একুশের আবাহনঃ শিক্ষার অবক্ষয় ও বিপর্যস্ত জ্ঞান সাধনা!

ফারদিন ফেরদৌসফারদিন ফেরদৌস
Published : 18 Feb 2016, 07:37 PM
Updated : 18 Feb 2016, 07:37 PM

ফেব্রুয়ারি মাস এলেই চারপাশে সোরগোল শোনা যায়, একুশের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। কিন্তু একুশে চেতনার স্বরূপটা আসলে কী, তা কেইবা জানে? দেশে অপরাপর সংকটের তুলনায় শিক্ষার সংকটটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় মানুষের জানবার বা বুঝবার পরিধিটা ক্রমশই সংকুচিত হয়ে আসছে।

যেই দেশে রাজনীতির কদাচারের সাথে গিরগিটির মতো শিক্ষা কমিশনেরও রঙ বদলায় সেই দেশে শিক্ষা নিয়ে রাজার ভ্রান্ত নীতিই যে সার হবে, জানা কথা। কোনো ধারাবাহিকতা ছাড়া সরকার বদলের সাথে পাল্লা দিয়ে কখনও মনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশন আবার কখনও বা কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিশন প্রণীত রূপরেখা অনুযায়ী চলছে বাংলাদেশে পড়াশোনার আদ্যোপান্ত।

ব্রিটিশ ভারতের এতদাঞ্চলে ১৮৫৪ সালে উডের শিক্ষা ডেসপ্যাচের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ও পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বাংলায় প্রচলিত গণশিক্ষার যাত্রা সূচিত হয়। এভাবে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ ভারত, পাকিস্তান হয়ে বর্তমান বাংলাদেশে ৬টি শিক্ষা কমিশন গঠিত হলেও এখন পর্যন্ত বাস্তবানুগ ও সর্বজনগ্রাহ্য একটি চুড়ান্ত শিক্ষানীতি তৈরি করা যায়নি। বর্তমান সরকারও গেল ৫ বছর ধরে কবির চৌধুরী কমিশন কর্তৃক প্রণীত শিক্ষানীতির চুড়ান্ত খসড়া প্রকাশ ও মতামত গ্রহণের মধ্যেই আটকে আছে। এই খসড়া নীতি নিয়েও রয়েছে দেদার বাদ বিসংবাদ ও মতদ্বৈততা। তিনটি ধারায় বিভক্ত বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বৈষম্যনির্ভর এবং বৈষম্য উৎপাদনকারী বলে মনে করছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা৷ জাতীয় শিক্ষানীতি-২০০৯ এ ২৯টি অধ্যায়ে শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও বাস্তবায়ন কৌশলের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে, সেসবের সারকথা হলো এমনঃ
খসড়া শিক্ষানীতিতে ধরে নেয়া হয়েছে যারা মাদ্রাসায় যাবে তারা আসবে গরিব পরিবার থেকে, যারা বাংলা মাধ্যম স্কুলে যাবে তারা আসবে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আর যারা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে যাবে তারা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান৷ নানা বৈষম্যের জন্য মাদ্রাসায় ইংরেজি ও বিজ্ঞান অবহেলিত। আর বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলোতেও ইংরেজি ও বিজ্ঞান আছে না থাকার মতো। পক্ষান্তরে ইংরেজি মাধ্যমে ইংরেজির যেরকম প্রাবল্য, তেমনি গণিত ও বিজ্ঞানেরও৷ ইংরেজি মাধ্যমের সিলেবাসটি বৈশ্বিক, এখানকার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয় ইংল্যান্ডের তদারকি ও নিয়মনীতি মেনে৷ এই অবস্থায় যে বৈশ্বিক মানের শিক্ষার কথা বলা হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে খুব ক্ষুদ্র সংখ্যক শিক্ষার্থী এর সুযোগ পায়৷ কাজেই হাতে গোনা কয়েকটি স্কুল ছাড়া বাকিগুলোতে পড়াশোনার মান খুবই দুর্বল, অসম্পূর্ণ, অপর্যাপ্ত এবং চুড়ান্তরকমের বৈষম্যপূর্ণ৷
শোনা যাচ্ছে, এই শিক্ষানীতিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিশারদরা যা কিছু ভালো সুপারিশ করেছিলেন তা নাকি আমলা, সচিব তথা কেরাণিরা এক কলমের খোচায় বাতিল করে দিয়ে নিজেদের মতামত জাহির করবার প্রয়াস পেয়েছেন। তো এমন শিক্ষানীতিতে ধরেই নেয়া হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হবে কেবল গরীব বা সমাজের অধীনস্ত অবহেলিতরা। তাই তাদের ইংরেজি, বিজ্ঞান বা গণিতের বিদ্যেবুদ্ধি না হলেও চলে। এর কারণ হতে পারে, মাদ্রাসা বিদ্যাধারীরা যদি ইংরেজি বা বিজ্ঞান শিখে ফেলে শেষে সচিবের গ্রামের বাড়ির মসজিদের খাদেম না হতে চায়, তাহলে সেই সচিব মহোদয়দের ঠাঁটবাট বজায় থাকবে কি করে?


আমাদের কথা সোজাসাপ্টা। দেশের সকল জনগোষ্ঠীকে ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষা না দিতে পারেন, তাই বলে সব শিক্ষার্থীর মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মানদন্ডের উপযোগিতা কেন কাছাকাছি হতে পারবে না? এভাবে ত্রিধারায় বিভাজিত শিক্ষার নামে গরীবকে আজন্মের গরীব বানানোর ফন্দিফিকিরকে আর যাই হোক নীতি বলা যাবে না। একে স্রেফ ধাপ্পাবাজি বা ছলচাতুরিপূর্ণ দুর্নীতি বলাই সমীচিন হবে।

খসড়া শিক্ষানীতির আলোকে আমরা ইতোমধ্যে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জাদুকরী প্রগলভতা দেখতে পাচ্ছি। ঢালাওভাবে সকল স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থায় যেহারে কূটকৌশলে জিপিএ-৫ এর বন্যা বইয়ে দেয়া হচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে কৃতকার্য বা অকৃতকার্যকতার শ্রেণি বিভাগ তুলে দেয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছি আমরা।

প্রশ্ন হতে পারে কূটকৌশলের ধরণটা কেমন? পড়াশোনা ও পরীক্ষা সবই হবে সৃজনশীল পদ্ধতিতে। প্রশ্ন ফাঁস হবে না, ফেসবুকেও মিলবে না। তবে দেশের সব শিক্ষকরাই পরীক্ষার আগেই আগাম জানবেন কোন বিষয়ের কী প্রশ্ন হয়েছে! পরীক্ষার হলে ছাত্রছাত্রীদেরকে যেমন খুশি লিখতে দিতে হবে, প্রয়োজনে শিক্ষককে বোর্ডে লিখে দিয়ে হলেও উত্তর বলে দিতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীর স্বাধীন লেখালেখিতে বাঁধা দিয়ে তার অনুভূতি বিনষ্ট করা যাবে না। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নেও এমন উদার হয়নি আগে কেউ জাতীয় উদার হয়ে নম্বর প্রদান করতে হবে। জিপিএ কম দিয়ে সরকারের ভাবমূর্তির বারোটা বাজানো যাবে না। মনে রাখতে হবে, আমাদের ভাবমূর্তি ও অনুভূতির পারদের এখন বড়ই চরম অবস্থা, তাকে স্থিতিশীল রাখতে যা করতে বলা হবে, তাই করতে হবে কোনো জবাবদিহিতার ধার না ধেরেই।

এহেন জিপিএ-৫ এর জোয়ারের কালে যারা বঞ্চিত হবে, তাদেরকে অভিভাবকের ধমক খেয়ে সুইসাইডে সাড়া না দিয়ে উপায় থাকে না। গেল বছর ৩০ মে এসএসসি'র ফল প্রকাশের পর এ+ না পাওয়ার অপরাধে অভিভাবকদের লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে কিশোর আরাফাত শাওন। মৃত্যুর আগে এক সুসাইড নোটে লিখে যায় তার অসহায়ত্বের কথা। জিপিএ-৫ এর রেসে পড়ে এভাবেই বিলীন হচ্ছে মানুষ ও মানবীয় বোধ। প্রকৃত অধ্যয়ন বা জ্ঞান সাধনা এখন শিক্ষা নয়, শিক্ষা হলো স্রেফ জবরদস্তিতে সংখ্যাতাত্ত্বিক বাহবা কুড়ানোর নামান্তর। যে জিপিএ বাহবারা পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় একজনও পাশের মুখ দেখে না। তাই যন্ত্রণাকর গণহারে জিপিএ-৫ নামের এমন বাজে সিস্টেম ও এর পেছনের কুশীলবদের জন্যও আমাদের আজন্মের ঘৃণাই বরাদ্দ থাকবে!

আমার একমাত্র কন্যা সুখপ্রীতা এবার পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছে। আমি বলব, ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর পাতা জিপিএ-৫ নামের নিকৃষ্ট ও ভয়াবহ ফাঁদে পা রেখেছে। মেয়েটি আমার রবীন্দ্র, নজরুল বা হাসন রাজার অন্তত: ৩০টি গান হারমোনিয়ামে তুলে সুর করে গাইতে পারে! সুন্দর ছবি আঁকে! কিন্তু নতুন ক্লাসে উঠে আমার লক্ষ্মীছানার মুখটা পর্যন্ত দেখতে পাই না। ও সকাল নয়টায় স্কুলে যায়। চারটায় স্কুল শেষে এক টিউটরের কাছে পড়েই হাজার টাকা সম্মানীতে প্রধান শিক্ষকের প্রায় বাধ্যতামূলক ক্লাসে যেতে হয় তাকে। রাত ৮টায় বাসায় ফেরে। প্রায় বাধ্যতামূলক বললাম এই কারণে যে, হে'ড স্যারের কাছে না পড়লে তার জন্য জিপিএ-৫ অবশ্যই অধরা থাকবে হয়ত। মেয়েটির না আছে ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া, না আছে বিশ্রাম। খেলাধুলার কোনো বালাই ওর নেই। আর সংগীত ও চিত্রকলা চর্চা একদম লাটে উঠেছে। কোনো প্রকার আনন্দ উল্লাস, হই হল্লা, খেলাধুলা বা সুকুমার বৃত্তি চর্চা ছাড়া মেয়েটার বিরামহীন এই অধ্যয়ন সাধনার কী মানে তা আমার বুঝে আসে না। আমার বুঝে আসবেই বা কেন, আমাদের কালে তো আর জিপিএ-৫ নামের রেসের ঘোটক ছিল না! আমার পুচকো মেয়েটার খুব সাধ ছিল, ও বাবা/মায়ের সাথে ব্যাডমিন্টন খেলবে। সেইমতো ব্যাট ও ফ্লাওয়ারও কেনা হয়েছিল। কিন্তু ওসবে এখন ধুলার আস্তরণ! জিপিএ-৫ এর রেসে থাকলে জীবনে আর কী চাই? একজন প্রাইমারি শিক্ষার্থীকে কেন কোন উদ্দেশ্যে নিজেদের শৈশবের আনন্দ উল্লাস সব মাটি করে দিয়ে পাবলিক পরীক্ষায় বসে অসাধুতা আয়ত্ত্ব করতে হবে। আবাল্যে মূল্যবোধ শিখবার কথা যে শিশুর, তারা আসলে শিখছেটা কী?

তো আমাদের এই কন্যাটির মা ও গৃহশিক্ষক নিজেও স্থানীয় একটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক! তারও হয়ত সাধ আহ্লাদ থাকে, মেয়ে আর কিছু পাক না পাক, জিপিএ-৫ নামের সংক্রামক ব্যাধিটার যেন দেখা পায়! তার ওপর জিপিএ নামের নাট্য মঞ্চের তিনিও একজন কুশীলব বৈ আর কিছু নন! গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষার সময় প্রায়ই দেখতাম, কলেজের পরহেজগার প্রিন্সিপালের সাথে বাগবিতন্ডায় লিপ্ত হয়ে মুখ কালো করে বাড়ি ফিরতে। কারণ প্রিন্সিপাল নির্লজ্জভাবে নির্দেশ দেন, পরীক্ষার হলেই পরীক্ষার্থীদেরকে প্রশ্নোত্তর সমাধান করে দিতে। আমি যদি জানতে চাই, হল পরিদর্শনে ম্যাজিস্ট্রেটরা যান না? উত্তর হয়, নাতো, ইউএনও, এসিল্যাণ্ডদের পক্ষে একটি বাড়ি একটি খামার টাইপের কোনো এক তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি যান, সে তার পাওনা বুঝে পেয়ে খুশি হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবদের রিপোর্ট করেন। ব্যাস।

জানুয়ারি মাসের দিকে প্রাইমারি স্কুলের এক শিক্ষক খালা আসলেন আমাদের এখানে বেড়াতে। ব্যাগ বোঝাই করে গোসলের সাবান নিয়ে এসেছেন। ফাইনাল পরীক্ষার পরে শিক্ষার্থীরা নাকি এসব হাতের কাজ হিসেবে জমা দিয়েছে। কেউ বলতে পারেন, আজকাল বাচ্চারা কি নিজেদের বাসায় সুগন্ধি সাবান বানানোর প্রযুক্তি আয়ত্ত্ব করে ফেলেছে? মোটের ওপর এই হলো আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার চালচিত্র।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর শিক্ষার হেরফের প্রবন্ধে বলেছেন, 'ছেলে যদি মানুষ করিতে চাই, তবে ছেলেবেলা হইতেই তাহাকে মানুষ করিতে আরম্ভ করিতে হইবে, নতুবা সে ছেলেই থাকিবে, মানুষ হইবে না। শিশুকাল হইতেই কেবল স্মরণশক্তির উপর সমস্ত ভর না দিয়া সঙ্গে সঙ্গে যথাপরিমাণে চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তির স্বাধীন পরিচালনার অবসর দিতে হইবে'।

আমাদের কোমলমতি ছেলেমেয়েদের যেখানে জিপিএ-৫ এর আশায় শিক্ষককে সাবান সোডা বা পারিশ্রমিক দিয়ে তুষ্ট রাখতে গিয়ে খেলাধুলা, হৈহুল্লোড় ভুলে ভারি ব্যাগ নিয়ে এদিক সেদিক ছুটোছুটি করতে হয়, এতে তাদের যথাপরিমাণে চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটানো আদৌ কি সম্ভব? এখন অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সব চিন্তা শিক্ষামন্ত্রী ও তাঁর দেশব্যাপী ছড়ানো ছিটানো স্টাফদের। শিক্ষার্থীরা শুধু অর্থ ও উপঢৌকনের ডলি সাজিয়ে শিক্ষকের পেছনে দৌঁড়াবে আর শিক্ষক ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা অতীব সৃজনশীল পদ্ধতিতে জিপিএ-৫ জুটিয়ে দেবেন। মিথ্যা ও অসততার ওপর ভর দিয়ে যে নতুন প্রজন্ম আমরা তৈরি করছি, সেই তারা এই দেশকে দুর্নীতির ১৩ নাম্বারে না রেখে নিশ্চিতার্থেই চ্যাম্পিয়ন করে তুলতে ভূমিকা রাখবে!

হীরকরাজ্য টাইপের এমন শিক্ষায় কোনো আনন্দ নাই, বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ নাই, স্বাধীন পাঠ নাই, শখ নাই, প্রকৃত জ্ঞান চর্চার বালাই নাই। তো এমন রোবটিক জিপিএ প্রজন্ম দিয়ে আসলে আমরা কি করব? প্রতিবার পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সকাশে শিক্ষামন্ত্রীর যে তৃপ্তির ঢেঁকুর, তা আমাদেরকে বিকারিক মানসিক বৈকল্যতায় ধাবিত করে। দেখাদেখি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যতোই হাসুন, প্রধানমন্ত্রী হতে গিয়ে এমন জিপিএ'র দ্বারস্থ হতে হয়নি তাঁকে। তবে কেন, আমজনতার কপালে জিপিএ নামের এই দুর্মর অন্ধকার শনির দশা?

আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রোজভেল্ট বলতেন, 'Democracy cannot succeed unless those who express their choice are prepared to choose wisely. The real safeguard of democracy, therefore, is education'.
নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া ঘরে বাইরে নারীর সত্যিকারের মুক্তির ক্ষেত্রে প্রধানতম অবলম্বন হিসেবে শিক্ষার কথাই বলেছিলেন। তাহলে সেই শিক্ষাব্যবস্থাকেই কেন লেজেগোবরে অবস্থা করে তোলা হলো। এর দায় আসলে কার? শিক্ষা ধ্বংসের ডামাঢোল বাজিয়েই কি তবে আমরা আমাদের এবারের একুশের স্বাধীন চেতনাকে স্মরণ করব। স্বআরোপিত অজ্ঞানতায় নিবিষ্ট এই ঘুমন্ত জাতিকে কি মহান একুশ ক্ষমা করবে? দেশ ও ভাষার জন্য নিঃশেষে প্রাণ দেয়া রফিক, সালাম, জব্বার ও বরকতের বায়ান্ন কি আমাদের প্রাণভরে ভালোবাসবে?

একুশের মাসে শিক্ষা নিয়ে বিভাজন, বৈষম্য ও বঞ্চনার কালে আমাদের কিশোরগঞ্জে জন্ম নেয়া বাঙালি সুবর্ণপুত্র সুকুমার রায়ের 'হিংসুটিদের গান' ছড়াটি আরেকবার মনে করিয়ে দেই।
আমরা ভালো লক্ষ্মী সবাই, তোমরা ভারি বিশ্রী,
তোমরা খাবে নিমের পাচন, আমরা খাব মিশ্রী।
আমরা পাব খেলনা পুতুল, আমরা পাব চমচম,
তোমরা ত তা পাচ্ছ না কেউ, পেলে ও পাবে কম কম।

লেখকঃ সংবাদকর্মী, মাছরাঙা টেলিভিশন
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
facebook.com/fardeen.ferdous.bd
twitter.com/fardeenferdous