ঘুরে আসুন মেইন-৯

ফকির সেলিম
Published : 13 March 2016, 07:55 PM
Updated : 13 March 2016, 07:55 PM

১৭৭৮ সালে জর্জ ওয়াশিংটনের আমলে হেডলাইটের নির্মান কাজ শুরু হয় আর শেষ হয় ১৭৯১ সালে। ১৭৮৭ সাল। মেইন তখনো ম্যাসাচুসোসের অংশ। জর্জ ওয়াশিংটন পোর্টল্যান্ড শহর থেকে জনাথন ব্রায়ান্ট ও জন নিকোলস নামের দুই কর্মকর্তা নিয়োগ করলেন লাইটহাউজ নির্মানের দায়িত্ব দিয়ে।

১৫০০ ডলার বরাদ্দ করা হয় নির্মান খরচ বাবদ। ১৭৯১ সালের জানুয়ারীতে নির্মান শেষ হয় ৫৮ ফুট উচ্চতার লাইটহাউস। দূরের বস্তু ভালো করে দেখার সুবিধার্থে পরে তা আরো ২০ ফুট বাডানো হয়। বর্তমানে এর উচ্চতা মাটি থেকে ৮০ ফুট আর পানি থেকে ১০১ ফুট। ৪০০ ওয়াটের বাতি ফেলে এখান থেকে ২৪ নটিক্যাল মাইল দূরের বস্তু দেখা যায়। ১৯৭৩ সাল থেকে এই লাইটহাউসকে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসাবে নিবন্ধিত করা হয়।

এই লাইট হাউসের তলে বসে দিনের পর দিন অসংখ্য কবিতা লিখছেন বিশ্ববিখ্যা্য কবি হেনরী ওয়াডসওয়ারথ লংফেলো।

পোর্টল্যান্ড হেডলাইটের গোডায় ছোট ছোট টিলার সমাহারে ৯০ একর যায়গা নিয়ে গডে তোলা হয়েছে ফোর্ট উইলিয়াম পার্ক। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দুর্গ থেকে অসামান্য বীরত্ব ও কৃতিত্বের সাথে যুদ্ধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেনা বাহিনী।

ফোর্ট উইলিয়াম পার্কের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হচ্ছে গোড্ডার্ড ম্যানসন। এটি নির্মানে সময় লাগে ১৮৫৩ থেকে ১৮৫৯ সাল পর্যন্ত । আমেরিকার গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে কর্নল গোড্ডার্ড এটি নির্মান করেন। ১৯০০ সালে ফেডারেল সরকার এর দখল নেয়ার পর থেকে সেনা কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার হিসাবে এটি ব্যাবহৃত হয়।

অপূর্ব সুন্দর ফোর্ট উইলিয়াম পার্ক শুধুমাত্র স্থানীয়দের জন্যে নয় দেশ বিদেশের অসংখ্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় একটি স্পট। নানা খেলাধুলার সুবিধাসহ পার্কে রয়েছে পিকনিক শেল্টার। বছর জুডে এখানে চলে হরেক রকমের অনুষ্ঠান।

হেডলাইট দেখা শেষ করে বের হতে গতে সন্ধ্যা হল। সবাই ক্ষুধার্ত। ডাউনটাউ পোর্টল্যান্ড গিয়ে লবস্টার খাওয়ার সিদ্ধান্ত হল। পোর্টল্যান্ডের ডাউনটাউন বেশ জমজমাট। না গেলে কেউ বুঝতেই পারবে না যে মফস্বলের মত একটি শহর সন্ধ্যার পর এ্যাতোটা ঝকমকে হতে পারে। সন্ধ্যা তখন সাডে আট কি নয়টা। রাস্তাটার নাম সম্ভবত বে স্ট্রীট। ক্যাস্কো সাগরের পাড় ঘেষে মাইল দুই এলাকা নিয়ে এই ঝিলিক। রাস্তার দুপাশে বেশীরভাগই রেস্টুরেন্ট আর উপহারের দোকান। গাড়ী পার্ক করতেই মিনিট তিরিশেক লেগে গেল। রোডসাইনও ভালো করে বুঝতে পারছি না।

আমেরিকায় এই এক কনফিউশন। পণ্চাশ রাজ্যের পন্চাশ রকম আইন। একই ধরণের যদিও, তবু কনফিজিং। পার্ক করলাম। রিশা বললো চলো লবস্টার খাই। রামিন বললো নাহ্ চলো থাই খাই। আমি বললাম নাহ্ চলো হোটেলে গিয়ে খিচুড়ী বানিয়ে খাই। এখানেও কনফিউশন। রিশার মন খারাপ দেখে বললাম ওকে লবস্টারই খাবো।

কোথায় খাবো? খানিক্ষন ঘুরে সাগর কুলের এক রেস্টুরন্টে ঢুকলাম। কেমন যেনো কাঁচা মাছ পচা গন্ধ। বেশীক্ষন বসতে পারলাম না। উঠে গিয়ে আরেকটাতে বসলাম। একই অবস্থা। আসলে পঁচা মাছ না। শামুক ঝিনুকের পঁচা গন্ধ। ওসবতো আর আমরা খেতে অভ্যস্ত না। সেখানেও বসা হলনা। শেষমেষ সিদ্ধান্ত হল হোটেলে ফিরে খিচুড়ী রান্নার।

রাইস কুকার চাল ডাল আলু নিয়ে আসা হয়েছিল শহীদুলের বাসা থেকে। অনু খিচুড়ী চড়িয়ে দিল। শুরু হলো সাপ লুডুর প্রতিযোগিতা। খচুড়ী রান্না হতে হতে কয়েক দান লুডু খলা হল। চোরামি করে করে আমিই প্রথম হলাম। শহীদুল ফাইড়ো। নডাইলের ভাষায় ফাইড়ো মানে ফেল করা। জমজমাট আড্ডা আর সুস্বাদু খিচুড়ী ভোজনের মধ্যে দিয়ে পোর্টল্যান্ডে রাতের নিস্তব্ধতার সুখ নিদ্রায় কাটলো প্রথম দিন ও প্রথম রাত।