সাংবাদিকতার ক খ গ!

ফারদিন ফেরদৌসফারদিন ফেরদৌস
Published : 10 Feb 2018, 02:07 AM
Updated : 10 Feb 2018, 02:07 AM


এইকালের সাংবাদিকতাও একটা বড় বিনোদন! জেলে খালেদা জিয়া পেপের জুসে কম চিনি খেয়েছেন, শীতের মধ্যেও রুমে এসির ব্যবস্থা করা আছে, ডে কেয়ার সেন্টারে শিফট করার আগে জেলারের অফিস কক্ষে অফিশিয়াল সুবিধা পাচ্ছেন, বিটিভির অ্যানালগিতার হাত থেকে বাঁচতে ডিজিটাল সরকার কেবল লাইনের ব্যবস্থা করেছে, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমার জেল না হওয়া সত্ত্বেও তাকে জেলের ভিতর দিন কাটাতে হচ্ছে ইত্যাদি হচ্ছে সংবাদপত্রের নিউজ! আজকের দিনে চলচ্চিত্রাভিনেতা কমেডিয়ান রবিউলের ফোকলা দেঁতো হাসিটা দারুণ মিস করছি!

একটা বড় দলের বর্ষিয়ান নেত্রী এবং এককালের জাদরেল দেশশাসক মাত্র দুইকোটি টাকা নয়ছয়ের দায়ে জেলে গেলেন এতে ওই দলের সাধারণ কর্মীদের মনের কী অবস্থা তা নিয়ে কোনো সংবাদ নেই! যতটুকু বুঝি, ওই দলের নেতাদের অশ্রুজল সবটাই কুম্ভিরাশ্রু! তা না হলে নেত্রী জেলে যাওয়ার ৯ ঘন্টার মধ্যে তাঁকে দলীয় প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি দিতে পারতেন না! খালেদা জিয়া আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং জেলে গেছেন। আমাদের বিবেচনায় তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তাঁর যদি পাপ থেকে থাকে তার নিদান হচ্ছে। দোষী সাব্যস্ত পলাতক নেতার চেয়ে খালেদার নৈতিকমান হাজারগুণ শ্রেষ্ঠ। অথচ তিনি দলীয় প্রধানের পদ থেকে দায়িত্বচ্যুত হলেন। এসব নিয়ে তথাকথিত নিরপেক্ষ সাংবাদিকরা নিউজ করেন না!

এইযে খালেদা জিয়া জেলে গেলেন, এখন আগামী নির্বাচনী ময়দানে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বীটা কে? সেয়ানে সেয়ানে যুদ্ধ না হলে যুদ্ধের মজা কী? বিশেষ দূতের জাপা গৃহপালিত। হাজী জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি কিংবা কমিউনিস্ট পার্টিও আওয়ামী লীগের গোয়ালের বলদ। তাহলে ভোটটা হবে কার সাথে? হেফাজত বলে মৌলভীদের একটা দল আছে তারাও বলে দিয়েছে এককালের সেক্যুলার আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় ধার্মিক আর নেই! বাল্যকালে বিজ্ঞান বইয়ে পড়তাম, 'এসো নিজে করি!' আগামী নির্বাচন বা রাজনীতি তো নিজে করা ছাড়া আর কিছু দেখি না। এরমধ্যে যদি সহৃদয়তা দেখিয়ে সরকারপন্থিদের কেউ বিএনপির গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নেন তাহলে ষোলোকলা পূর্ণ।

সরকারি রাজনীতির পথে কোনো কণ্টকবুড়ি আর কাঁটা বিছাতে আসবেন না। এসব নিয়ে 'নুন খেয়ে গুণ গাওয়া' সাংবাদিকদের খবর করতে দেখলাম না!

বিবেক পুড়ে কুৎসিত ছাই হওয়া এদেশীয় কিছু দলকানা প্রবাসী বৃটেনে বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা চালিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পোর্ট্রেটের ওপর সব মনের জ্বালা মেটালেন। এতে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর কিচ্ছুটি আসে যায়নি। কিন্তু হামলারু এইসব মানুষের হাতে যদি দেশের ক্ষমতা যায় ভাত পুড়ে ওদের পেটে পিরামিড গড়ে দিলেও ওরা মানচিত্র গিলে খাবেই। আর এই খাদকদের সাথে সময় খারাপ দেখে খালেদার অবনমনে ভূমিকা রাখাদের হয়ত আছে অনভিপ্রেত যুথবদ্ধতা! এইসব নিয়ে আমাগো চেতনাবাজ সাংবাদিকদের মুখে খই তো ফুটলই না, রাওটাও হলো না!

আর কতকাল পেপের_জুসের_চিনি নিয়ে নিউজ পয়দা করবেন সাংবাদিক ভাইয়েরা? এইবার অন্তত ঘুম থেকে জাগুন। দলদাসত্ব ছেড়ে অধরা ডেমোক্রেসি'র কথা বলুন।

……………………………
ফারদিন ফেরদৌস: লেখক ও সাংবাদিক
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮