রেল বিভাগের মৃত্যুকূপ এবং ওয়াসার ফটো শুটিং!

ফাতেহুল বারী
Published : 29 Dec 2014, 07:25 AM
Updated : 29 Dec 2014, 07:25 AM

বাংলাদেশে রেলওয়ে কতৃক প্রস্তত করে রাখা মৃত্যুকূপে শিশু জিহাদ পড়ে যাবার পর তার ছোট্ট নিথর দেহ আবার ওপরে ওঠে আসার মাঝখানের ২৩ ঘণ্টায় তাকে জীবিত উদ্ধারের জন্য এ রাষ্ট্র প্রকৃত কোন Rescue Operation চালিয়ে ছিল কি? ফায়ার সার্ভিস এসেই মার টান হেঁইও করে কূপের ভিতর থাকা ২ ইঞ্চি পাইপটি তুলে ফেলল, পাইপটি তুলে ফেললে কূপের গভীর তলায় পড়ে থাকা শিশুটির জীবন আরও বিপদের মধ্যে পড়তে পারে এমনটি তারা একবারও ভাবলেন না। এমনও হতে পারে শিশুটি পাইপটি ধরে কোনভাবে তার মাথাটি পানির উপর ভাসিয়ে রেখেছিল, তখনো বেঁচে ছিল সে। পাইপটি তুলে নেয়া মাত্রই লাইফ সাপোর্টটি হারিয়ে পানিতে ডুবে যায় সে এবং মারা যায়। এই দমকল, মন্ত্রি ও বিভিন্ন বিভাগের বড় কর্তারা যা করেছেন তাকে কোনভাবেই Rescue Operation বলা যাবে না।তারা শুধু জানার চেষ্টা করেছেন, শিশু জিহাদ কূপটিতে আদৌ পড়েছে কি না ! মায়ের আর্তনাদ, বাবার আহাজারি, যারা কূপের ভিতর শিশুটির আর্তকণ্ঠ শুনেছেন তাদের সাক্ষ্য কোনোকিছুই তারা বিশ্বাস করছিলেন না !

সরু কূপটির শতশত ফুট নিচে পড়ে গিয়ে আহত শিশুটি হিমঠাণ্ডায় ব্যথায় কাতরাচ্ছে, মৃত্যু দ্রুত তার দিকে ধেয়ে আসছে, প্রতিটি মুহূর্তের মূল্য হচ্ছে তার জীবন ।কিন্ত কি আশ্চর্য ! এ বিষয়টিকে মন্ত্রি ও কর্তারা মোটেও আমলে নিলেন না।তারা ব্যস্ত হলেন এটা জানতে শিশুটি আদৌ কূপের মধ্যে পড়েছে কি না ! এ প্রক্রিয়ায় ওনারা কোথা থেকে আনকোরা নতুন এক ক্যামেরা এনে হাজির করলেন, সেটাকে আনপ্যাক করলেন, আসেম্বেল করলেন, ক্যামনে চালায় সেটা শিখলেন, তারপর কূপের ভিতর পাঠালেন। সেটা একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে গেল, আবার চালু করলেন , তারপর আবার পাঠালেন। এদিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে, ওনারা নির্বিকার! আগে দেখতে হবে কুপের  ভিতর কেউ আচ্ছে কি না! তারপর প্ল্যান করা যাবে কিভাবে উদ্ধার করা যায়! এদিকে কুপের গভীর তলায় আহত, আতঙ্কিত শিশুটি সাহায্যের গভীর প্রতীক্ষায় প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।

এটাকে কি সত্যিকার উদ্ধার অভিযান বলা যাবে? কোনোভাবেই না। সত্যিকার উদ্ধার প্রচেষ্টা সেটা ছিল, যখন বশির সাহেব শিশুটি আদৌ কূপের মধ্যে পড়েছে কি না এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ না করে দ্বিধাহীন চিত্তে কোমরে রশি বেঁধে সে কূপের মধ্যে নেমে যাচ্ছিলেন তাকে উদ্ধারের জন্য এবং উপস্থিত সাধারন তরুণরা নিজেদের উদ্ভাবিত 'ক্যাচার' দিয়ে শিশুটিকে তুলে আনার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন – তাদের কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়নি।মন্ত্রি ও কর্তারা উদ্ধার অভিযান নয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহামুলাবান সময় নষ্ট করে একটা Photo Shooting করেছিলেন মাত্র।তাদের অসার এ যন্ত্রটি তাদের জানালো কুপের ভিতর কেউ নাই। ব্যস তারা হাত গুটিয়ে কঠিন কণ্ঠে  ঘোষণা করলেন কূপের ভিতর কেউ নাই, তারপর জনগণের পয়সাই কেনা দামি গাড়িতে চড়ে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় যে যার বাড়িঘরে চলে গেলেন।আর বিপন্ন শিশুটি পড়ে রইল কূপের গভীর তলায়।কিন্ত সাধারণ তরুণরা হাল ছাড়েননি, তারাই শেষ পর্যন্ত শিশুটিকে কূপ থেকে তুলে আনলেন, কারণ তাদের বুকে শিশুটির জন্য গভীর ভালোবাসা ছিল, মন্ত্রি ও বড় কর্তাদের মতো ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তারা সেখানে যাননি। প্রকৃত উদ্ধার অভিযানের ব্রত নিয়েই তারা সেখানে গিয়েছিলেন, মন্ত্রি ও বড় কর্তাদের মতো  দামি পোশাকআশাক পড়ে কোন Photo Shooting-এ নয়। গভীর কৃতজ্ঞতা ও সশ্রদ্ধ সালাম রইল সে মহান তরুণদের প্রতি।