সম্প্রীতি নির্বাসনে!

ফারদিন ফেরদৌসফারদিন ফেরদৌস
Published : 9 Oct 2015, 07:18 AM
Updated : 9 Oct 2015, 07:18 AM

কিছুদিন আগে একসাথে হিন্দু ও ইসলাম ধর্ম চর্চা করায় এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। হজ ট্রাজেডি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় এক হিন্দু যুবককেও একই পরিণতি বরণ করতে হয়।

এবার কচুয়ায় সঞ্জয় সরকার নামে এক ব্যক্তি মন্দিরে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখায় সঞ্জয়কেও একই কায়দায় গ্রেপ্তার করে চৌদ্দ শিকের ভিতর পুরেছে অতিবুদ্ধিমান পুলিশ।

ধর্ম যদি আমাদের সাম্যবাদ, সৌহার্দ্য বা ভ্রাতৃত্বই শিক্ষা না দেয় তবে সে ধর্ম উগ্রপন্থায় পর্যবসিত হতে বাধ্য।

বিশ্বের সকল মর্যাদাশীল বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব স্টাডিজ বিভাগেই সব ধর্মগ্রন্থ সম মর্যাদায় একই শেল্ফে সাজানো থাকে। মনের সংকীর্ণতা সেখানে কোনো কনফ্লিক্ট সৃষ্টি করে না! মানুষে মানুষে সৎ ও সুন্দর সহাবস্থানের সূত্রওতো এমনটাই হওয়া উচিত।

ভারতের দারদিতে গরু খাওয়ার দায়ে হিন্দু উগ্রবাদীদের হাতে প্রাণ দেয়া এক ব্যক্তির জন্য প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে প্রগতিশীল হিন্দুরাই।

আর মানুষের মধ্যে যদি ভ্রাতৃত্বই না থাকত তবে এবারের আয়লান কুর্দি ট্রাজেডির পর হাজার হাজার মুসলিম শরনার্থীকে ইউরোপিয়ান ক্রিস্টানরা আশ্রয় দিত না। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি ছিল বলেই গত বছর ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনে ভয়াবহ আগ্রাসনের কালে মানবতাবাদী খ্রিস্টানরা রমজান মাসে তাদের গীর্জায় মুসলিমদের প্রার্থনার সুযোগ করে দিতে পেরেছিল।

অষ্টম শতাব্দীতে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে জীবনক্ষয়ী ক্রুসেড চলাকালে খ্রিস্টান সেনা অধিনায়ক মারাত্মক অসুস্থতাজনিত কারণে যুদ্ধ বিরতি করতে বাধ্য হন। আমাদের মুসলিম সেনাপতি বীর সালাউদ্দীন চিকিৎসা বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। মনুষত্বের ধর্ম মেনে সালাউদ্দীন ছদ্মবেশে খ্রিস্টান অধিনায়কের ডেরায় গিয়ে তাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ্য করে তুলেন!

যুগে যুগে এভাবেই জাত ধর্ম বর্ণ গোত্রের উর্ধ্বে গিয়ে একে অপরের প্রতি মানুষের ভালোবাসাই বিজয়ী হয়েছে!

কিন্তু আমরাই বোধহয় পৃথিবীতে এক ধরণের ভিনগ্রহ তৈরি করেছি। যেখানকার অবুঝদার পুলিশ বা অতি সংবেদনশীল মানুষেরা এক কুৎসিত অনুদার রাজত্ব কায়েম করে বসেছে।

যেখানকার ব্যক্তি মানসে কথায় কথায় ছুৎমার্গের কুসংস্কার বিস্ফোরিত হতেই থাকে!
টিকটিকিরও আগে আমাদের অনুভূতির লেজ হঠাৎ হঠাৎ খসে পড়ে!
বিশ্বমানব হয়ে উঠা আর হলো না আমাদের।
সম্প্রীতিই যে আজ নির্বাসনে!

ফারদিন ফেরদৌসঃ লেখক ও সাংবাদিক
২৪ আশ্বিন ১৪২২।।০৯ অক্টোবর ২০১৫
https://www.facebook.com/fardeen.ferdous
https://twitter.com/fardeenferdous