বৃক্ষবন্দনা!

ফারদিন ফেরদৌসফারদিন ফেরদৌস
Published : 19 April 2016, 09:35 PM
Updated : 19 April 2016, 09:35 PM


বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু বহু সাধনায় বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, গাছেরও প্রাণ আছে। আমরাও তা নি:সঙ্কোচে মেনে নিয়েছি। কিন্তু কখনও কি প্রাণের প্রমাণ সত্যি পেয়েছি?
আমাদের বাড়ি 'সুখেরছায়া'য় মা ও বউ'র যৌথপ্রয়াসে ক'খানা কুমড়ো গাছ তার সবুজ পাতা আর লতানো ডগা নিয়ে বেড়ে উঠেছে। কিন্তু মাচাঙ আঁকড়ে ধরতে পারছিল না ওরা, তাই বাতাসে হেলছিল দুলছিল। আজ সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে বাসার সবাই মিলে বাঁশ ও রশি দিয়ে জাঙ্গলা বানিয়ে দিলাম। আমাদের এলাকায় মাচাঙকে জাঙ্গলা'ই বলে।
যাহোক ঘন্টা দুই পর রাত ৮টার দিকে টর্চ নিয়ে দেখতে গেলাম আমাদের কুমড়ো গাছ সোনার মাচাঙ পছন্দ হয়েছে কিনা?
অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, বেশ কয়েকটি জায়গায় 'ও' তাঁর আকড়শি হাত দিয়ে রশি আঁকড়ে ধরে আছে। দেখে মনে হলো, রশি তাঁর কত যে আপন, কত চেনা! এইটুকু সময়েই গাছেদের মাচাঙকে ভালোবাসবার বাড়াবাড়ি দেখে বিস্ময়ে বিমূঢ় না হয়ে পাড়া গেল না!


এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ছবিতে ধরে রাখবার লোভটাও সংবরণ করতে পারলাম না। আমার গাছেদের হস্ত যেন মমতায় ধরে আছে আমাদেরই ভালোবাসার প্রাণ। প্রাণে প্রাণ মিলে সবুজ প্রাণের জয় হোক।
উদ্ভিদের প্রাণ জাগানিয়া বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু তাঁর আবিষ্কৃত যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ ও উদ্ভিদের দেহের উত্তেজনার বেগ নিরূপক সমতল তরুলিপি যন্ত্র রিজোনাস্ট রেকর্ডারের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে যেমনটি প্রমাণ করেছিলেন, উদ্ভিদ ও প্রাণিজীবনের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। এক কথায় উদ্ভিদজীবন প্রাণিজীবনের ছায়ামাত্র। জগদীশ আপনার কথা চরম সত্য বলেই মানি।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'বৃক্ষবন্দনা' কবিতায় যথার্থ বলেছেন,
অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান
প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃক্ষ, আদিপ্রাণ!

যেই প্রাণের সদাশয় প্রশ্বাসে বেঁচে থাকে আমাদের প্রতিটি শ্বাস সেই আদিপ্রাণের বন্দনাতেই আমার আজকের 'কুমড়ো' সন্ধ্যা নবআনন্দে উদ্ভাসিত হলো!
————————-
ফারদিন ফেরদৌস
সুখেরছায়া
০৬ বৈশাখ ১৪২৩।১৯ এপ্রিল ২০১৬
twitter.com/fardeenferdous
facebook.com/fardeen.ferdous.bd