আমার স্বপ্নের ২০১১: আমার সুখ আর স্বপ্ন পূরন!

উদাসী স্বপ্ন
Published : 31 Dec 2011, 07:14 PM
Updated : 31 Dec 2011, 07:14 PM

সবাই এম১৬ তাক করে আছে উত্তাল সমুদ্রের দিকে। শুধু অর্ডারের অপেক্ষা। সামনে কমান্ডার বলছেন, "আর এক পা এগোবেন না, প্লিজ আমরা গুলি করতে বাধ্য হবো!"
এমন সময় একজন সৈনিক তার তাক করা বন্দুকটা ফেলে সামনে এগিয়ে যায়, জনসমুদ্রের সামনে এসে দাড়া্য়। সামনের সারিতে বুক চেতিয়ে দাড়িয়ে থাকা একজন সামনে এসে বলে,"থ্যাংকস ব্রো!"
তাকে দেখে আরো কয়েকজন সৈনিক এগিয়ে ওর পাশে দাড়ালো। কমান্ডার বলে উঠলো,"হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ ডুইং, সোলজার!"

প্রথম সৈনিকটি মুখ ফুটে বলে উঠলো," স্যার, এই মিছিলের সামনে যেই বোরখা পড়া বৃদ্ধা মহিলা দাড়িয়ে আছেন তিনি আমার মা। আমি নিজের হাতে আমার মাকে গুলি করতে পারবো না! সো শ্যুট মি ফাস্ট!"
পাশের সৈনিকটি হাত উচিয়ে বললো,"আমার গার্ল ফ্রেন্ড এস এম এস করছে, সে বলছে যদি একটি গুলি ছুড়ি তাহলে সে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে! স্যার আপনে কি সিরিয়াস?"

সেদিন একটি গুলি ছুড়া হয়নি, জনসাধারন সবাই মিশে যায় সেনাবাহিনীর সাথে, উত্তাল হয় তাহরির স্কয়ার, দুর্নীতির পতন হয়। তিউনিসিয়ার এক সব্জী ব্যবসায়ীর উপর বন্ঞ্চনার শোধ এভাবেই পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে যায়, মিশর আরেকবার স্বাধীন! পুরো বিশ্বকে জানিয়ে দেয় কিভাবে দুর্নীতিকে ছুড়ে ফেলতে হয়! মা তার সৈনিক ছেলেকে আনন্দে চুমু দেয়।

যে যুদ্ধের জন্য বাবা তার সন্তানের কফিনের ভার সইতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়, যে শিশুটি জন্মের পর তার বাবা বিকৃত লাশটাও দেখতে পারলো না, সে যুদ্ধের অবসান ঘটলো, আর ঘরের ছেলে মায়ের বুকে ফিরে এলো।

এই সবগুলোই হলো এ বছরে!

এই বছরটি আমার জীবনের জন্য সেরা বছর। না, আমার ভালো কোনো চাকরী হয়নি, আমি আমার কোর্স এখনও শেষ করতে পারিনি, ভালো টাকাও কামাতে পারেনি। এমন নয় যে আমার দেশ খুব এগিয়ে গেছে, দেশের খবর শুনে আমি মোটেও খুশি নই!
দেশ থেকে ভালো ব্যাপার উঠে যাচ্ছে। আগে শুনতাম গোপনে নাকি দেশ বিক্রি হচ্ছে, এখন দেখি জনসম্মুখে দেশ বিক্রি হয়ে গেছে। সেজন্য ব্লগে একের পর এক পোস্ট স্টিকি হয়, কিন্তু কেউ রাজপথে নামে না। অন্য দেশের বিদ্যূৎ উৎপাদনের জন্য নদীগুলোকে মেরে ফেললো গলা টিপি দিয়ে, দেশবাসী বাদ সে এলাকার লোকজন কোনো প্রতিবাদ করলো না। আমরা তিউনিসিয়ার মানুষদের মতো সৎ নই, আমরা সুস্হ ভাবে বাচতে চাই না। আমরা হানাহানী চাই, শয়তানের শাসন চাই!

তবু আমি খুশি। কারন আমার সামনে এমন কনাকে খুজে বেড়াচ্ছে সবাই যে কনার নাম আমাদের এক বাঙ্গালী লেকচারারের নামের সাথে যুক্ত। কে ছিল সেই লেকচারার? তকে এতটাই ইগনোর করা হয়েছিলো তখন যে তার জার্নাল কেউ ছাপায়নি। আইনস্টাইন ঈষৎ পরিবর্তন করে নিজের নামের সাথে যোগ করে দেয় তার নাম!

আমি তবু খুশী, কারন এখনও দেখি কব্জীবিহীন একটি মেয়ে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পায়, মুদীর দোকানের চা ফেরী করে বেচা দিনাজপুরের এক গরীব ছেলে এসএসসি ও এইচএস সি দুটোতেই এ প্লাস পায়। শুভর মতো নির্ভীতচারী কিডনীরোগীদের জন্য কৃত্রিম কিডনি বানিয়ে মানবজাতীর জন্য কাজ করে যায়। এখনও দেখি শত দারিদ্র্য এই গরীব মানুষগুলোর বেচে থাকার ইচ্ছেটাকে হত্যা করতে পারে না!

আমি বিপ্লব করতে চাই কিন্তু আমি নিজে ছিলাম ছন্নছাড়া। কিছু কিছু ঘটনা আমাকে বদলে দেয়, একসময় প্যাথেড্রিনের খোজে রাস্তায় বেরোতাম, হাতে ভরে কোথাও শুয়ে থাকতাম একটু শান্তির ঘুম দিবো বলে। ঘুম হতো কিন্তু শান্তি ছিলো না। তাই বাবা মায়ের শান্তি তছনছ করে আমি দেশ ছেড়ে পালা্ই, পালিয়ে বুঝতে পারি আমি কিভাবে ধ্বংস করছি। সাগরে কোনো কিছু তলিয়ে গেলে সেটাকে আর খুজে পায় না কেউ যদি না সেখানে কোনো মূল্যবান কিছু থাকে। আমি কখনোই তেমন মূল্যবান ছিলাম না, নিজেকে আস্তাকুড়ে ফেলে দেয়ার চূড়ান্ত ব্যাবস্হাই করছিলাম বৈকি!

একদিন কেউ আমাকে জানায় কেউ আমাকে নিয়ে ডায়েরীর পাতাগুলো ভরে ফেলেছে। একটা পৃষ্ঠা পড়ে ভয় পাই, আবারও সেই সম্পর্কের অবগাহন, যা আমাকে একবার ডুবিয়েছিলো, যার আঘাত বয়ে চলেছি বছরের পর বছর। কথা হয়, স্বপ্ন দেখায়। আমি স্বপ্ন দেখতে ভয় পেতাম, সহিংস বিপ্লবের স্বপ্নটাই যেনো আমার একান্ত ইচ্ছা!

সুনামীরে তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাবো পুরো জনপদ, যা বেচে রইবে তাই পরিশুদ্ধ, আর যা হারাবে তা ছিলো কলংক। অথবা একটা বড় ব্লাস্ট, নিউক ব্লাস্ট। একটা ধ্বংসপ্রায় জনপদ খোড়াতে খোড়াতে আবারও জেগে উঠবে, তখনি সে তার সব খারাপগুলোকে বিদায় জানাতে পারবে! বিশ্বাস নামের জিনিসটা ছিলো শূন্যের কোঠায়! অলৌকিকতায় আমি বিশ্বাস করি না, তাই যদি ঈশ্বর বলে কিছু থাকে তাহলে আমার এই পোড় খাওয়া জীবনটা একদিন শুধরাবে, আর যদি সে না থাকে তাহলে কোনো অলৌকিকতা অপেক্ষা করছে না আমার জন্য!

অলৌকিকতা আসে, সে একজন আমাকে বাচতে শেখায়, মনের মধ্যে থেকে আত্মবিধ্বংসী জিনিসগুলো উপড়ে ফেলায়, বাচতে শেখায়। তখনও যখন মনে হয়েছিলো প্যাথেড্রিন কয়েক পুল নিলে কেমন হয়, সে এসে হাত বুলিয়ে রাতের আধারে, বলে ,"এই তো আমি, আমি আছি!"

ফাট্টু আমার লাইফ বদলে দেয়, সেই আমার মিরাকল, ২০১১ সালটার শেষ দিনে একটা জিনিস জানতে পারলাম, আমার স্বপ্ন পূরন হয়েছে, ঈশ্বর সত্যি আছেন, আমার জন্য সত্যি একটা অলৌকিক কিছু অপেক্ষা করে আছে!

আমি তাই দেশ নিয়েও হতাশ নই, বিপ্লব একদিন হবে। সারা বিশ্বে যেই আরব বসন্তের ঝড় বইছে, আমি জানি আমাদের দেশেও একদিন হবে, আমরা আমাদের সোনালী বাংলাদেশ দেখবোই। আমরা আবারো নতুন আলোয় বাচতে শিখবোই। যত বড় সুনামী আসুক, যত বড় ঝড় আসুক, আমি আমার স্বপ্ন পূরন করবোই!

শুভ নববর্ষ!

আর সামনের বছরের যেকোনো সময় আমরা বিয়ে করবো যদি ফাট্টু রাজী থাকে। কেউ কি আছেন তাকে বোঝাতে আমি ছেলে দেখতে বদসুরত আর পচা হলেও ওকে সুখি করতে পারবো?

দোয়া করবেন সবাই!