কোথায় চলেছে প্রিয় স্বদেশ?

ফারদিন ফেরদৌসফারদিন ফেরদৌস
Published : 2 March 2018, 02:07 AM
Updated : 2 March 2018, 02:07 AM

গ্রাফ সৌজন্য: দ্য ডেইলি স্টার

আমার দেশের চেয়ে শ্রেষ্ঠ দেশ পৃথিবীর আর কোথাও নেই- এটা আমরা গর্ব করে চিৎকার করে বলে যাব। কিন্তু আমার এমন সোনার দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন প্রিয় শাসক ভাই সাহেবরা?

খারাপ রাস্তাঘাটের দিক দিয়ে আমরা এশিয়ায় দ্বিতীয় প্লেস করেছি। কিন্তু আমরা গাজীপুরবাসী এবং গাজীপুরের ওপর দিয়ে যারা রাজধানীতে যাতায়াত করি তারা জানি বিগত দু-তিন বছর ধরে রাস্তার কী জঘন্য পেরেশানি! আমরা প্রথম হলাম না কিভাবে এটা সত্যিই বিস্ময়কর!

♦ গাজীপুরে সেনাবাহিনী নির্মিত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ৩০ কিলোমিটার ছাড়া বাকি সব রাস্তা অচল ও বিপর্যস্ত। জানি সারাদেশের অবস্থাও তথৈবচ।

♦ মাত্র ২০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে কখনো কখনো সময় লাগে ৪-৫ ঘন্টা!

♦ যানবাহন চালক ও কন্ডাকটরদের সাথে প্রায় সময়ই যাত্রীরা বচসায় লিপ্ত হন- তারা অতিরিক্ত ভাড়া রাখেন বলে।

♦ গাড়িওয়ালারা বলেন তারা নিরুপায়। কারণ যানজটের জটিলতায় পড়ে তিনগুণ তেল বা গ্যাস খরচ এবং খানাখন্দ সামাল দিতে গিয়ে রোজই গাড়ির পাত্তি ভেঙ্গে যাওয়া, টায়ার/টিউব নষ্ট হওয়ার ধকল তারা কুলিয়ে উঠতে পারেন না।

♦ রাস্তায় পাবলিক পরিবহনের একটা আকাল পড়ে গেছে। ভাঙ্গা রাস্তায় চালকরা আর কত গাড়ি চালাতে পারেন? তাহলে ভাবুন তো, মানুষ তার নিত্য প্রয়োজনে একস্থান থেকে আরেক স্থানে কিভাবে গমনাগমন করেন? মহাসড়কের ভরসা এখন আকাশ্চুম্বি ভাড়ার ব্যাটারিচালিত রিকশা।

♦ সড়কের দুর্ভোগে সবচে বেশি নাকাল হন কর্মজীবী নারী, স্কুলগামী শিক্ষার্থী, বয়োবৃদ্ধ, শিশু ও অসুস্থরা।

♦ আমাদের এদিকে সড়ক সম্প্রসারণ, ফ্লাইওভার নির্মাণ, রেল স্টেশন নির্মাণ চলছে তো চলছেই। এগুলো কবে শেষ হবে খোদা ছাড়া কেউ জানেন না।

♦  বাংলাদেশে একজন তর্কবাগীশ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আছেন। তিনি কথার মায়াজালে ভজিয়ে দিয়ে বলে যান, জন্ম যন্ত্রণার কষ্ট মানুষকে সহ্য করতেই হবে। কিন্তু কথায় আর কতদিন চিড়ে ভেজাবেন প্রিয় মন্ত্রী মহোদয়? আমাদের এখানে নাহয় জন্মযন্ত্রণা, সারাদেশেও কি একই যন্ত্রণা?

♦ এক কথায় মহাসড়কে ভজঘট, ধুলাবালি ও গণপরিবহনের নৈরাজ্য আমরা আর নিতে পারছি না। কাজের উদ্দেশ্যে সড়কে নামলেই মনে হয় এর চেয়ে মহান রাব্বুল আলামিন মরণ দিলেও তৃপ্ত হতাম!

আমরা কথায় কথায় বিভিন্ন প্রসঙ্গে আমাদের জাতশত্রু পাকিস্তানের উদাহরণ টানি। প্রায়ই বলি পাকিস্তান একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র, আর আমরা উন্নয়ন ও সফলতার জোয়ারাক্রান্ত দেশ। কিন্তু ক'দিন আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত দুর্নীতিগ্রস্থ রাষ্ট্রের র‍্যাংকিংয়ে পাকিস্তান আমাদেরকে হারিয়ে দিয়ে ভালো অবস্থানে আছে। আবার আজ দেখলাম ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম প্রকাশিত রোড কোয়ালিটির র‍্যাংকিংয়েও পাকিস্তানের তুলনায় আমরা তলানিতে আছি! কী বিস্ময়কর ও অভাবনীয় অবনমন আমাদের? আমরা যে হেরে যাচ্ছি সাধু, কিন্তু মুখে তো হটছি না!

মহান স্বাধীনতার মাসের শুরু হলো। আমরা তো এভাবে হারতে চাই না!

ফারদিন ফেরদৌস: লেখক ও সাংবাদিক