অবশেষে বাঁকা হলো সাকা’র বিশেষ আঙ্গুল

ফারদিন ফেরদৌসফারদিন ফেরদৌস
Published : 29 July 2015, 06:22 PM
Updated : 29 July 2015, 06:22 PM

অশ্লীলতা, ঔদ্ধত্য, ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপের বর্বর পুরুষ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, বোয়ালখালী ও চট্টগ্রাম শহরে ধর্ষণ, লুটপাট, হিন্দুদের বাড়ি দখল এবং তাদের দেশান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের দেয়া ফাঁসির দন্ডাদেশ আপিল বিভাগও বহাল রেখেছেন।

গুড হিলস গ্যারেজ 'টর্চার সেলে'র মাস্টার মাইন্ড সাকা চৌধুরীর হাতে শহীদ রাউজানের কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহ ও ঊনসত্তরপাড়ার হিন্দু বসতির গণহত্যার শিকার সবার আত্মা শান্তি পাক।

৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা বোনের সম্ভ্রমে পাওয়া আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতা। সেই মা বোনদের নিয়েও কুৎসিত কটাক্ষ করে গেছে সাকা চৌধুরী। তার নোংরা ভাষায়, ধর্ষণ যখন নিশ্চিত, তা উপভোগ করা শ্রেয়! এখন আমরাও সমস্বরে বলি, ফাঁসি যখন নিশ্চিত, কনডেম সেলে বসে তা উপভোগ করতে পারে রাজাকার সাকা! তার আগে সাকার ফাঁসি সংশ্লেষে অন্য গল্প।

আজ সকালের পর থেকেই দেশের ওর স্যালাইন বিক্রির হার হঠাৎ করেই জিরো পার্সেন্টে নেমে গেছে স্বঘোষিত রাজাকার শিরোমনি, দম্ভের খলনায়ক, মানবতাবিরোধী, ভয়ঙ্কর ও দুর্ধর্ষ অপরাধী সাকা চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ আপিল বিভাগে বহাল থাকার পরপরই। দেশের খ্যাতনামা কোম্পানীগুলোর হাই প্রোফাইলদের টনক নড়ে যাচ্ছে এই অবস্থায়। কিছু সময় তারা বুঝতেই পারছিল না কোটি টাকা ইনভেস্ট করা এই লবন চিনি মিশ্রনের কারখানাগুলো চালু রাখা হবে কিভাবে। বিশেষ করে এসএমসি'র কর্তা ব্যক্তিরাতো মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে সেই কাঙ্খিত রায়ের পর থেকেই। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহু ব্যয় সম্পন্ন এমবিএ পাশ কয়েকজন গবেষককে সম্মিলিতভাবে নিয়োগ দেওয়া হলো এই ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে।

করিৎকর্মা এমবিএ ডিগ্রিধারীরা সেই রহস্য জানবার জন্য জান জেরবার করে ফেলল।

সকালে সাকার ফাঁসির রায় বহাল হওয়ার পর থেকেই স্যালাইনের বিক্রিবাট্টা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জানা গেল বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক সাড়ে সাত কোটি নারী সাকার দাঁত কেলানো কথা শুনলে বা টেলিভিশনে তার বিকৃত কদর্য চেহারা দর্শন করিবামাত্র বমি করে দিত। অবশ্য এই নারী সংখ্যার মধ্যে চট্রগ্রামের চৌধুরী বংশের নারী ও জামায়াত শিবিরের নারীদের হিসাবের বাইরে রাখা হয়েছে। সকালের পরে অমৃত রায়টি সেই নারীদের কর্ণকুহরে পৌছানোর পর থেকেই তারা একযোগে বমি করা বন্ধ করে দিয়েছে। আচ্ছা বমি না করলে কি ডিহাইড্রেশন হয়! আর ডিহাইড্রেশন না হলে কি স্যালাইন খাওয়ার কোনই জরুরত আছে?

এই ফাঁসির রায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অশ্লীলতার মুলোৎপাটন হলো বলে মনে করছেন শ্লীলতা বিশেষজ্ঞরা। বাংলা চলচ্চিত্রের মাইলফলক 'ভয়াবহ ছবি'র কথা ভয়াবহভাবে আপনাদের মনে থাকবার কথা। ওটা ছিল সিনেমা জগতে 'খোলামেলা মানেই অশ্লীলতা নয়' যুগে প্রবেশের টার্নিং পয়েন্ট। সেই সিনেমার সাথে যারা জড়িত ছিলেন সেই কলাকুশলী সকলেই শেষ পর্যন্ততো মানুষই ছিলেন তাই না। তাই তাদেরকে সুশীল মানুষ বা সুশীল মিডিয়া যতই বস্তাপচা অশ্লীল হিসেবে ট্রিট করুক না কেন। তারা কিন্তু সাকা চৌধুরীর অশ্লীল বাচন কিংবা কুৎসিত অঙ্গভঙ্গিকে যুগ যুগ ধরেই ঘৃণা করে আসছে। 'ভয়াবহ' সিনেমার কুশীলবরাও সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায়ে বড়ই খুশি এজন্য যে, সেই নোংরা মানুষটির জন্য ঘৃণা জমিয়ে রাখবার ভার আর বইতে হবে না তাই।

জানা যায়, সেই ২০১৩ সালের ১ অক্টোবরে ফাঁসির রায় হওয়ার পর থেকেই সাকার ডিভিশন বাতিল হওয়াতে কাশিমপুর জেলখানার তাগড়া ইয়ং কয়েদীরা বেজায় খুশি ছিল । ভুলেও আর তাদেরকে সাকার মতো বিকৃত রুচির বুড়া পুরুষের সেবাদাস হতে হবে না। নিজেদেরকে আর অস্পৃশ্য সাকার রংধনুও সাজতে হবে না। কোন ছেলের বাপকে সাকা কর্তৃক পুত্রের শ্লীলতাহানির বিচার চাইতে আদালতে দৌড়াতে হবে না। 'ডট অর্গ' বা 'লিকস' জাতীয় কোন দুর্মতি অনলাইনওয়ালাদের কষ্ট করে আর সাকার কুকীর্তি ফাঁস করার দায়িত্ব নিতে হবে না।

কিন্তু সমস্যা হয়েছে আমাদের পাশের গ্রামের সাকা শিষ্য ক্ষুদ্র রাজাকার ওয়াজুদ্দির। তার হাতের আঙ্গুল নাকি কখনো বাঁকা হয় না। সর্বাবস্থায় সোজা থাকে। আর এই স্বভাবটি তিনি নাকি পেয়েছেন রাজাকারদের নাটের গুরু সাকা চৌধুরীর কাছ থেকে। সাকার বড় দম্ভ, সোজা আঙ্গুলে ঘি তুলতেই সে অভ্যস্ত এবং আঙ্গুল বাঁকা করার তার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু তাঁর সেই অতিশয়োক্তি দর্প ফাঁসির রায় বহালের মধ্য দিয়ে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়েছে। যেই সাকা নিজের নেত্রীকে কুকুর সাব্যস্ত করে লেজে কুকুর নাড়ানোর তত্ত্ব হাজির করে! যেই সাকা প্রধানমন্ত্রীকে সোনা টানাটানির কথায় বিব্রত করে! যেই সাকা সংসদ অধিবেশনে …দনা হয়ে যায়! যেই সাকা নেতা বলে নিজের পায়জামার রশি দিয়ে পাবলিকের মশারি বাঁধতে নারাজ! যেই সাকা বিচারপতিদের সার্কাসের ভার ও মৌসুমী উল্লেখ করে তাঁদের পশ্চাৎদেশে ঔদ্ধত্যের আঙ্গুল ঢোকানোর বর্বরতা দেখায়! ইতরামীর চূড়ামনি সেই সাকা আর উচ্চবাচ্য করে না। মুখ বিকৃত করে দাঁত কেলিয়ে কথাও বলে না। রায়ের পর থেকেই মুখ দিয়ে কেবল বের হচ্ছে হায় পাকিস্তান, হায় পাকিস্তান! এদিকে হয়েছে কি সেই যে সর্বাবস্থায় সোজা থাকা দুশ্চরিত্র সাকার দুর্বিনীত বিশেষ 'আঙ্গুলটি'ও অবশেষে বাঁকা হয়েছে।

সেই থেকে সাকা'র ভাবশিষ্য সকল ক্ষুদ্র রাজাকারদেরও কি যে হলো, তাদের বিশেষ 'আঙ্গুল' ও নাকি দিব্যি বেঁকে যাচ্ছে।

এই দুঃখে অথবা আনন্দে 'ভি' দেখানো সাকা পুত্র হুম্মাম কাদের বা হুকার মুখেও জবান ফুটেছে। তাঁর বাবা নির্ভেজাল নির্দোষ। তাই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার পায়তারা করা হচ্ছে।

এইসব তালবাহানা দেখেই আমাদের মুক্তপ্রাণ গৌরানন্দ কবি পয়ার সাজিয়েছেনঃ
দম্ভ সাকার দূর হলো আজ
রায় হয়েছে ফাঁসির
উসলে না দরদ আর
দলের কোন মাসির।

রণ হুঙ্কার রাজাকারের
মারবি কত মার
পাকিস্তান মোর মা বাপ
বলব বার বার।

একাত্তরে পাকিস্তানে
লুকিয়ে ছিল খোকা
ভাঙ্গা রেকর্ড বাজাইতেছে
সাকা পুত্র হুকা।

সব দলিলে লেখা আছে
সাকার খতিয়ান
গর্বিত রাজাকার
নিজেই মহিয়ান।

তারপরও পাপ নাই তার
পরিবারের দাবি
যুদ্ধকালে ছাত্র ছিল পাকি
তাইতো বলেন ভাবি।

আহা সেই কষ্টের দিন
যোদ্ধারা সব ভুলো
পাহারা দাও ফাঁসির রশি
হয়না যেন মুলো।

ফারদিন ফেরদৌসঃ লেখক ও সাংবাদিক
২৯ জুলাই ২০১৫
https://www.facebook.com/fardeen.ferdous
https://twitter.com/fardeenferdous