ইউরোপের অন্যতম বড় আর পুরাতন ক্রিসমাস মার্কেটে ঢুকতে ঢুকতে আমার মনেও উৎসব উৎসব একটি অামেজ চলে এলো। কোথায়? জার্মানীর ফ্রাঙ্কফুটে! উইন্টারে এখানে বিকাল ৫ টার ভেতরেই সন্ধ্যা নামে। সন্ধ্যার পরেই যেন পুরো জায়গা জুড়ে জমজমাট ভাব জমকালো পরিবেশে আরও বেশি করে জমে ওঠে! দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে, এরা সারা বছর এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করে থাকে।
প্রচন্ড ঠান্ডার ভেতর গ্লওয়াইনের (glühwein) গ্লাস হাতে সবার অাড্ডা যেন মনে করিয়ে দেয় তাদের সারা বছরের কর্মব্যস্ততাকে; ক্লান্তি কিংবা বছর শেষে যেন নতুন আরেকটি বছরকে কর্মব্যস্ততায় ভরিয়ে তোলার প্রস্তুতি! বেশিরভাগই যেন অফিস ফেরতদের অাড্ডা, অফিস থেকে বের হয়ে হয়তো বন্ধুদের সাথে একটু ঢু মেরে আড্ডা দেয়া, পুরাতন স্মৃতিকে মনে করা অথবা ছোট্ট সন্তানদের সাথে মা-বাবাদেরও ছোট্ট হয়ে ওঠার এক উৎসবমুখর জায়গা।
এখানে ছোটদের জন্য রাইডের সাথে সাথে আবার বড়দের জন্যও রাইড আছে সন্তানদের নিয়ে একসাথে অানন্দ করার জন্য। এই বুডো বয়সেও আমার তো অানন্দের কমতি নেই যখন ছেলের সাথে রাইডে উঠছি, ঘুরছি। এত ভীড়ের মাঝে ছেলে সঙ্গে নিয়ে মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে চলাও কঠিনেই বটে! নিজেদের প্রতি বছরের স্বকীয়তায় যেন অন্য সব ক্রিসমাস মার্কেটের কাছে একটি আইকনিক মডেল হয়ে উঠেছে ফ্রাঙ্কফুটের এই মার্কেটটি।
মার্কেটের কেন্দ্রে যীশুর জন্ম মুহুর্তের একটি প্রতিকৃতি যেন উৎসবের ঐতিহাসিক মূল্যকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। শিশু, বৃদ্ধ সবাই ভীড় করে যেন উদযাপন করছে শিশু যীশুর আসার মুহুর্তটি। যখন আপনি ঢুকবেন, তখন আপনাকে বেকড আপেল, রোস্টিং চেস্টনাট, নতুন বানানো তাজা জিনজার কুকি এবং গ্লওয়াইনের সুস্বাদু সুগন্ধ যেন আপনাকে স্বাগত জানাবে।
গ্লওয়াইনের বিশেষত্বই হলো এটি গরম ও মশলাযুক্ত ভাবে পরিবেশন করা হয়ে থাকে। Zwetschgenmännle (শুকনো পাম দিয়ে তৈরী সজ্জার জিনিস), Nussknacker (বাদামের তৈরী নানা ধরনের ক্রাকার), Gebrannte Mandeln (মিষ্টি ভাজা আলমন্ড), ট্রাডিশনাল ক্রিসমাস কুকিজ যেমন Lebkuchen এবং Magenbrot ষ্টলগুলো ভরে রয়েছে।
যীশুর জন্মদিনের আনন্দ যেন মাস জুড়ে সবার মাঝে ছড়িয়ে যায় এই ক্রিসমাস মার্কেটের মধ্য দিয়ে। এই অানন্দ অমলিন থাকুক নতুন বছরেও সবার মাঝে।