সে কালের শীত

ফাহিম সারমিন
Published : 3 Dec 2017, 05:23 AM
Updated : 3 Dec 2017, 05:23 AM

শীত মানেই গরম পোশাক অার গরম খাদ্যের ছড়াছড়ি। অার ড্রাই স্কিনের জন্য মশ্চারাইজারের অার লোশনের বাড়তি অায়োজন। যদি কোন পরীক্ষায় উন্টার মর্নিং রচনা প্রতিযোগিতার অায়োজন করা হয় তবে অামার দৃঢ় বিষ্শাস অামরা উত্তরবঙ্গের প্রতিযোগীরা প্রথম স্থান অধিকার করবো! কেননা উত্তরবঙ্গের প্রতিটি মানুষ জীবনের প্রতিটি নি:শ্বাস দিয়ে অনুভব করি শীত কাকে বলে, উহা কতো প্রকার, ও কী কী?

সুতরাং বেশি মার্ক পাওয়ার জন্মগত অভ্যাস অামাদের শৌর্যে বীর্যে। শীত যেমন বাড়তি ঝাামেলা ঠিক অাবার বাড়তি অানন্দের অায়োজন! এখনো হৃদয়ের জানলায় উঁকি দেয় শীতের হাড় কাঁপানো স্মৃতি! খুব ভোরে মাদ্রাসায় যেতে হতো। বড় অাপু, অার মায়ের হাউ,মাউ অার ঘ্যান ঘ্যানানিতে মনে হতো মরার শীতের রাত এতো ছোট কেন? যদিও গরম লেপ, কম্বল ছাড়তে মায়া লাগতো তবুও রাতে বাবার বাজার থেকে কিনে নানা রকম বাহারি মজার ভাগ তো অার ছাড়া যায় না! সুতরাং কষ্ট হলেও ওঠতে হতো।

কুয়াশা ভরা ভোরে সূর্যের সামান্য ঝলকানিতে দেখতাম হেলালের দাদী গরম ভাঁপার ঢাকি নিয়ে, থরে থরে চলছে। দু-তিন টাকার বিনিময়ে গরম ভাঁপা পেতাম! ব্যাস হেঁটে চলার পথ অার একটু সহজ হতো। মাদ্রাসা সকাল অাট ঘটিকায় ছুটি হতো। মাঝে মধ্যে দেখতাম খেঁজুরের রসওয়ালার বিরামহীন পথ চলা কলসি কাঁখে! ডেকে নিয়ে অাসতাম বাবার কাছে, জানি না শৈশবের সব কিছুতেই কেন জানি স্বাদের অমৃত ভাণ্ডার ছিলো!

বাড়িতে ফিরে দেখতাম মা রাতের বেলা মাসকালাইয়ের ডাল ধনে পাতা ও কাঁচা মরিচ সহযোগে রান্না করে রেখেছে। সাথে অাইর কিংবা রিডা মাছের জেলির মতো জমাট বাঁধা তরকারি! খেয়ে স্কুলে দৌড়। শীতের সন্ধ্যায় সব কাজিনরা মিলে বড়ো করে নাড়ার অাগুন ধরতাম। অার কার কতো কেচ্ছা কাহিনী জানা তার ভাণ্ডার খুলে বসতাম! কি যে,অানন্দ ছিলো সে কালের দিনে শীতের অাগমনে নবান্ননের ধানে চলতো পিঠা, চিড়ার ধুম। বিশেষ করে মা, জেঠি মা রাতে কলার পিঠা বানিয়ে রাখতো। ভোরে তা জমে থাকতো যা খেতে বেশ লাগতো!

কোনো দিন অাবার পানি পিঠা বানিয়ে রাখতো। তা অাগুনে পুড়ে মাস কালাইয়ের ডাল সহযোগে বেশ খাওয়া হতো! অামাদের এলাকায় পৌষের শেষের দিন পিঠা বানানোর ঐতিহ্য। বৈশাখী পিসি অামাদের বাড়িতে অনেক অাগে থেকেই কাজ করতো। প্রতি বছর পিঠা বানিয়ে পাঠিয়ে দিতো। এক বছর উনার বিশেষ অাবদার অামি যেন বাবার সাথে উনার বাড়িতে নেমতন্ন রাখি। যাক অনেক পিড়াপিঁড়িতে যেতে বাধ্য হলাম।

অামার ছোট কাল থেকেই রুচি নিয়ে অাবার টানা হেঁচড়া! কিছুদিন অাগে একটা সিনকারা সিরাপ খেয়ে একটু সতেজ হয়েছিলাম। পিসির কথা মতো নিজ হাতে পিঠা তৈরি করে একটা খেলাম। অামি অন্য কিছু খেতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু পিসি কান্না করতে লাগলো, তুইঁ মোক ঘৃনা করিস? যদি তা না হয় তাহলে এক গ্লাস দুধ খা।  কিছু একটু খেলাম সেই থেকে দীর্ঘ দিন পেটের পীড়ায় অামাকে ভুগতে হয়েছিলো।

সব চাইতে শীতের কষ্ট পেয়েছিলাম ২০১০-২০১৩ সাল পর্যন্ত। হিমালয়ের সন্নিকটে তথা পঞ্চগড়ে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে যেতাম। দু জোড়া মোজা পড়তাম। কিন্ত পায়ে চিমটি কাটলেও কোনো সেন্স কাজ করতো না! উত্তরবঙ্গের শীতের তীব্রতা অামার সেনসেটিভ নার্ভকে ডিএক্টিভ করে দিয়েছিলো ।তবুও সেদিনগুলো ছিলো অনেক অানন্দের অনেক স্মৃতিপট।