আপনি ভালো তো জগৎ ভালো!

ফারদিন ফেরদৌসফারদিন ফেরদৌস
Published : 1 July 2017, 05:06 AM
Updated : 1 July 2017, 05:06 AM

.

হোটেলে অবৈধ ক্রিয়াকর্মে লিপ্ত থাকায় বেশ কয়েকজনকে ধরে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। সেখানে আটককৃত এক নারী জানান, তার সাত মাসের ছেলে সন্তানকে বাসার কাজের বুয়ার কাছে রেখে তিনি এই প্রথমবার এখানে এসেছেন। তাকে জেলে পাঠালে ক্ষুধার যন্ত্রণায় তার শিশুসন্তান মারা যেতে পারে এবং তার সংসার ভেঙে যেতে পারে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, যারা ব্যভিচারে লিপ্ত তাদের প্রতি কোনো ধরনের অনুকম্পা দেখানো হবে না।
…………

আহারে! মানুষকে তার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত এতোটা লজ্জার ভিতর দিয়ে করতে হয়। এরচেয়ে যে মরণ ঢের ভালো। তবে রাষ্ট্র কিন্তু পারত এসব বেপথো মানুষকে লজ্জিত বা বিব্রত না করেও কঠোর সাজার মধ্য দিয়ে শোধরাতে! কিন্তু রাষ্ট্রের দরকার তাৎক্ষণিক বাহবা আর মিডিয়ার দরকার খবরের কাটতি। কাজেই লজ্জিত হোকগে জাতির বিবেক!

আশ্চর্য হলেও সত্যি, রাজধানীর অভিজাত পাড়া থেকে মফস্বল শহর, সারাদেশের প্রায় হোটেলেই মহলবিশেষের আনুকূল্যে বছরজুড়েই নির্বিঘ্নে চলে যৌনব্যবসা। রোজা আসলে কিছু অভিযান পরিচালিত হয়, সেখানে নিরীহ ও গোবেচারাটাইপ কিছু মানুষ ধরা পড়ে মিডিয়ার কল্যাণে চরম অসম্মানিত হন। সমাজের এই অনাচার যদি চিরতরে নির্মূল করবার মতো সক্ষমতা কারো থাকত তবে শরীরবৃত্তীয় তাড়নায় পড়া মানুষগুলোকে এভাবে বিব্রত হতে হতো না। তারা ধৈর্যধারণের পদ্ধতিটাই শিখে নিত।

যৌনতাড়না মানুষের সহজাত আবেগ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ খাবারের মতোই এর চাহিদা অনুভব করেন। যদিও এটা ছাড়াও মানুষ দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে। এটাও সত্যি যে, সবারই স্বীকৃত স্বামী-স্ত্রী বা পার্টনার থাকবে না। তাহলে উপায়? আমরা জানি, হোটেলগুলোতে কী হচ্ছে! দামি রিসোর্টগুলোতে কী হচ্ছে! সমঝোতায় কি না হয়, যদিও তা চরম অনৈতিক। কিন্তু নীতিটা কি এই মুসলমানের দেশে আছে?

সমঝোতায় দুইজন মিলন্মোন্মুখ মানুষকে বিব্রত করবার আগে ভাবুন তো সারাবছর এসব হোটেলে এমনসব অপকর্ম চলে কি করে? যে অসৎ সাংবাদিক, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-পাতিনেতা, দায়িত্ববান অফিশিয়ালস, পুলিশ সদস্য হোটেলগুলো থেকে মাসিক বখরা পায় তাদেরকে আগে বিব্রত করুন, নির্মূল করুন। তারপর ধরুন হোটেল মালিককে। ধরুন কাপুরুষ দালাল ও খদ্দেরকে। বাধ্য হয়ে যৌনকর্মে নাম লেখানো অসহায় নারীদের পুনর্বাসিত করুন। দেখবেন, আপনিই এই ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে।

জানি, কিছুই হবে না। এইদেশ থেকে পাপ দূরীভূত হবে না। চোখের সামনেই দেখি ঘরে সুন্দরী বউ রেখেও কাপুরুষেরা বহুগামিতায় লিপ্ত হয়। আসল পাপীর খবর কেউ জানবে না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পাপীতাপীদের পাপটাই ফলাও করে প্রচার করে বাহবা কুড়াব আমরা। বাঙালি বড় অমানবিক, বড় হিপোক্রেট, বড় স্বার্থপর আর বড় বেহায়া।

মনে রাখা ভালো, আপনি ভালো তো জগৎ ভালো!

পাদটীকা: বাংলাদেশের সংবিধানে গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সংবিধান মান্যতার ব্যাপারে কারও কোনো সদিচ্ছা আছে এমনটা দেখা যায় না!

ফারদিন ফেরদৌস
সুখেরছায়া
২৯ জুন ২০১৭