যটি কেনার মতো আর্থিক সামর্থ থাকতে হবে।

কিন্তু মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে তাদের ইচ্ছা মত পণ্য কিনতে আগ্রহী হতে হবে আপনাকে। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি আগে যোগান নিশ্চিত করে তারপর চাহিদা থাক আর না থাক সদস্যদের কিনতে বাধ্য করায়। এটা কিভাবে বৈধ ব্যবসা হতে পারে, একবার ভাবুন। শুধু পণ্য বিক্রয় করেই তারা তারা লাভবান হচ্ছেন টা নয় বরং নুতুন সদস্যদের নিবন্ধন ফি থেকে তারা একটা মোট অংকের টাকা বাটপারি করছেন।

এই পদ্ধতি অবশ্যই একটি জালিয়াতি। শুধু নিজেকে নয় দেশের সকল সাধারণের জন্যও আপনাকে এগিয়ে আসতে হবে এবং প্রতিরোধ করতে হবে এইসব প্রতারকদের। সরকারকেও তার অসাধু কর্মকর্তাদের কঠোর ভাবে দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে, কারণ এইসব কর্মকর্তারাই এ সকল অপরাধ চক্রকে সাহায্য করছে।