বেদে সম্প্রদায়!

ফারদিন ফেরদৌসফারদিন ফেরদৌস
Published : 30 March 2016, 00:30 AM
Updated : 30 March 2016, 00:30 AM

আমাদের নিকট অতীতের বাংলা মুভিতে চমৎকার দু'টি গান আছে। পদ্মাবতী বেদেনি হবে নাকি ঘরণী একথা ভাবতে আমার বুক কাপে/ সুখ লাগে অথবা বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে। সিনেমায় বেদের মেয়ের জন্য বুকের কাপন বা কথা দেওয়ার ব্যাপার স্যাপার থাকলেও বাস্তবতা একেবারেই বিপরীত।

বেদে বা বোহেমিয়ান (Bohemian) সম্প্রদায় আমাদের মতোই রক্ত মাংসের মানুষ। বাস করেন আমাদের খুব কাছিকাছিই নৌকায়, কোনো নদীর পাড় কিংবা পতিত কোনো ভূমিতে। যাদের ঘর বাড়ি আশ্রয় থাকতে নেই তাদের আসলে সবখানটাই নিজের বাড়িঘর। এখনও ওদের জীবন চলে সাপ খেলা দেখিয়ে, ঝাড়ফুক করে, শিঙা লাগিয়ে বা তাবিজ কবজ বিক্রি করে। তবে আমরা দেদারছে জিপিএ-৫ পেয়ে বেশি শিক্ষিত হয়ে পড়ায় ওদের বুজরুকি ব্যবসায় আগের মতো ধার খুঁজে পাই না কেউ।

ওদের মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ক্রমশ পুরুষতান্ত্রিকতায় রূপ পরিগ্রহ করছে। অনেকেই পেশা বদল করে রোজভিত্তিক শ্রমজীবি সাজবার একটা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আমাদের আধুনিকতার ঠেলায় বদলের পালায় মানিয়ে নেয়াটা ওদের জন্য ঠিক সহজ হচ্ছে না। এখনও ভোর হলে বেদে নারীরা ঝোলায় তাদের ব্যবসার জিনিসপত্র আলতা, ফিতা, টিপ বা কাজল নিয়ে বের হয়। চলার পথে ব্যবসা আর সন্তানের যত্ন দুইই করে ওরা। বেদে নারী নিজেকে অন্যের দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে কোমরে বিছা, কপালে বড় টিপ পরে সাজগোজ করে মুখে খিলি পান দিয়ে নিজস্ব ছন্দে হাঁটে; কথা কয়।

ওদের মুখ থেকে হাসি সরে না। মানুষের সাথে মিশবার ক্ষমতা আমাদের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয় ওদের। অথচ বেদেদের যাযাবর জীবনে নেই কোনো বিদ্যালয়, নেই চিকিৎসালয়। নেই মাদ্রাসা, মসজিদ বা মন্দির। ওদের জন্য কোনো এরশাদ রাষ্ট্রধর্মও রাখেনি। তবু ওরাই বলাৎকার, ধর্ষণ, খুন, জখম, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতিমুক্ত স্বাধীন জীবনযাপন করে যায়। কোনো অশান্তি ওদের স্পর্শ করে না। অতি অল্পতেই তুষ্ট ওরা। ওদের জন্য শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সহমর্মিতা।

ছবিঃ কড্ডা, গাজীপুর।