নাগরিক আন্দোলন চলতে দিন

ফায়েজ ভূইয়া
Published : 2 Sept 2011, 08:35 AM
Updated : 2 Sept 2011, 08:35 AM

সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী মারা যাওয়ার পর চিত্র নায়ক ইলিয়াছ কাঞ্চন 'নিরাপদ সড়ক চাই' সংগঠনের ব্যানারে অনেক বছর ধরে আন্দোলন করে আসছেন। এতে একেবারেই কাজ হয়নি বলা যাবেনা। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে জনসচেতনতা তৈরী হয়েছে। যদিও যারা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নিতে পারেন তারা কখনো কার্যকর ব্যবস্থা নেননি, নিচ্ছেন না।

সর্বশেষ তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর মারা যাওয়ার ঘটনা সবাইকে নাড়া দিয়েছে। ফলে সচেতন মানুষ এবার বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নিয়েছেন। সৈয়দ আবুল মকসুদের নেতৃত্বে সর্বস্তরের মানুষের একটি আন্দোলনের সুচনা হয়েছে। ঈদের দিন শহীদ মিনারে ঈদ করার মতো একটি প্রতিবাদী আয়োজন হয়ে গেছে। যাতে অংশ নিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। নাগরিক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারিরা অনশনসহ আরো কর্মসূচী ঘোষনা করেছেন।

ঈদে তড়িগড়ি করে রাস্তায় ইট-সুরকি ফেলে চলাচল উপযোগী করা, যোগাযোগ মন্ত্রীর নানা তৎপরতা ও মন্তব্য, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরকারি দল ও তাদের সমর্থকদের বিরোধীতা এবং আন্দোলনের প্রতি অন্যদের অকুণ্ঠ সমর্থনই প্রমাণ করে এই সামাজিক আন্দোলন ফলপ্রসু হচ্ছে। এতে সরকার বা কতৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

এক সময় পরীক্ষায় নকল একটি কমন বিষয় ছিল। এখন সেই নকল নেই বললেই চলে। পরীক্ষায় নকলের সংস্কৃতি রাতারাতি বন্ধ হয়নি। এর বিরুদ্ধেও 'নকল প্রতিরোধ আন্দোলন'সহ বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন হয়েছিল। পরে এক তরুন প্রতিমন্ত্রীর উদ্যমী আয়োজন আমরা দেখেছি। যার নাম এহসানুল হক মিলন। তার রাজনৈতিক আর্দশ ও দল নিয়ে আপনার-আমার মতভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু নকল প্রতিরোধে তার উদ্যমী আয়োজনকে কেউ স্বীকার না করলে তার মতো অকৃতজ্ঞতা আর কিছু হবে বলে আমি মনে করিনা।

টিআইবির সমালোচনা ক্ষমতসীন ও বিরোধী দলের মুখে বিভিন্ন সময় আমরা শুনেছি। কিন্তু এই টিআইবি কিন্তু অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিকে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। দুর্নীতির মাত্রা পরিমাপ করার সুযোগ আমাদের সামনে এনে দিচ্ছে তারা। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ও নাগরিক আন্দোলন কাজ দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগও নাগরিক আন্দোলনের চাপের ফসল বলা যায় ( যদিও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছেনা, হচ্ছে মানবতা বিরোধী অপরাধের এবং তাও গুটি কতেক রাজনীতিবিদের)। পরিবেশ আন্দোলন বাপা, বেলাসহ অন্যরা বুড়িগঙ্গা রক্ষা কিংবা গাছ কাটা প্রতিরোধে যেভাবে ভূমিকা রাখছে এতে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারি পদক্ষেপও কমবেশী আমরা দেখছি। এভাবে বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথা, এসিড নিক্ষেপ, ইভ টিজিং, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধেও নাগরিক আন্দোলন চলছে। এসব আন্দোলনের কারনে এসব সমস্যা আগের তুলনায় কমেছে ।

যারা ক্ষমতায় থাকেন তারা সামাজিক আন্দোলনকে তাদের বিপক্ষে ভাবেন। যেহেতু ক্ষমতাসীনদের দায় দায়িত্ব বেশী সেজন্য আন্দোলনের লক্ষ্যবস্তু তারা হওয়াই স্বাভাবিক। আর বিরোধী দল এতে উৎফুল্ল বোধ করেন এই কারনে যে তারা যেটা পারছেন না সেটা নাগরিকরা করে দিচ্ছে। এতে সরকার বেকায়দায় পড়বে মনে করেন তারা

কিন্তু এতে লাভবান হচ্ছে দেশ, জাতি, আমরা। যখন যে সরকারই থাকুক। নাগরিক কিংবা সামাজিক আন্দোলনকে চলতে দিন। এতে বাধা দেয়া ঠিক হবেনা। নিরুৎসাহিত করবেন না সংকীর্ণ দলীয় চিন্তা থেকে। এরা প্রেসার গ্রুপ। এই প্রেসার গ্রুপ না থাকলে ক্ষমতাসীন কিংবা বিরোধী দলের টনক নড়বে না। তারা যা ইচ্ছা তাই করার লাইসেন্স পেয়ে যাবে।

তবে দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে যে, ঈদের দিন শহীদ মিনারে অবস্থান করে রাতে ফেরার পথে গুলশানে হামলা শিকার হয়েছেন এটিএন বালার বার্তা প্রধান জ ই মামুন। যারা এই হামলা করেছে তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই।

সর্বশেষ: বিডি নিউজ, বাংলানিউজ২৪ডট কম, প্রথম আলো অন লাইন সংস্করণ থেকে শহীদ মিনারের প্রতিবাদী কমসূচীর সচিত্র খবরটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে মনে হচ্ছে। জ ই মামুনের উপর হামলার খবরটিও দেখছিনা। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও একই অবস্থা।