বিড়ালের তপস্যা এবং বাংলাদেশ সংবিধানের আর্টিকেল ৪১

ফাতেহুল বারী
Published : 11 Jan 2015, 06:17 PM
Updated : 11 Jan 2015, 06:17 PM

বাংলাদেশ সংবিধানের মূল মর্মবাণীকে বিদ্রুপ করে ১৯৭৭ সালে বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিতাড়িত করেন। ইসলাম ধর্মের প্রতি স্বামীর মায়াকান্নার এ ঐতিহ্য বরাবরই বজায় রেখেছেন তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ – এ জাতীয় নির্বাচনগুলোতে ভোটের জন্য  বাংলাদেশের জনগণের কাছে ইসলাম ধর্ম নিয়ে নানান ধরনের মায়াকান্না কেঁদেছেন তিনি। পরম প্রিয় মহানবী (সাঃ)-কে চরমভাবে অবমাননাকারী অভিশপ্ত মওদুদীর শিষ্যদের সাথে নিয়ে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে নানানভাবে ব্যাবহার করেছেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার জন্য। এদেশের সরল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বোকা বানিয়ে দু-দুবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলও করেছেন। ক্ষমতায় কিংবা ক্ষমতার বাইরে সবসময়ই খালেদা জিয়া ধর্মকে ব্যাবহার করে ফায়দা লুটার প্রক্রিয়াটি চালু রেখেছেন। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার বিচারের রায়ের পরের সময়টিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে বাংলাদেশের মানুষের অবিস্মরণীয় এক প্রাণময় উচ্ছ্বাসের দৃশ্যপটে (গণজাগরণ মঞ্চ) বেগম খালেদা জিয়া গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে অত্যন্ত কুৎসিত এবং ভয়াবহ বিপজ্জনকভাবে ব্যাবহার করেছেন।হেফাজতের উত্থান ঘটিয়েছেন। তাদের প্ররোচনা দিয়ে প্রমত্ত করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। চরম উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের একটা সময় পার করতে হয়েছে এ দেশের মানুষকে তখন। খালেদা এবং তার লোকজনদের তখন গলা ফাটাতে শুনেছি- গণজাগরণ মঞ্চে নাকি ইসলামের কায়দাকানুন মানা হয় না, আজানের সময় বিরতি দেয়া হয় না, গণজাগরণ মঞ্চের বক্তারা বক্তৃতা দেয়ার আগে অযুকালাম বানিয়ে আসেনা ইত্যাদি, ইত্যাদি আরো নানান মিথ্যা প্রচারণা। আল্লাহ্‌র মহিমা অবশেষে বিড়ালের তপস্যা ভেঙ্গে গেল, এ কপট ইসলামপ্রেমীর মুখোশ উম্মোচিত হল। ক্ষমতা দখলের জন্য এতদিন তিনি ইসলামপ্রেমী সেজেছেন। এবার ইসলামকে জিম্মি করলেন। বিশ্বের লাখো মুসলমানের মিলনমেলা বিশ্ব ইজতেমাকে অবরোধ করলেন, রুখে দিতে চাইলেন। বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বীদের কাতর অনুরোধকে এতটুকু পাত্তা না দিয়ে তার লোকজনদের অবরোধকে আরো জোরদার করতে বললেন। তার ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়ায় বিশ্ব ইজতেমাকে রুখে দিয়ে ব্যর্থ করে দিতে চাইলেন। ইসলাম পালনে পরিষ্কার বাধা দিলেন। বাধা দিয়ে ফায়দা লুটতে চাইলেন। বিশ্ব ইজতেমাকে রুখে দেয়ার এত চেষ্টা করেও সফল হতে পেরেছেন কি? দায়িত্ব নিয়ে শপথ করে বলতে চাই এবার বিশ্ব ইজতেমায় আগত অতিথিদের তাবুর সীমানা আরো বেড়েছে। মহামহীম প্রভুর এ এক মহিমা!

বিশ্ব ইজতেমার আগে এবং বিশ্ব ইজতেমা চলাকালীন বেগম খালেদা জিয়ার প্রাণঘাতী এ অবরোধের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রের কাছে আমরা ফরিয়াদি হয়ে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সংবিধানের দেয়া মহান রক্ষাকবচের কথা বিনিতভাবেউল্লেখ করতে চাই- সংবিধানের আর্টিকেল ৪১-এ স্পষ্টভাবে "Freedom of religion"- এর কথা আছে, সেখানে বলা আছে- "every citizen has the right to profess, practice or propagate any religion" কিন্ত বেগম খালেদা জিয়া আমাদের বিশ্ব ইজতেমায় আসতে এবং ধর্মপালনে চরমভাবে বাধা দিয়েছেন। আমাদের "Freedom of religion"-এ হস্তক্ষেপ করেছেন, 'religion practice'-এ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন- যা একেবারেই সংবিধান পরিপন্থী।

গভীরভাবে আশা করি রাষ্ট্র আমাদের এ ফরিয়াদ শুনবেন এবং সংবিধান লঙ্গনকারীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।