মানুষ আগুন আবিষ্কার করেছিল আজ থেকে ১০ লক্ষ বছর আগে, নবপোলীয় যুগে আফ্রিকায়। অস্ত্র বানাতে গিয়ে নবপোলিয় সভ্যতার মানুষ আগুন জ্বালানোর কৌশল রপ্ত করেছিল পাথর ভাঙ্গার মধ্যদিয়ে। যে আগুনের মাধ্যমে সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল ঠিক আজ ২০১৫ সালে সেই আগুন কে অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করে সভ্যতাকে ধ্বংস করছে । ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মধ্যে গত শতাব্দীতে আগুন রাজনৌতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া শুরু করে। ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯২৮ সালে ভগত সিং ও ভন্টুকেশোর দত্তর ছোঁড়া বোমাতে কেঁপে উঠেছিল দিল্লীর সংসদ। এরপর ২৩শে মার্চ ১৯৩১ সালে ভগত সিং, রাজগুরু ও সুখদেবকে গোপনে হত্যা করলে সারা ভারতবর্ষে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পরে। এরপর ৪৭ এর 'জ্বালো! জ্বালো! আগুন জ্বালো!' স্লোগানের মধ্যদিয়ে পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয় । ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করেছিল পাকিস্তানের রাজনীতি । স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের শ্লোগান ছিল 'স্বৈরাচারের গদিতে আগুন জ্বালো এক সাথে'।
আসলে কেউ কখনোও কোন শাসকের গদিতে আগুন দিতে পারেনি, আগুন লাগিয়েছিল সাধারন মানুষের সম্পদে। সম্পদের অগ্নি সংযোগ থেকে এখন মানবদেহে অগ্নিসংযোগ শুরু হয়েছে । আমাদের মনোজগতে যে আগুন এখনও জ্বলছে সেই আগুন এখন ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। আমাদের মনোজগতে আগুনের প্রভাবে কেউ কেউ সন্তানের নাম রাখেন 'আগুন', কবিরা কবিতা লেখেন আগুন নিয়ে, মঞ্চের বক্তব্য কে বলা হয় অগ্নিঝরা বক্তৃতা, আবার সিনেমার নাম হয় আগুনের পরশমনি, মেয়েরা স্লোগান দিলে বলা হয় অগ্নিকন্যা। আগুনের প্রভাব মনোজগতে বিস্তার করেই চলছে … যতদিন আমাদের মনোজগতে আগুনের বসবাস বন্ধ না হবে ততদিন এ আগুন নিভবে না।