যমুনার বালি রপ্তানি বন্ধ করুন

পাহলোয়ান এরশাদ
Published : 10 March 2017, 07:30 PM
Updated : 10 March 2017, 07:30 PM

যমুনার বালি রাপ্তানি নিয়ে কিছু সরকারি আমলা আর মন্ত্রীদের খুশিতে গদ গদ হওয়া দেখে রাশিয়ার কথা মনে পড়ে গেল। রাশিয়া ৩০ শে মার্চ ১৮৬৭ সালে ৭.২ মিলিয়ন ডলারে আমারিকার কাছে আলাস্কা বিক্রি করেছিল তারপর আমেরিকা আলস্কা থেকে যা পেয়েছে তার মূল্য কি ৭.২ মিলিয়ন ডলার? নাকি এর মূল্য লক্ষ গুণ বেশি? রাশিয়া যে ধরা খেয়েছিল ঠিক সেই একই ধরনের ভুলের পথে পা বাড়াতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। যমুনার বালির রক্ষিত সম্পদের বাণিজ্যিক মূল্য টন প্রতি ২ থেকে ২.৫ লক্ষ টাকা। শুধু মিনারেলের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠতে পারে শত শত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা নির্ধারনের সময় ভারত বাংলাদেশের যমুনার বালির উপর অধিকার দাবী করেছিল। ভারত কেন এই দাবি করেছিল তা একটু বিবেচনা করা দরকার। তবে তাদের দাবি টেকেনি বাংলাদেশের একটি গবেষণা পত্রের ব্যাখায়। ওই গবেষণা পত্রে বাংলাদেশ এটা দেখাতে সক্ষম হয়েছে যে ভারত থেকে আসা বালি বাংলাদেশে জমা হয় এবং তার বেশিভাগ বালি আবার নদীর পানিতে মিশে যায়। সুতরাং আমাদের সমুদ্র সীমায় জমাকৃত বালির অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে উৎপন্ন হয় তাই ওই যুক্তিতে তারা হেরে যায়।

জিএসবি এর এক গবেষণায় দেখা যায় যমুনার বালিতে প্রাপ্ত ভারি খনিজের মধ্যে রয়েচ্ছে ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, মোনাজাইট তাছাড়া জিরকোনিয়াম আছে ০.০৪-.১২% স্টরন্সিয়াম আছে ০.০৪-০.০৮% রুবিডিয়াম আছে ০.০২-০.৩%, ক্রোমিয়াম আছে ০.২%, ইট্রিয়াম আছে ০.০১%, নায়বিয়াম আছে ০.০১% এবং রুথেনিয়াম আছে বেশ ভালো পরিমানে। এই বালিতে প্রাপ্ত ভারি খনিজ পদার্থের ৮.৫-১৪% আছে মোনাজাইট, গারনেট, রুটাইল, ইলমেনাইট, কায়ানাইট, রূটাইল। আবার এই ইলমেনাইট এর ৩৪% ই টাইটেনিয়াম যা রঙ তৈরি এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যাবহৃত হয় অন্যদিকে ইউরেনিয়াম, মোনাজাইট সামরিক যন্ত্রপাতি ও যুদ্ধাস্ত্র তৈরিতে ব্যাবহৃত হয়। এগুলোর বাজার মুল্য ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এ তো গেল এর অর্থনৈতিক হিসাব। এবার আসি পরিবেশগত হিসাবে। যমুনা নাদীর বালি ড্রেজিং করে সরালেই কি এই নদী ভাঙ্গন বা নদীর চ্যানেলগুলোর নাব্যতা ঠিক রাখা সম্ভব হবে? মোটেও না কারন বর্ষাকালে এই নদীর পানি পরিবহনের হার ৬২০০০ ঘনমিটার/সেকেন্ড থেকে ৬৭০০০ ঘনমিটার/সেকেন্ড, যা প্রতিবছর ১.১ বিলিয়ন টন বালি বহন করে। এই ১.১ বিলিয়ন টন বালি এক বছরে সরালেও পরের বছর সেই পরিমান বালি আসবেই সুতরাং ড্রেজিং করে বালি রপ্তানির চিন্তা করাটা নেহায়েত বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। এই বালি সিঙ্গাপুরে না পাঠিয়ে সেটি দিয়ে সমুদ্রের বুকে দ্বীপ বানিয়ে তাতে হোটেল ব্যবসা করলে মন্দ হয় না। আর এতে সিঙ্গাপুরকে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে। যারা এই বালি বিক্রির অশুভ চক্রান্ত করছে তাদের প্রতিহত করার সময় এখনি।