ভ্যাটান্দোলনে জেরবার হয়েই চলেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরবাসী। তার প্রভাব পড়ছে সারাদেশব্যাপী।
অসহায় মানুষ, দিনে এনে দিন খাওয়া কর্তব্যপ্রাণ অথবা আনন্দবিলাসী কেউই নির্বিঘ্নে পৌছতে পারছেন না তার নিজ নিজ গন্তব্যে।
আমরা শিক্ষায় যেমন করের বিরোধী, তেমনি মানবসৃষ্ট সকল ভোগান্তিরও বিপক্ষে।
তবে আবুল মালের মতো একজন মালায়িত মন্ত্রী থাকলে মহাশীতেও গা গরম করতে রৌদ্র লাগবার কথা না।
যে রাষ্ট্র রাস্তায় নামা অভাগা এই শিক্ষার্থীদের এতোদিনেও বুঝাতে অক্ষম হলো যে,
লাখ টাকা টিউশন ফিতে সত্যিকারের মানহীন পড়াশোনা করাটা তাদের শিক্ষা অধিকার হতে পারে না!
সেই রাষ্ট্রের শিক্ষার ওপর করের বোঝা চাপানোর নামে পাগলামী করার অধিকারই থাকতে পারে না!
শিক্ষা যদি এসব শিক্ষার্থীর অধিকার হয়, তবে কেন টিউশন ফি গুণতেই তাদের ফতুর হতে হবে?
শিক্ষার্থীরা এসব নিয়ে কোনোদিন আন্দোলন প্রতিবাদ করার কথা ভাবেইনি কেন?
এখন রাষ্ট্রকে সাড়ে সাত টাকা পে করতেই তাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থার পেছনে কাদের দায়িত্বহীনতা প্রবল?
এইসব অযাচার বা অসাধুতার পেছনে থেকে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় মালিক বা শিক্ষা নিয়ন্ত্রক নামের লুটেরারা তাদের লালায়িত জিহবা বের করে লে লে হালুয়া করছে, তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্রের দায়টা আসলে কি ছিল? মাথায় উত্তরহীন হাজারটা প্রশ্ন যে খেলা করেই চলে!
রাষ্ট্র তার নির্বুদ্ধিতায় হলমার্কের টাকা খোয়ায়, বেসিক ব্যাংক ডুবায়ে দেয়। পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংক থেকে পাওয়া অর্থ ফিরায়ে দেয়, শেয়ারবাজারকে ফতুর করে মানুষকে পথে বসায়, শত কোটি লোকসান দিয়েও বছরের পর বছর বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নামের অসভ্য হাতি পোষে, বিচারবিভাগ, পুলিশ প্রশাসন, ভূমি বিভাগ, রাজউক, ওয়াসা তথা বিভিন্ন সেবাসংস্থায় হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি জাগিয়ে রাখে!
সেই রাষ্ট্র কিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনপয়সার ভ্যাট নিয়ে টানাহেঁচড়া করে।
কোমলমতি ছাত্রদের রাস্তায় নামিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারীদের অভয়ারণ্য সৃষ্টি করে!
অবরুদ্ধতার বলি বানায় সাধারণ মানুষকে।
বোঝাই যায় সবকালের মাখনভোজি অনাদর্শিক মালমন্ত্রী তথা রাষ্ট্রের মাথামোটা হতে হতে অসারবস্তুতে পরিণত হয়েই গেছে।
তাই অবিলম্বে অসাম্য ও বৈষম্যবহীন শিক্ষানীতি প্রণয়নের দাবি জানাই।
দাবি আদায়ে রাস্তায় নামা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরবার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব দ্রুততম সময়েই করতে হবে। শিক্ষায় সকল প্রকার বাণিজ্যিকীকরণ রহিত করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি সাধারণ মানুষের জন্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ব্যয় নিরীক্ষা করতে অসাধুতা পরিহার করে সৎ ও সাহসী নিয়ন্ত্রকদের দায়িত্ব দিতে হবে। প্রমাণ করতেই হবে শিক্ষা কোনো পণ্য নয়, অধিকার।
অন্যথায় যে মালমন্ত্রী ঘোষণা দেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অজ্ঞান ও করাপশন প্র্যাকটিসে নিমজ্জিত, এরপর থেকে উপজেলা পর্যায়ের পাঠগ্রহণকারীদেরও ভ্যাট দিতে হবে অথবা
যিনি কোথাও কোনো আশাবাদ লক্ষ্য না করে চতুষ্পার্শে কেবল রাবিশ ও বোগাস দেখতে পান,
সেই মালমন্ত্রীর সসম্মান বিদায় কামনা করি।
………
দেশে অর্থবিদ্যায় জ্ঞানলাভ করা বহু প্রতিথযশারা রয়েছেন। তাই ইংরেজি ভাষাবিদ্যাধারী বর্ষিয়ান মন্ত্রীর কবল থেকে এই অভাগা জাতি রেহাই প্রার্থনা করে। যার কাজ তারই সাজে, অন্যলোকের লাঠি বাজে। শুভস্য শিঘ্রম!
ময়ুরের পুচ্ছে আর না মানায় কাক!
ফারদিন ফেরদৌসঃ লেখক ও সাংবাদিক
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
https://www.facebook.com/fardeen.ferdous
https://twitter.com/fardeenferdous