জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, নিজেকে শোধরাতে হবে

ফারদিন ফেরদৌসফারদিন ফেরদৌস
Published : 17 July 2017, 08:00 AM
Updated : 17 July 2017, 08:00 AM


১.
যেকোনো ন্যায্য ইস্যুতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করবে এটা তাদের অধিকার। কিন্তু রাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা দিয়ে লেখাপড়ার পথ রুদ্ধ করে দেবে, এটা কেমনধারার কথা? আজকে যে শিক্ষার্থীকে অনশনের পথে ঠেলে দিয়ে খুব সাজা দিতে পারছেন বলে দেশের প্রথম নারী উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম তৃপ্তিকর ঢেকুর তুলছেন, তিনি কি মনে করেন না, তাঁর আজকের আনন্দকর নি:শ্বাস-প্রশ্বাসটা পৃথিবীতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে আসেনি? যে সন্তানেরা আজকে অভুক্ত থেকে স্নায়ুক্ষয়ী প্রতিবাদ করছে, তারাই আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবেন, বিচারক হবেন, দেশ চালাবেন। কিন্তু মিস্টার প্রহসনিক প্রশাসন আপনি তো ইতোমধ্যে যা দেয়ার দিয়ে ফেলেছেন; এবার দয়া করে নিজেদের নির্বুদ্ধিতায় ভরা একগুঁয়েমির পথ ছেড়ে দিয়ে এই অবুঝ-কোমল সন্তানদেরকে জাহাঙ্গীরনগরের খোলা বাতাসে নি:শ্বাস গ্রহণের সুযোগ দিয়ে মানুষ হওয়ার পথটা সুগম করুন। নইলে ইতিহাসের কাছে কখনোই ছাড় পাবেন না, ক্ষমা পাবেন না!

২.
আপনারা প্রথম অন্যায় করেছেন, নারী শিক্ষার্থীসহ নিজের সন্তানদেরকে মধ্যরাতে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে। দ্বিতীয় অন্যায় করলেন, আমরণ অনশনের মুখের ওপর সিন্ডিকেট করে বলে দিয়ে যে, আইন তার আপন গতিতে চলবে! কতোটা বিস্ময়কর অবিবেচক আপনারা? এমনটা এর আগে দেখেনি কেউ।
দেশেতো হাজারো অন্যায় অপরাধ হচ্ছে, ক'টার বিরুদ্ধে মামলা হয়, বিচার হয়?
কালোবাজারি, নকল ওষুধ তৈরি, বিষযুক্ত খাবার উৎপাদন বা বিপণন, চুরি-চামারি, খুন-খারাবি, লুটপাট, ধর্ষণ, ঘুষ বাণিজ্য, লাগামহীন দুর্নীতি, অবৈধ উপার্জনে মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় বাড়ি নির্মাণ কিংবা সুইসব্যাংকে যথেচ্ছাচারে অর্থপাচারসহ ইত্যাকার নানা অপরাধ প্রবণতায় জর্জরিত বাংলাদেশ। আজকাল দেখা যাচ্ছে, অন্ধকারাচ্ছন্ন বঙ্গসমাজে নিজের অসহায় কন্যারা পর্যন্ত পাপিষ্ঠ কাপুরুষদের লোলুপতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

৩.
এমন বাস্তবতায় গভীর প্রশ্ন? আমাদের জাহাঙ্গীরনগরিয়ান তরুণ ভাই ও বোনেরা কি উপরোল্লেখিত কোনো একটি অপরাধের চেয়ে বেশি মাত্রায় অন্যায় দুষ্ট? আমাদের সমস্বর উত্তর হবে না!
তাহলে এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ফালতু মামলা জিইয়ে রেখে কি প্রমাণ করতে চান সো কল্ড গাড়ল প্রশাসন? আগে নিজেকে শোধরান; পরে নাহয় শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দেবেন, কেমন? নিজের শরীরে পিপীলিকাবৎ পাখা গজিয়ে ওঠতে দেবেন না প্লিজ। আপনাদের নিজেদেরই কি আত্মঘাতী হওয়া সাজে?

বিবেকটাকে ঘুম থেকে জাগান, নির্বিকার চেতনাকে পথে ফেরান। অবিলম্বে হয়রানিমূলক অবৈধ মামলা প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরিয়ে নিন, নিতে হবে!
……………
পাদটীকাঃ গত ২৬ মে ভোরে ক্যাম্পাস-সংলগ্ন সিঅ্যান্ডবি এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নাজমুল হাসান ও মেহেদি হাসান নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী মারা যান। অই শিক্ষার্থীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, ঘাতক চালকের শাস্তি ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে পরদিন ২৭ মে বেলা পৌনে ১১টা থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিকেলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর করেন। এ সময় কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ৫৪ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষকদের একটি অংশ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন।
১৫ জুলাই শনিবার শহীদ মিনারের পাদদেশে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন ইংরেজি বিভাগের সরদার জাহিদুল ইসলাম, তাহমিনা জামান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের পূজা বিশ্বাস। পরে অন্য শিক্ষার্থীরাও তাদের সাথে অংশ নেন। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করানোর মতো কোনো দায়িত্ববোধ না দেখিয়ে পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি সিন্ডিকেট সভা ক'রে, বিচার ও তদন্তাধীন বিষয়কে প্রভাবিত করা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয় এমন কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়!

ফারদিন ফেরদৌস
সুখেরছায়া
১৭ জুলাই ২০১৭।