উই আর ওয়াকিং অন এ ফাইন লাইন

ফারদিন ফেরদৌসফারদিন ফেরদৌস
Published : 20 May 2015, 06:24 PM
Updated : 20 May 2015, 06:24 PM

উদারপন্থী, পরমতসহিষ্ণু, ধর্মনিরপেক্ষ, পার্থিবতাবাদী বা মানবতাবাদী হলো বৈধর্ম। অন্যদিকে পাপপুণ্য, শুভাশুভ বোধ বা আধ্যাত্ম সত্য বিশ্বাস হলো ধর্ম। আপাতঃ এই দুইয়ের মধ্যে কোনো বাধ বিরোধ দেখা না গেলেও ধর্মের মধ্যে যেমন ধর্মান্ধ গোঁড়া অন্ধবিশ্বাসী বা কেবলই ধর্মের জিগিরওয়ালা আছে তেমনি বস্তুবাগীশ বা বৈধর্মেও ঈশ্বরবিদ্বেষ আছে। কিন্তু সবার ওপরে যদি পরমতসহিষ্ণুতাকে স্থান দেওয়া যেত তাহলে হয়তো ধর্ম আর বৈধর্মের মধ্যে অনাহুত বিসম্বাদ, কাজিয়া বা বাহাস এড়ানো যেত। কিন্তু বাঙালি মাত্রই আজ গলায় দড়ির কথা জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেকে অতি চালাক বা বুদ্ধিমান ঠাওরায়।

আমাদের ধর্মের অনুভূতি এতোই রোমাঞ্চ কম্পন বা শিহরণজাত যে, স্বল্প সুড়সুড়িতেও আমরা উন্মত্ত, উদগ্র, আত্মহারা বা মাতোয়ার হয়ে যা খুশি তাই করে ফেলতে পারি।

অবিভক্ত ভারতের ছুতার মিস্ত্রীর ছেলে জনৈক ইলমুদ্দিন উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে রাজপাল নামক এক বই প্রকাশককে ছুড়িকাঘাতে হত্যা করেন। কারণ রাজপাল 'রঙ্গিলা রসুল' নামে একখানা স্যাটায়ারধর্মী বই প্রকাশ করেছিলেন। সেসময় মুসলিমরা এটিকে তাদের ধর্মবিশ্বাসের ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখেন। পেশায় পতিতালয়ের দারোয়ান প্রখর ধর্মানুভূতিসম্পন্ন এই ইলমুদ্দিনকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ থেকে বাঁচাতে তার পক্ষে মামলা লড়েন স্বয়ং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ইলমুদ্দিনের জানাযায় লাখো মানুষের সাথে আল্লামা ইকবাল অংশ নিয়ে জানাযায় ইমামতি করার প্রস্তাব পেলে তিনি জানান, ইলমুদ্দিনের তুলনায় তিনি নাকি একজন অতিশয় নগণ্য মানুষ। শত বছর ধরে চলে আসা এই উপমহাদেশীয় সেই ধর্মানুভূতিই বর্তমানে শাখাপ্রশাখাসমেত কেবল বিস্তারই ঘটেনি, রীতিমতো বিস্ফোরন্মোখ রূপ পরিগ্রহ করেছে।

প্রাচীন গ্রীসে ৪৭০ খ্রিস্টপূর্বে জন্ম নেয়া আধুনিক দর্শন ও নীতিশাস্ত্রের গুরু সক্রেটিসকে কে না চিনে? নীতি ও যুক্তির কথা বলায় সেসময় তাঁর শত্রু হয়ে উঠেছিলেন রাজনীতিবিদ ও ধর্মযাজকগণ। প্রচলিত প্রথা, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি এবং আইনকানুন নিয়ে, দেবদেবী আর অলৌকিক ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন করতে লাগলেন সক্রেটিস। তার বিরুদ্ধে তরুণদের নৈতিকতা ধ্বংস করা, ধর্মবিরোধিতাসহ মানুষকে ধর্মের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার অভিযোগ দায়ের করা হয়। বিচারের সভায় সক্রেটিসের কাছে যুক্তিতে ভয়াবহভাবে পরাজিত হবার পরেও সক্রেটিসের শাস্তি হলো হেমলকের বিষে মৃত্যুদণ্ড।
তিনি বলতেন অজ্ঞানতা আর ভয় সকল পাপ সৃষ্টি করে, এই অজ্ঞানতা আর ভয়ই ধর্মসমূহের চালিকা শক্তি। একমাত্র জ্ঞানই সেই পাপ দূরীভূত করে। শাসকরা মনে করে জনগণকে অন্ধকারে রাখলেই জনগণ ভাল এবং সুখে থাকবে, শাসকরা তাই মিথ্যা শেখায় মিথ্যা জানায়। কিন্তু মিথ্যা কখনও শান্তির চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দিতে পারে? এই অত্যাধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগেও হেমলকের বিষবাষ্প থেকে আমরা বেরোতে পারিনি। এক ধর্মান্ধ অদৃশ্য অস্পৃশ্যদল সিরিয়ালি হূমায়ূন আজাদ, রাজীব হায়দার, অভিজিত রায়, ওয়াশিকুর বা অনন্তদের মৃত্যদণ্ড কার্যকর করে চলেছে।

এমন বাস্তবতায় অভিজিত রায় হত্যাকান্ডের পর দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পুরুষ ও প্রধানমন্ত্রী তনয় সজীব ওয়াজেদ জয় সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সাথে কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, We are walking a fine line here- অর্থাৎ 'আমরা একটা চিকন রশির ওপর দিয়ে হাঁটছি।' 'আমরা নাস্তিক হিসেবে পরিচিত হতে চাই না। এটা আমাদের মৌলিক বিশ্বাসের পরিবর্তন নয়। আমরা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি। কিন্তু এটা দিয়ে আমাদের বিরোধী রাজনৈতিক দল আমাদের বিরুদ্ধে নিরলসভাবে ধর্মের কার্ড খেলে। আমরা অভিজিতের হত্যার বিষয়ে প্রকাশ্যে শক্ত অবস্থান নেইনি এটা বাস্তবতা নয়, কেবল ধারণা।'

সজীব ওয়াজেদ জয়ের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতকে সামনে রেখে যুক্তি ও বিজ্ঞান লেখক অনন্ত বিজয় দাশ দুর্বৃত্তের হাতে প্রাণ হারানোর পর মুক্তিযুদ্ধ, অসাস্প্রদায়িকতা এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চার প্রবাদ পুরুষ ড. জাফর ইকবাল এক প্রতিবাদ সভায় আক্ষেপ নিয়েই বলেছিলেন, জয়ের এমন বক্তব্য একের পর এক বিজ্ঞান ও যুক্তিভিত্তিক লেখকদেরকে মেরে ফেলতে মৌলবাদীদের উৎসাহিত করতে পারে। আর যায় কোথায়, জাফর ইকবালের মুন্ডুপাত করে সিলেট আওয়ামীলীগ, যুবলীগ বা ছাত্রলীগ বিরাটকায় মিছিল সমাবেশ করে বসল। ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামীলীগের অতি উৎসাহী হাইব্রিডার কাউকে কাউকে বলতে শোনা গেল, জাফর তুই নাস্তিক ব্লগার, এই মুহূর্তে সিলেট ছাড়।

দেশের ৭২ বা বর্তমান সংবিধানের মূলনীতির অন্যতম হলো, ধর্মনিরপেক্ষতা বা ধর্মীয় স্বাধীনতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর আত্মজীবনীতেও বলেছেন, জনগণকে 'ইসলাম ও মুসলমানের নামে' স্লোগান দিয়ে ধোঁকা দেয়া যায় না। ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলমান তাদের ধর্মকে ভালোবাসে; কিন্তু ধর্মের নামে ধোঁকা দিয়ে রাজনৈতিক কার্যসিদ্ধি করতে তারা দিবে না, এ ধারণা অনেকের হয়েছিল। জনসাধারণ চায় শোষণহীন সমাজ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি।
তাহলে এসময়ে সেই বঙ্গবন্ধুর উত্তসূরীর ক্ষমতা থাকাকালে কী এমন ঘটল যে, ধার্মিকদের নিয়ে কথা বলা মানেই সূক্ষ্ম রশির ওপর পা রাখা! কী ঘরে কী বাইরে এমন ধারার ধর্ম ব্যবসায়ী কূপমূন্ডকদের বিরুদ্ধে কেন অবিরাম যুদ্ধ করে যেতে হচ্ছে শেখ হাসিনাকে। কী এমন ঘটল যে, মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে দুর্নীতির দায়ে জেল না খেটে, ধর্মানুভূতি খোচা দিয়ে জেলের ঘানি টানতে হচ্ছে। কী এমন ঘটে চলেছে যে, চট্টগ্রামের নতুন মেয়র আ জ ম নাছিরকে পর্যন্ত হাটহাজারীর তেঁতুল হুজুরের পানি পড়া খেয়ে নগর পিতার দায়িত্ব পালন করতে হয়? কীসব হচ্ছে এমন যে, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদকেও শফি হুজুরের হস্ত চুম্বন করে নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে হয়! অথচ যে শফি হুজুর কিনা, পৃথিবীর নিকৃষ্টতম নারীবিদ্বেষী এবং অন্ধকার ১৩ দফার প্রবক্তা। নারীর ক্ষমতায়ন বা অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হওয়াদের মধ্যে প্রথম স্থানে থাকা শেখ হাসিনাকেও সেই নষ্ট ১৩ দফাবাজ তেঁতুল হুজুরের ব্যাপারে মাথা ঠান্ডা রেখে চলতে হয়।

এমনতো নয় যে, দেশে প্রচন্ড শক্তিধর ইসলামপন্থী বিরোধী দল রয়েছে। ইসলামী জিহাদিস্ট যারা কেবল নিজেদেরকে ছাড়া আর কাউকে আস্তিক ভাবে না, সেই জঙ্গি জামায়াত শিবিরকে কোলে করে রাখায় বিএনপির আজ বেহাল দশা। আমেরিকার প্রতিনিধি পরিষদে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ আসছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বিএনপিকে জামায়াত থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলতে বারবার বলে যাচ্ছে। সরকারের ইস্পাত দৃঢ়তায় যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর হয়ে চলেছে। কাজেই আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে নোংরা পলিটিক্সপূর্ণ ধর্মের কার্ড খেলবে সেই জোর তাদের কোথায়?
ঠিক এমন সময় এই দেশে ইসলামিস্টদের সমঝে চলতে হচ্ছে কেন এই সরকারকে? এর আদি ও আসল কারণ হচ্ছে বর্তমান আওয়ামীলীগে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে চরম ডানপন্থী ইসলামী জিহাদিস্টরা ঢুকে পড়েছেন। এই ভাড়ায় খাঁটা ডানপন্থী দুধের মাছিরা মাথায় টুপি দিয়ে অন্তরে ইসলাম গেল ধুয়া তুলে মুখে হরহামেশা জয় বাংলা বা জয় বঙ্গবন্ধু জিগির করেন। তার একটা প্রমাণ হলো, সিলেটের আওয়ামী সাংসদ রাজাকার দেলোয়ার পুত্র অশিক্ষিত কয়েস চৌধুরী। এসব হাইব্রিড আওয়ামীলীগার সংবিধানের 'ধর্মনিরপেক্ষতা' বাদ দিয়ে এরশাদ বা জিয়ার আমলের সাংবিধানিক প্রথম মূলনীতি-'সর্ব শক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' মেনে চলেন, এতে কোনো সন্দেহ নাই।
এহেন হাইব্রিডারের চরম ঔদ্ধত্য এই যে, অন্যায় আবদার না মানায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমানের সুপুত্র মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তবুদ্ধির সর্বশ্রেষ্ঠ চর্চাকারী অধ্যাপক জাফর ইকবালকে প্রকাশ্যে চাবুক পেটা করতে চান তিনি। সর্বজন শ্রদ্ধেয় জাফর স্যারের এমন ন্যক্কারজনক অসম্মানেও সরকারকে চুপ করে থাকতে হয়। ইস্যুটা সেই চিকণ রশির ওপর দিয়ে হাঁটা। এ যেন নিজের সাথেই নিজের অহর্নিশ যুদ্ধ। ভাবনাটা এমন হয়ত, ঠগ বাছতে না শেষে গা উজার হয়ে যায়।

খোদ আমেরিকাতে যেখানে কি না প্রায় ১৭ ভাগ মানুষ স্রষ্টার অস্তিত্বে সংশয়বাদী, সেখানেও সরকারীভাবে বলা হয় 'In God We Trust'। তবে আর বাঙালির পিছিয়ে থাকা কেন? ধর্মাচারই হোক শয়নে স্বপনে দিবা রাত্রে আমাদের একমাত্র ব্রত। মানবতা গোল্লায় গিয়ে মারা যাক!

লাতিন আমেরিকার মহত্তম অমর কথাশিল্পী গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের মতো করে অদ্ভূতভাবে জাদু বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে চলছে আমাদের এই দেশ। 'সিয়েন আনিয়োস দে সোলেদাদ" বা 'নিঃসঙ্গতার একশ বছর' নামের মহাকাব্যিক উপন্যাসে মার্কেস ক্যারিবীয় সাগর পাড়ের কলাম্বিয়ার 'মাকান্দো' নামে এক গ্রামের একটি পরিবারের কয়েক প্রজন্মের সদস্যদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, জীবন-মৃত্যু, প্রেম-বিরহ আর এসবের সামাজিক রাজনৈতিক অভিঘাত ও ঘটনাপ্রবাহের এক অতুলনীয় ছবি এঁকেছেন যা বাস্তবতা আর কল্পনার মিশেলে, লৌকিক আর অলৌকিক সত্যাসত্যের কুজ্ঝটিকায়, উদারনৈতিক আর রক্ষণশীল রাষ্ট্রশক্তির সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক পরিমন্ডলের হিংস্রতা জাদু বাস্তবতায় বর্ণনা করেছেন তিনি।
অবিরাম চিকণ রশিতে হেঁটে হেঁটে আমরাও সৃজন করে চলেছি এমন জাদু বাস্তবতা।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫১ ভাগ ধরে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় এখন ১৩১৪ মার্কিন ডলার। এক অর্থবছরের ব্যবধানে ১২৪ মার্কিন ডলার বেড়ে এ মাথাপিছু আয় দাঁড়ায়। নমিনাল মূল্যের ভিত্তিতে পৃথিবীতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৫৮তম। এবারের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫১ ভাগ। জিডিপি'র আকার চলতি মূল্যে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেড়ে চলেছে।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে মায়ানমারের সাথে বিরোধপূর্ণ সমুদ্র এলাকার ৮০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ৭০ হাজার বর্গ কিলোমিটার ইতোমধ্যে পেয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের সাথে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমার ২৫৬০২ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বাংলাদেশের ১৯৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার আর ভারতের ৬১৩৫ বর্গ কিলোমিটার। সম্প্রতি ভারতের লোকসভায় বাংলাদেশ-ভারত স্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত চুক্তি পাশ হওয়ায় বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ভারতের ১১১ টি ছিটমহলের জমির স্বত্ব পাবে বাংলাদেশ, যার আয়তন ১৭২৫৮.২৪ একর। আর ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশের ৫১ টি ছিটমহলের মালিক হবে ভারত, যার আয়তন ৭০৮৩.৫২ একর। মোটামুটি প্রতিটা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ আছে। বড় বড় অনেক ক্ষমতাধর দেশেরও অমীমাংসিত জলসীমা, স্থলসীমা নিয়ে বিরোধ থাকলেও স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর আমাদের বাংলাদেশ এ সমস্যা থেকে মুক্ত হল।

আর এমন অর্জনে দেশের পত্রিকাওয়ালারাও অকুন্ঠ প্রশংসা করছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর। সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান, প্রথম আলোতে তাঁর কলামে বলেছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য উপযুক্ত বিশেষণ কী হতে পারে? ডটার অব বর্ডারস। কারণ, তিনি নিশ্চিতভাবেই এক অনন্যসাধারণ সীমান্তজয়ী। কারণ, তাঁর প্রথম মেয়াদে মিয়ানমারের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তির পূর্ণতা পায়। ভারতের মতো বর্মি পার্লামেন্টও স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুসমর্থন করেছিল। শেখ হাসিনা এই পর্বে ক্ষমতায় এসে ভারত ও মিয়ানমার উভয়কে বুদ্ধিদীপ্ত কূটনীতিতে বিহ্বল করে দিয়ে জাতির জন্য অবিস্মরণীয় সমুদ্রজয় এনে দিয়েছেন। এরপর ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনটাও সম্পন্ন করলেন। তাই আজ গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ঘাটতি এক পাশে সরিয়ে রেখে কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করব। সহস্র কণ্ঠে তাঁকে অভিবাদন। সীমান্ত জয়ের এই লগ্নে জনগণের নেত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর যে সত্তা মানবিক, রাষ্ট্রনায়কোচিত, সেই সত্তার প্রতি আমাদের অভিবাদন।
চিকণ রশির ওপর দিয়ে হেঁটে গিয়েও হাসিনা সরকারের এসব অর্জনকে জাদু বাস্তবতা বলবেন নাতো কী?

চিকণ রশির এমন জাদু বাস্তবতা আরও আছে। দেশের অগ্রগতির এই জোশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ঘোষণা দিয়েছেন, মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের পথেই আছেন শেখ হাসিনা। তার মানে একটানা ৩২ বছর ধরে বর্তমান সরকারের জাদু বাস্তবতা চলতে থাকলে একসময় ধর্ম নিয়ে মারামারি বা চাপাতিবাজরা নয় স্রেফ আর্থ সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নের সুফল পাওয়াদেরই জয়জয়কার হবে হয়ত।

সেদিন আর হাওয়া হয়ে গিয়ে সালাউদ্দিন আহমদরা পথ ভুলে শিলং এর মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হবেন না। পহেলা বৈশাখের নারী নিপীড়নকে পুলিশ প্রধান শহীদুল হকের মতো করে বলবেন না, এটা ছেলেপুলেদের ক্ষণিকের দুষ্টুমি। অধিকার রক্ষার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইসমত জাহানদের মতো কেউ পুলিশের লাথি বা চুলের মুঠিতে ঝাঁকুনি খাবে না। এখন না হোক, ৩২ বছর পর হয়ত জীবন জীবিকার তাগিদে অসহায় ভুখা নাঙ্গা সহস্র মানুষকে সাগরে ভেসে ভেসে জল বা স্থলের সন্ধান করতে হবে না। প্রতিবাদে উচ্চকিত কোনো এক লাকী আক্তারকে নারী নিপীড়ন ঠেকাতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে প্রীতিলতা ব্রিগেড গঠন করতে হবে না হয়ত। জাফর ইকবাল স্যারদের মতো মানুষদের অসম্মানকারীদের অন্তত ধমকটা দিতে পারবেন আমাদের দেশ নায়করা। সেদিন সজীব ওয়াজেদ জয়রাও ফাইন লাইনের ওপর দিয়ে না হেঁটে সোজা ও সরল পথে হাঁটবেন।

সেসময় জীবনানন্দ দাশের মতো করে আর কাউকে সখেদে বলতে হবে না,
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;

ফারদিন ফেরদৌসঃ লেখক ও সাংবাদিক
২১ মে ২০১৫
Facebook/fardeen.ferdous
Twitter/fardeenferdous