শুধু পোর্টল্যান্ড না গুগলের কল্যাণে এক নজরে জেনে নিলাম পুরো মেইন রাজ্যের তথ্য। রাজ্যটি কতটুকু, জনসংখ্যা কতো কার কি পেশা ইত্যাদি।
মেইন রাজ্যের রাজধানীর নাম অগস্টা, আর জনসংখ্যা ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২০ লক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকুলের সবুজ বনানী পাহাড় আর পানি ঘেরা শান্ত নীরব রাজ্য মেইনের অপূর্ব প্রকৃতিক দৃশ্যের কথা সর্বজন বিদিত। রাজ্যটি চারটি ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে চার রকম রূপ নেয়।
ফল বা শরৎকাল এখানে খুব ছোট কিন্তু অপরূপ। মেইন রাজ্যের প্রায় পুরো অংশ জুড়েই রয়েছ দৃষ্টিনন্দন চিরহরিৎ বৃক্ষরাজির সমাহার। শরৎকালে সেই সবুজ শ্যামল বৃক্ষরাজির সীমাহীন সৌন্দর্য যে কারো অন্তরে সুখ শিহরণ জাগিয়ে তোলে।
শরতের সেই মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য অন্যদিকে আবার দীর্ঘ তুষাবৃত তিক্ত শীতকালকে যেনো উপহাস করে।
আর বসন্তে? মেইনবাসীরা বলেন 'মাড সিজন'। টিলা পাহাড় দ্বীপ বনানী আর সাগর আবৃত মেইনে শীতকালের তীব্র শ্বেত শুভ্র তুষার আর মাটি কাদা মাখা রাস্তাঘাট বসন্তের এপলব বৃষ্টিতে পরিচ্ছন্ন হয়ে পৃকৃতি ও পরিবেশে প্রাণ ফিরতে শুরু হয়। সবুজ বনানীতে প্রেমের পরশ লাগে। গাছে গাছে কলি আসে, ফোটে নিল সাদা বেগুনী লাল গোলাপী, নানান রংএর ফুল।
গ্রীষ্মকাল মেইনবাসীদের জন্যেতো বটেই, সকল পর্যটকদের জন্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঋতু। মেইনের গ্রীস্ম অন্যান্য অঞ্চলের বসন্তের মতো। গ্রীস্মে এখানে অতো বেশী গরম পড়েনা। উপকুলের কাছাকাছি স্থানগুলিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয় ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। সংখ্যায় কম হলেও উত্তর আটলান্টিকের পাড়ের রাজ্য মেইনের পাহাড়ী উপকুলবর্তী স্থানগুলোতে রেয়েছে বেশ কয়েকটি সমুদ্র সৈকত। সেই সৈকতে সাগরের পানির ঢেউগুলোও খুব প্রানবন্ত। প্রতিটি ঢেউ যেনো নাচের মুদ্রার তালে নৃত্যরত। মেইনের উত্তরে কানাডার সীমান্তে রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত দৃষ্টিনন্দন অবারিত পাইন বৃক্ষের বনানী। সেখানে গ্রীষ্মকাল জুড়ে থাকে জ্যাকেট ওয়েদার, অর্থাৎ ৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রা।
গ্রীষ্মকালে নীরব নিস্তব্ধ সভ্য-শান্ত মেইনবাসীদের শান্তি নষ্ট করতে আসেন ঝাকে ঝাকে পর্যটক। মেইনের রসালো সুস্বাদু লবস্টারের স্বাদ নেয়াটাই তাদের মূল লক্ষ্য। এছাড়া সামারে মেইনের পর্যটকেরা ব্যাস্ত থাকেন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা স্থানে ঘোরাফেরা আর কেনাকাটায়। ভাগ্য ভালো থাকলে মেইনের অন্যতম প্রধান প্রতীক বাদামী রঙ্গের বৃহদাকার মুজের সঙ্গে ছবি তোলার সৌভাগ্য হয়ে পড়ে। ষাঁড় মুজ হলে তার মাথায় থাকে বিশাল শিং। শিকারীদের পছন্দ ষাঁড় মুজের ঐ শিং। ফায়ার প্লেসের ওপরে ঐ শিং টাঙ্গিয়ে রাখাটা তাদের ভালো লাগার বিষয়।
আটলান্টিক থেকে মেইনের মূল ভূমিতে ঢুকেছে অসংখ্য ছোটো ছোটো খাড়ি বা খাল। এসব দৃষ্টিনন্দন মোহনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করে নিশ্চিতভাবেই। পর্যটকরা ছবি তোলেন, উপহার সামগ্রী কেনেন ছোট ছোট দোকানগুলো থেকে।
পোর্টল্যান্ডতো বটেই মেইনের স্থায়ী অধিবাসিদের স্বভাব বোধহয় একটু কম কথা বলা। 'আইয়াপ' (ইয়েস) অথবা 'নোপ' (নো) এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তারা বেশী। কিছু জিজ্ঞেস করেল, বেশিরভাগ মেইনারই স্থানীয় এ্যাক্সেন্টে 'আইয়াপ' বা 'নোপ' উত্তর দেয়।
মেইনারদের কম কথা বলা নিয়ে একটি প্রাচীন গল্প প্রচলিত রয়েছে। গল্পটি হচ্ছে: অনেকদিন আগের কথা। দু্ই মেইনার কয়েক ঘন্টা একটি পার্কের দোলনায় দোল খাচ্ছিল। দু'জনের কারো মুখে কোনো কথা নেই। একবার সামনে যাচ্ছে আবার পেছনে আসছে; একবার সামনে যাচ্ছে আবার পেছনে আসছে। অবশেষে একজন কথা বলে উঠল। বললো, "That there's a bobcat!" 'একটা বন বিড়াল মনে হয়!' আবারো দু'জন একমনে দোলনায় দোলা খাওয়া শুরু করে। মিনিট পাঁচেক পর অপর মেইনার বলে উঠলো, "Tain't." মানে 'না তা ঠিক নয়'। আবারো দু'জনের নীরবতা। মিনিট পনেরো পর আগেরজন বলে উঠলো, "Well, got to be goin'. Can't stand an ar-gu-ment."; অর্থাৎ 'মানে হতে পারত 'যাহোক তর্ক আমার পছন্দ নয়'। দু'জন উঠে দুদিকে চলে গেল। এই হলো মেইনারদের কথা বলার ধরণ। ঘন্টার পর ঘন্টা একত্রে কাটিয়ে পরিমিত শব্দে মাত্র দুই তিনটা বাক্য বলবে।
মাত্র তিনদিনের সফরে এসেছি। এর মধ্যে যতটুকু সম্ভব ঘুরে দেখতে হবে। আমাদের হাতে ঘোরার জন্যে আছে আজ পুরো দিন। কোথায় যাওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত রুমে বসেই নিলাম। শহর থেকে মাইল পঞ্চাশেক উত্তরে বেলিজ নাম একটি দ্বীপের তথ্য মিলল। সেখানে জেলেদের বাস। জেলে মানে লবস্টার হান্টার। ডিসিশন হল ওই দ্বীপে পুরো দিন কাটানোর।