সময় তোমার বয়স কত?

পাহলোয়ান এরশাদ
Published : 16 Feb 2015, 12:17 PM
Updated : 16 Feb 2015, 12:17 PM


সময় কে বলা হয় মহামূল্যবান, যাকে আমরা দেখাতে পারিনা, ছুইতে পারিন, স্পর্শ করতে পারিনা, অনুভব করতে পারিনা শুধু মাত্র পরিবর্তন দেখি,কিন্তু কি এই সময়? সময় নষ্ট করি, সময় বাচাই, ব্যাবহার করি যা শুধু ভবিষ্যৎ এর দিকে ধাবিত হয়। সময় পরিমাপ করার জন্য আমরা বিভিন্ন রকম ঘড়ি ব্যাবহার করি যেমন হাত ঘড়ি বা দেওয়াল ঘড়ি , এই ঘড়ি যেটাই হোক না কেন উদ্দেশ্য একই সময় দেখানো। এই ঘড়ির উপর একটি লেখা থাকে কোয়ার্টজ বা সিজিয়াম কিন্তু কেন এটি লেখা থাকে একবার কি চিন্তা করে দেখেছেন? এটি সেই সেই পদার্থ যা মহাজাগতিক সময় কে আপনার কাছে প্রদর্শন করে। সিজিয়ামকে এক সেকেন্ড প্রদর্শনের জন্য মহাজাগতিক সময়ের পালস ৯১৯২৬৩১৭৭০ বার আঘাত করে,এই ৯১৯২৬৩১৭৭০ পালসে কারনে সিজিয়াম সেকেন্ডে ফিরতি পালস প্রদান করে সেই পালসের কারনে ঘড়ির সেকেন্ডের কাটা ১ টি ঘর অতিক্রম করে তাই এক সেকেন্ড, এই ভাবে মিনিট, ঘন্টা, দিন, মাস, বছর, শতাব্দী চলে যায়। এই পালস পৃথিবীতে সব জায়গায় একই নয়,এই পালস ঢাকা আর আমারিকার লাসভেগাসে ৯১৯২৬৩১৭৭০ এর এক বা দশক স্থানের মানের পার্থক্য হয় যে কারনে পৃথিবীতে সব জায়গায় সময় একই দেখা যায়। কিন্তু সমস্যা হয় নাসাতে, নাসার গ্লোবাল পজিসনিং স্যাটেলাইট এর ঘড়ি এর সময় এবং পৃথিবীর সময়ের এক বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ পরিবর্তিত হয় যে কারনে নাসাকে প্রতিবছর এই সময় কে ঠিক করে নিতে হয়। এই পরিবর্তন না করলে পৃথিবীতে জিপিএস সঠিক মান দিতে পারবে না যার ফলে সকল প্রকৌশল এবং বাণিজ্যিক কাজের ব্যাঘাত ঘটতো।

আইনস্টাইন সর্বপ্রথম সময়ের পার্থক্য বের করে অর্থাৎ জায়গা ভেদে সময়ের মান এক নয় । আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা অনুসারে পৃথিবী বা আমাদের এই গ্যালাক্সি হতে অন্য কোন গ্যালাক্সিতে সময় এক হবে না। ধরুন আপনি একটি ১ ঘন্টা ৪০ মিনিটের একটি মুভি দেখছেন পৃথিবীতে ঠিক এই মুভিই যদি অন্য কোন গ্যালাক্সির গ্রহতে দেখতে যান তাহলে পৃথিবির সময় অনুসারে ওই গ্রহে আপনি ১ ঘন্টা ৫০ অথবা ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় লাগবে কিন্তু ঐ গ্রহের সময় অনুসারে আপনি মুভিটি ১ঘন্টা ৪০ মিনিট ই দেখবেন।

সময় কোথাও শৈশব, কোথাও কৈশর, কোথাও যৌবন …কাল অতিক্রম করছে। এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের সাথে সাথে সময়ের বয়স বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের জৈবিক দেহের সাথে এই সময়ের একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। অর্থাৎ আপনার দেহ আপনার অজান্তে সময়ের সাথে যোগাযোগ করছে। যদি আপনি কোন খনির ভিতর বা কোন গুহার ভিতর এই পৃথীবির আলো বাতাস এবং কোন প্রকার সময় পরিমাপের যন্ত্র ছাড়া থাকতে দেওয়া হয় তাহলে আপনার দেহ নিজেই বুঝতে পারবে পৃথীবিতে কখন সুর্‍্য উঠেছে, কখন দুপুর হয়েছে আর কখন আপনাকে ঘুমাতে হবে । এর কারন আপনার দেহ সেই পালস গ্রহন করছে যেটি আপানর ঘড়ি গ্রহন করে থাকে। আপনার হৃদপিণ্ড সেই কোয়ার্টজ এর কাজ করে থাকে যেটি এক সেকেন্ড পর পর বিট দেয় । আমাদের হৃদপিণ্ড প্রতি মিনিটে প্রায় ৬০ থেকে ৮০ টি বিট দেয় ,এটি সেই সময়ের প্রতিফলন যা সিজিয়াম বা কোয়ার্টজ গ্রহন করে। আমাদের হৃদপিণ্ড দুর্বল হলে সেটাকে সচল রাখতে পেসমেকার লাগাতে হয় যা সেই একই কাজ করে ,পেস মেকার নিজেথেকেই একটি পালস দেয় হৃদপিণ্ড কে যা থেকেই সচল থাকে এই মুল্যবান হৃদপিণ্ড । যেদিন সময়ের সাথে এই হৃদপিণ্ডের সম্পর্ক ছিন্ন সেদিনই তার ক্রিয়া বন্ধ করে দেয় , আর সবাইকে পরলোকে যেতে হয়। এভাবেই সময় আপনার দেহ কে নিয়ন্ত্রণ করে , ঠিক এই কারনেই আপনি অন্য গ্যালাক্সিতে গেলে আপানর বয়স কম বেশি হবে ।

এই মহাবিশ্বের অবস্থান ভেদে সময়ের মান ভিন্ন হয়ে থাকে । মহাবিশ্বের কোথাও সময় এক বছর গেলে আমাদের এই পৃথিবীতে একদিন অতিবাহিত হয় ,আবার কোথাও ১ সেকেন্ড অতিবাহিত হলে পৃথিবীতে কয়েকশ বছরের সমান । সময় এক দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আমাদের কাছে আসে, এই মহাবিশ্বের জন্ম যেদিন ঠিক সেইদিন জন্ম নিয়েছে এই সময় যার বর্তমান বয়স ১৩.৮ বিলিয়ন বছর। সুতরাং পৃথিবির সময় অনুযায়ী সময়ের বয়স তেরশ আশি কোটি বছর।