আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আমি তখন বেঁচে আছি না মরে গিয়েছিলাম তা বলতে পারব না। আমার শরীরটা ভীষণভবে কাঁপছিল। বুকটা দুরুদুরু করে কাঁপতেছিল আর কেমন যেন একটা ভয় আমি অনুভব করতেছিলাম। তামিম ইকবাল যখন ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিল, আমি ভেবেছিলাম আমি বোধ হয় আর বাড়ি ফিরে যেতে পারব না। সেই মুহুর্তে আমার শরীরে কোন জোর ছিল না। খেলা দেখতেছিলাম মনে হয়েছিল আমার শরীরের নীচের অংশটা বোধ হয় নেই। মানুষ মারা যাওয়ার মুহুর্তে কী রকম অনুভব করে বা সেই মুহুর্তে কী অনুভুতি আসে তা আমার জানা নেই। তবে সেই শেষ মুহুর্তে আমার সে রকমই মনে হয়েছিল। আমার মতো অবস্থা বোধ হয় সেই মুহুর্তে আপনাদেরও হয়েছিল তাই না। হবেই না বা কেন ? যেখানে সারা দেশ তখন পাগল প্রায় অবস্থা। প্রতিটি মানুষের মুখে তখন একটাই কথা শুধুমাত্র একটা বিজয় আমাদের লাগবেই। আর ঠিক তখনই রুবেলের দুর্দান্ত বলিংয়ের দাপটে ক্রিকেট বিশ্বের অবহেলিত বাংলাদেশের সেই দুর্জয়ী দামাল ছেলেরা এনে দিল বাংলাদেশের ঘরে ঘরে জয়, এনে দিল বাংলার ঘরে-ঘরে, অন্তরে-অন্তরে আনন্দের উল্লাস। মাতাল হয়ে উঠল সারা দেশ গোটা জাতি।
যেখানে দীর্ঘদিন ধরে দেশের মানুষ রাজনীতিরি খেলাঘরে বন্দী, যেখানে যন্ত্রণার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি মানুষ। সেখানে এতবড় একটা আনন্দ কিভাবে অন্তরে চেপে ধরে রাখতে পারে। তারা ফেটে পড়ল আনন্দ উল্লাসে। নেমে পড়ল রাস্তায়, ভুলে গেল অতীতের সব দুঃখ যন্ত্রণা, ভুলে গেল যত হরতাল অবরোধ। মনে করল না পেট্রোল বোমার কথা। তখন শুধু তাদের মনে একটাই কথা আমরা জয় পেলাম। আর এই জয়টাই আমাদেরকে নিয়ে যাবে আরো অনেক দুর। শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত সবাই বলতেছিল আমরা বাঙালি জাতি বিশ্বের বিখ্যাত ক্রিকেট আসরে শুধুমাত্র একটা আঁচড় কাটলাম মাত্র। আমাদেরকে আগামীতে ক্রিকেট বিশ্বের বড় বড় আসরগুলোতে এমন দাগ কাটতে হবে, এমন চিহ্ন আঁকতে হবে যাতে করে ক্রিকেট বিশ্ব আমাদেরকে আর ভুলতে না পারে, ক্রিকেট বিশ্ব যেন চিরদিন মনে রাখতে পারে বাঙালি জাতির কথা, বাঙালির সেই দামাল ছেলেদের কথা।