ঝরে পড়া ফুল। প্রতিভা এমন সম্ভার যা সবার সৃষ্টি হয় না। ইহা প্রকৃতি প্রদত্ত। যদি সেই প্রতিভাকে সঠিক সময়ে এবং সুযোগ মতো কাজে লাগানো যায় তাহলে তা দেশ ও জাতির জন্য কষ্টিপাথর সমতুল্য। অার সে প্রতিভাবান ব্যক্তির জন্য বাঁচার প্রেরণা, জীবনের উৎস। অামরা জানি ছোট্ট ছোট্ট বালুকনা থেকেই পৃৃথিবীর যাবতীয় সৃষ্টি। কিন্ত সঞ্চিত বালুকনা যদি উড়ে যায় দমকা বাতাসে তাহলে?
কিশোর বয়স থেকেই লেখালেখি একটা নেশায় পরিনত হয়েছে। কী সব চিন্তাশক্তি থেকে লেখা হয়ে যায় অনেক সময় নিজেকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারিনা। সেই ২০০৩ সালে প্রথম একটি কবিতার মাধ্যমে হাঁটতে শিখেছি। কবিতাটি প্রকাশ হয় অাদর্শ নারী নামক এক মাসিক পত্রিকায়। নাম ছিলো যৌতুক ব্যাধি। অনেক বড় মাপের লেখকদের প্রসংশা কুড়িয়ে ছিলাম। যদিও অামার বয়স অনুপাতে লেখাটা ছিলো অকালপক্বতা। ১৩-১৪ বছর বয়সী অাবার গভীর দার্শনিক কবি! অরিজিনালি কেউ জানতো না অামার বয়সের ভার কতো। হাই স্কুলের স্যারদের মাঝে পরিচিতি হই একটি কবিতার মাধ্যমে যখন ফিলিস্তিন ধংস প্রায়। কবিতাটির দুটি চরণ অাজো যাবর কাটে হৃদয় মন্জিলে – উড়ছে বিমান চলছে হানা, ফেলছে সাবমেরিন বিশ্ববাসী বাঁচাও ওরে ধংসী ফিলিস্তিন!
অামার বাংলা স্যার শ্রী ললিত বম্মন কবিতাটি পাঠ করে প্রায় মিনিটদেরেক অামার মুখ পানে তাকিয়ে বল্লেন, সারমিন, তুমি, অারে অারে সবাই শোন অামাদের সারমিন পৃৃথিবীর দ্বিতীয় মাদার তেরেসা হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। বান্ধবী সুমি, রূবাইয়্যাদের বাক্যগুলি হজম করতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। কেন না এমনিতেই স্যারদের নয়নমণি ছিলাম, তারপরে অাবার বাড়তি পাওনা!
এভাবে লিখতে লিখতে উৎসাহের দারুণ তাড়নায় যখন অামি বিভোর তখন দেখা যায় স্বাভাবিক লেখাপড়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি হলো। অামি থমকে যাই। হিমশিম খেয়ে অাবারও পথচলা। এভাবে চলতে চলতে ২০০৫ সালে ১০০টি কবিতা বিশিষ্ট প্রেমাঞ্জলি নামক একটি পাণ্ডুলিপি জমা দেই মৌচাক প্রকাশনীতে। তৎকালীন প্রকাশক শহিদুল ইসলাম রনির তত্ত্বাবধানে প্রাথমিকভাবে বইটির বাজেট করেন ১৬ হাজার টাকা। টাকা ও লেখক দুটোই রেডি। কিন্ত অামার সাথে ঢাকায় এসে বাজেটের চুক্তিপত্রে সিগনেচার দেওয়ার মতো এমন সাহিত্যপ্রেমী কোন স্বজন জুটলো না! একটি মাত্র ভাই বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর কর্মকর্তা। তার পক্ষে সময় দেওয়া অনেক কঠিন। অামার অাশা নিস্তব্ধ! ফুল অার ফোটেনি। ঝরে পরে গেছে তার অাগেই। এলোমেলো হয়ে গেছে সাজানো পৃৃথিবী!
২০১০ সালে একটু একটু করে অাবারও পথ চলা। ঠাকুরগাঁও বেতারে ২৫টি দেশাত্মবোধক গান জমা দিলাম। দীর্ঘ তিন মাস প্রতীক্ষার পর জানতে পারলাম অামি জেলা পর্যায়ে গীতিকার নির্বাচিত হয়েছি। জাতীয় পর্যায়ে চুড়ান্ত হওয়ার জন্য ঢাকা বেতার কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। শুরু হলো অাবারও অপেক্ষা। ৪-৫ মাস পর জানতে পারলাম অামার বিশেষ পরিচিত এক নাট্যকর্মীর মাধ্যমে, ভাগ্নি অাজকাল প্রতিভাবানদের কদর কে করে? দলীয় কোন বিশেষ নেতা কর্মী থাকলে যদি ফোন করে দেয় তাহলে হয়তো কাজটা হয়ে যেতো। অামি নির্বাক, নিস্তব্ধ, হতাশার ধুলোতে ঢেকে গেছে অামার পৃৃথিবী। কিন্ত অামার কলম সাহসী, সে অতন্দ্র প্রহরী।