প্রচলিত ভুল {এক}

ফজলে রাব্বী
Published : 12 May 2012, 10:23 AM
Updated : 12 May 2012, 10:23 AM

{ আমরা মুসলমান। একজন মানব হিসেবে এটাই তো আমাদের সবচেয়ে বড়ো পরিচয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এইযে-আমরা মুসলমান হয়েও আমাদের ধর্মীয় শিক্ষার এতটাই অভাব:আমরা আমাদের মূর্খতা, আবেগ ও সংস্কৃতি পালনের নামে এমন কিছু করে বসি,যা শরীয়তের কোনো অংশ নয়। এতদ্বসত্তেও আমরা তা নির্বিগ্ন চিত্তে পালন করি। এবং মূর্খতার দ্বরুন সেটাকেই আমরা শরীয়তের কোনো অংশ বলে মনে করি,বা সেটাকে ভাল কাজ মনে করি। এমন কিছু কুসংস্কার,প্রচলিত ভুল,বা মানুষের মনগড়া মতবাদ নিয়ে আমার এই পোষ্ট লেখা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুক।আমীন! }

প্রচলিত ভুল
দিনের প্রথম উপার্জনকে ভক্তি বা শ্রদ্ধা জানানো
সকালবেলা অনেক সময় দেখা যায় যে-রিকশা,সিএনজি,বাস-ট্রাক চালকরা বা দোকানদাররা দিনের প্রথম উপার্জনক হাতে পাওয়ার পর তাতে ভক্তি ভরে চুমো খায়। গাড়ির স্টিয়ারিং,হাতল বা অন্য কোনো অংশে ছোঁয়ানোর পরে বুকে ও চোখে লাগায়।অনেককে তো কপালে ঠেকাতে পর্যন্তও দেখা যায়।তেমনি কোনো কোনো ব্যবসায়ীও দিনের প্রথম উপার্জনকে এভাবে ভক্তি জানিয়ে থাকে।

নিজের কষ্টার্জিত অর্থের উপর মানুষের মুহাব্বাত থাকা স্বাভাবিক।ইসলামে এই মায়া বা মুহাব্বত থাকা দোষণীয় কিছু নয়,কিন্তু উপরোক্ত ছোঁয়াছুয়ি ও কপালে ঠেকানোর মতো ভক্তিমূলক আচরণ অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

প্রথম উপার্জনকে ভক্তি জানালে পরবর্তী উপার্জনের পথ সুগম হবে-এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এসব আচরনের সবচেয়ে নিন্দিত দিক হল,উপার্জনের মাধ্যমকে অর্থাৎ গাড়ি, পণ্য বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে উপার্জনদাতা মনে করা।এমনকি কারো কারো কথাবার্তা থেকে তো পৌত্তলিকতার আভাস পাওয়া যায়।

বাস্তব কথা এই যে, এই মাধ্যমগুলো উপলক্ষ মাত্র। তাই সবকিছু ঠিক থাকার পরও সবার উপার্জন ও সব সময়ের উপার্জন সমান হয়না। উপার্জন ও রিজিক একমাত্র আল্লাহর হাতে।তিনি কখন কাকে কিভাবে রিজিক দিবেন এবং কোন উপায়ে দিবেন তা একমাত্র তিনিই জানেন।মনুষের কাজ হল হালাল উপার্জনের চেষ্টায় আল্লাহর দেওয়া মেধা ও শক্তি ব্যবহার করা এবং তাঁর কাছে রিজিক প্রার্থনা করা। অত:পর তিনি দয়া করে বান্দাকে যা কিছু দান করেন তার উপর সন্তষ্ট থাকা ও তাঁর শোকর গোযারী করা। সর্বোপরি এই অটল বিশ্বাস রাখা যে, উপার্জন আল্লাহর দেয়া নেয়ামত। আর নেয়ামতের শোকর আদায় করলে আল্লাহ তায়ালা তা বাড়িয়ে দেন। উপার্জন হাতে আসার পর এটাই হল একজন মুমিনের কর্তব্য। কিন্তু তা না করে উপার্জনের মাধ্যম এবং উপার্জিত অর্থ-কড়িকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মাথায় ও কপালে ঠেকানো সম্পূর্ণ অর্থহীন ও বিদআতীমূলক আচরণ।এর সাথে যদি কোনো ভ্রান্ত বিশ্বাস যুক্ত হয় তাহলে তা যে একটি চরম গর্হিত কজে পরিণত হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

সুতরাং একজন মুসলমান হিসেবে এ ধরণের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা ও অন্যকে একাজ থেকে বিরত রাখা ঈমানী দায়িত্বও বটে।