জলবায়ু পরিবর্তন কল্পনা, ধারণা এবং বাস্তবতা

পাহলোয়ান এরশাদ
Published : 26 Oct 2014, 09:22 AM
Updated : 26 Oct 2014, 09:22 AM

বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় জলবায়ুর পরিবর্তন যার মুল কারন হিসেবে বলা হয় বিশ্বউষ্ণায়ন কে। এই উষ্ণায়নর জন্য দ্বায়ী করা হয় মুলত শিল্পবিপ্লব ও কার্বন নিঃসরণর কে । শুধু কি শিল্পবিপ্লব ও মানব সৃষ্ট কার্বন নিঃসরণ ই দ্বায়ী নাকি এর পেছনে অন্য কোন কারন দ্বায়ী তা এখানে বোঝার চেষ্টা করব ।

বিশ্ব উষ্ণায়ন বলতে কী বুঝি ?
বিশ্ব উষ্ণায়ন বলতে আমরা বুঝি পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি কে।বর্তমানে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির পারিমাণ আমরা অনুভব করতে পারছি।কিন্তু কেন এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি আর এর কারনই বা কি?সারা পৃথিবী তে একটি কথা প্রচলিত আছে যে মানুষ পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্ন্য দায়ী ! কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি আসলে মানুষ এর জন্য কতটা দায়ী?আমরা না জেনে এর দায়ভার সম্পুর্ণভাবে মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়েছি। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি,বরফ গলা এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি এই তিনটি বিষয একে অপরের পরিপুরক।

বিশ্ব উষ্ণায়ন এর জন্য দায়ী কারণ গুলিঃ
১।পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যাকার সম্পর্ক
২। সৌর-কলঙ্ক
৩।সূর্য এবং চন্দ্রের আর্কষন
৪।আগ্নেয়গিরি
৫।প্লেট টেক-টনিক্স

এবার আসুন এই কারন গুলি কে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি

পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যাকার সম্পর্ক
পৃথিবীর তাপমাত্রা বারার অন্যতম কারন পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যাকার দূরুত্বের হ্রস-বৃদ্ধি।যখন পৃথিবির ও সূর্যের মধ্যাকার দূরুত্ব কমে যায় তখন পৃথিবী বেশী তাপমাত্রা শোষন করে ।আবার পৃথিবীর ও সূর্য্যের মধ্যাকার দূরুত্ব বেড়েযায় তখন পৃথিবী কম তাপমাত্রা শোষন করে ।পৃথিবীর ঘূর্নয়ন পথে অক্ষ সূর্যের দিকে হেলে যাবার কারনে তাপমাত্রার হ্রস-বৃদ্ধি হয়।যখন অক্ষ সূর্যের দিকে হেলে যায় তখন পৃথিবীর বেশিভাগ অংশ সূর্য্যের আলো পায় যার কারনে পৃথিবী বেশি তাপ শোষন করে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।সূর্যের বিষুব রেখা অতিক্রম কাল কম-বেশি হবার কারনে তাপমাত্রা কম বেশি হয়।আসুন এই সম্পর্কে "মিলাঙ্কভিচ '' হাইপোথিসিস টি দেখি.

মিলাঙ্কভিচ তাপমাত্রা বৃদ্ধির ৩টি কারন উল্লেখ করেন
1. Eccentricity of the Earth's orbit
2. Obliquity of the ecliptic
3. Precession of the equinoxes

Eccentricity of the Earth's orbit:


সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী দুই ধরনের কক্ষপথ সৃষ্টি হয়,একটি বৃত্তাকার অপরটি উপবৃত্তাকার ।একটি কক্ষপথ হতে অন্যটিতে যেতে সময় লাগে ৯৬০০০-১০০০০০ বছর ।সুতরাং ৯৬০০০-১০০০০০ বছর পর পর পৃথিবী তার কক্ষপথ পরিবর্তন করে,আর এর সাথে পরির্তন ঘটে তাপমাত্রর ।পৃথিবী বৃত্তাকার পথে চলার সময় সূর্যের সাথে সমান দূরুত্ব বজায়ে রাখে তখন তাপমাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধির পরিমান কম হয়।কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখন ,যখন উপবৃত্তাকার পথে ঘুরে ।এ সময় সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যাকার দূরুত্ব কম-বেশি হয় এবং তাপমত্রার পরির্বতন ঘটে। পৃথিবী যখন উপবৃত্তাকার পথে থাকে তখন X ও Y অক্ষ বরাবর যথাক্রমে দুরুত্ত্ব বৃদ্ধি ও হ্রাস ঘটে । X অক্ষ বরাবর থাকার সময় শর্টওয়েভ রেডিয়েশন কম শোষন যার কারনে তাপমাত্রা কমে যায় আবার Y অক্ষ বরাবর থাকার সময় শর্টওয়েভ রেডিয়েশন বেশি শোষন করে কারন সূর্য ও পৃথিবীর দূরুত্ত্ব কমে যায়।কিন্তু এখানে একটি প্রশ্ন থেকে যায় কেন কক্ষপথ বৃত্তাকার থেকে উপবৃত্তাকার হয়? এর উত্তর হল পৃথিবীর ম্যাগনেটিক এন্যোমালি পরিবর্তন হবার কারনে এটি ঘটে থাকে।

Obliquity of the ecliptic:


পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরার সময় কক্ষপথ এর তলের সাথে কৌণিক দূরুত্বের পরির্বতন ঘটে ।সূর্যের কক্ষপথের তল ও পৃথিবীর ইকুয়েটর অর্ন্তভূক্ত কোন এর পরিমান ২১.৫° থেকে ২৪.৫° পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।এই ৩° কৌনিক দূরুত্ব পরির্তিত হতে
সময় লাগে ৪১০০০ বছর।বর্তমানে পৃথিবী ২৩.৪° কৌনিক দূরুত্ব বরাবর ঘূর্ণ্যয়নমান, এটি ঋতু পরিবর্তনের জন্য দায়ী।কোন ২১.৫°অবস্থানে থাকার সময় ইকুয়েটর বেশি তাপ শোষন করে এবং উষ্ণমণ্ডলীয় আবহাওয়া বিরাজ করে আবার ২৪.৫° অবস্থানে ইকুয়েটর কম তাপ শোষন করে এবং ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে। এই অবস্থায় শীত ও গ্রীষ্ম কালে বাতাস বেশি বাস্প ধারন করে এবং বেশি তুষার পড়ে তখন বরফযুগ শুরু হয়।

Precession of the equinoxes:


পৃথিবীর অক্ষ তার ঘূর্ণ্যয়ন অক্ষ হতে ঘূরতে ঘূরতে ক্রমান্বয়ে সরে আসে । ঘূর্ন্যয়ন অক্ষ কখনো পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে হেলানো অবস্থায় হেলে ঘূরতে থাকে ,প্রায় ২৩০০০ হাজার বছর সময় লাগে পূর্বের অবস্থানে ফিরে যেতে।এই কারনে তাপমত্রার পরিবর্তন হয়।

সৌর-কলঙ্কঃ


সূর্যে সৌর কলংকের পরিমান বেড়ে গেলে সূর্যের তাপ বেড়ে যায় ।এ সময় সূর্য প্রচুর অতিবেগুনী রশ্মী তৈরি করে এবং পৃথিবীর বায়ুমন্ডল শোষন করে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সৌর কলঙ্কের ২২ বছরের চৌম্বক চক্র আছে ,এটি ১১ বছর পরপর বেশি বা কমে যায়।এই চৌম্বক চক্র পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যকার চৌম্বক ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটায় একারনে পৃথিবীর বৈদ্যূতিক ক্ষেত্র অস্বাভাবিক ভাবে পরিবর্তিত হয় যার ফলে ঝড়,জলচ্ছাস্ব, এই সবের পরিমান বৃদ্ধি পায়।সৌর কলংকের কারনে সূর্যের তাপমাত্রা ০.১% বেড়ে যায় একারনে পৃথিবীতে প্রায় ২০% বেশি তাপ শোষীত হয়।এটি তাপ মাত্রা বৃদ্ধির আন্যতম কারন।

সূর্য ও চন্দ্রের আর্কষনঃ

সূর্যের ও চন্দ্রের সস্মিলিত আর্কষন শক্তির প্রভাবে পৃথিবির কেন্দ্রগতি শক্তির পরিবর্তন হয় এতে পৃথিবীর ঘূর্ন্যয়ন অক্ষ পরিবর্তিত হয় এবং পৃথিবির তাপমাত্রা পরিবর্তিত হয়।

আগ্নেয়গিরিঃ


বর্তমান পৃথিবিতে ৫৫০ টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে ।প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টন গ্যাস ও এসিড পৃথিবির বায়ুমন্ডলে মিশে যাচ্ছে।কয়েকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি নাম উল্লেখ করা যেতে পারে, মাউনা লোয়া,কিলাউএয়া,মাউন্ট এটনা,ফুজিয়ামা,সেণ্ট হেলেন ,মাউন্ট পিনাতুবু। পৃথিবি ছাড়া আর মাত্র দুটি গ্রহে আগ্নেয়গিরি পাওয়া যায় ।এখনে একটি তথ্য জানিয়ে রাখি পৃথিবীর জন্য আরেকটি বড় আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হবে আমেরিকার ইয়োলো স্টোন ন্যাশনাল পার্কে, এটি উৎগিরিত হলে কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা আগ্নেয়গিরির ছায়ের নিচে পরে যাবে । আগ্নেয়গ্যাস গুলির মধ্যে রয়েছে ,কার্বনডাইক্সাইড, নাইট্রোজেন,সালফারডাইঅক্সাইড,হাইড্রজেনঅক্সাইড। এইসব গ্যাস গুলি বায়ুম্নডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে চলছে । এছাডা মহাসমুদ্রে প্রায় ৪২০০০ কিমি. মিডওসেনিক রিজ রয়েছে এখান থেকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টন কার্বন-ডাইঅক্সাইড বায়ুমন্ডলে মিশছে। এখানে যে পরিমান গ্যাস উৎপ্নন হচ্ছে তার থেকে মানব সৃষ্ট গ্যাসের পরিমান খুবই কম।

প্লেট-টেকটনিক্সঃ


উপরের ১ম চিত্রতে আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রায় ২২ কোটি ৫০লক্ষ বছর পূর্বে সব গুলো মহাদেশ একসাথে ছিল এবং বর্তমানে সবগুলে আলাদা ।মহাদেশ গুলো যখন ইকুয়েটর এর কাছাকাছি তখন তাপ বেশি শোষন করে এবং যখন মেরুর দিকে যেতে থাকে তখন তাপ কম শোষন করে এবং বরফ যুগ শুরু হয় সমুদ্রের পানি কমতে থাকে । বর্তমানে বেশিভাগ মহাদেশ ইকুয়েটরে অবস্থান করছে এই জন্য বরফ গলতে শুরু করেছে ।

এবার আসি বাংলাদেশের কথায়


১৮০০০ ও ১২০০০ বছর আগে বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থান সমুদ্রের অনেক ভিতরে ছিল যা ৭০০০ হাজার বছর ও ৩৫০০ বছর আগে কমে সমুদ্রের পানি বাংলাদেশের অনেক ভিতর চলে এসেছিল। এরপর পানি কমতে কমতে বর্তমান অবস্থানে আসে যা আবার পরিবর্তিত হওয়া শুরু করেছে। ৭০০০ ও ৩৫০০ বছর আগে কোন বায়ূ দূষণ ছিলনা তবুও জলবায়ুর পরিবর্তন ছিল, ছিল সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বাড়া কমা এর জন্য ছিলনা কোন মানব সৃষ্ট কারন যা ছিল স্বভাবতই প্রাকৃতিক । প্রাকৃতিক কারনে আগে জলবায়ুর পরিবর্তন হয়েছিল , এখন হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে।

***