বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সবচেয়ে বেশি বিতর্ক চলছে সংবিধান সংশোধন নিয়ে। নানা মুণির নানা মত। কি করা যাবে আর কি করা যাবে না, ১৯৭২ সালে কেন কোন কথাটি রচিত হয়েছিল এবং এখন, এই ২০১১ সনে কি কি পরিবর্তন প্রয়োজন (আদৌ প্রয়োজন কি না), তর্কটা এই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি, এবং আমার মত অনেক মুক্তিযোদ্ধাই বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক তথা বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে বলার সুযোগ পাচ্ছেন না- কি বিশ্বাস ও স্বপ্ন নিয়ে আমরা এই সংবিধান রচনা করেছিলাম (বা করতে চেয়েছিলাম)। কেন , কি পাওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ রক্ত দিয়ে কেড়ে নিয়ে এসেছিলো “স্বাধীনতা”। ঠিক কোন লক্ষ্য অর্জনের স্বপ্ন মানুষকে উদ্দীপনা যুগিয়েছিল নিজের সবচেয়ে দামী সম্পদ- প্রাণ/জীবন-কে বিলিয়ে দিতে!
এই লেখায় আমি চেষ্টা করবো সেই সব প্রশ্ন ও তর্কের উপরে কিছু আলোকপাত করতে।
প্রথমে আমার পরিচয়। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা – এইটাই আমার বড় পরিচয়। ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টরে ‘সাব সেক্টর কমান্ডার’ হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে পাকিস্তান সেনা বাহিনী ও তাদের বাংলাদেশী দোসর (রাজাকার, আল বদর ইত্যাদি) দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে বহু সহযোদ্ধাসহ নিজের আপন ছোটভাইকে মুক্তিযুদ্ধে হারাই। স্বাধীনতা পরবর্তী জীবনে পেশাগত কাজের পাশাপাশি আমি মূলত বাংলাদেশ, অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ে পড়ালেখা করি। ব্যক্তিগত জীবনে আমি কোন রাজনৈতিক দলের আদর্শে বিশ্বাস করি না – তবে আমি নিরপেক্ষ নই। আমি বাংলাদেশ পক্ষের লোক, দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থ হলো আমার নিজের স্বার্থ।
১৯৭২ এর সংবিধান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন
এই প্রশ্নটা হয়ত অনেকের মনে হয়ে থাকবে যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কথাটার মানে কি? আর আমাদের সংবিধানে এই চেতনার আলোকে কি কথা লেখা হয়েছে যার পরিবর্তন এই চেতনার পরিপন্থী হতে পারে? এর উত্তর পেতে হলে আমাদের আগে বুঝতে হবে- কি কোন কোন অধিকার ও আদর্শ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচালিত করেছিলো স্বাধীনতা অর্জনে। শুধু একটি রাষ্ট্রীয় পরিচয় আর পতাকা- এই কি যুদ্ধের চেতনা? কখনোই নয়। বরং আমাদেরকে এইটা বুঝতে হবে যে- ১৯৭১ এর মার্চে গণহত্যার ফলশ্রুতিতে যে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়েছিলো, তারও আগে, এই বঙ্গের জনপদ কিছু নির্দিষ্ট অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিক আন্দোলন করে এসেছে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সেই সব অধিকার কি ভাবে, কোন নিয়মে আদায় করা হবে, সেই রূপরেখার অধিকার আমাদের নিজেদের হাতে দিয়েছে (মোঘল, বৃটিশ কিংবা পাকিস্তানী প্রভু শাসকদের পরিবর্তে) । আর সেই রূপরেখার লিখিত রুপ হলো আমাদের সংবিধান। সুতরাং, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শুধুমাত্র ১৯৭১ এর চেতনা নয়- বাঙ্গালী জাতি ও স্বাধীন সত্ত্বা হিসেবে আমরা যেদিন থেকে নিজেদের ভাবতে শুরু করেছি- সেই হাজার বছরের আদি ও চিরন্তন মানবিক ও ন্যায়নির্ভর চেতনা। স্বাধীন ভাবে নিজের জীবন যাপন ও সাম্যবাদ (সকল মানুষ সমান সুযোগ ও প্রাপ্যের অধিকারী) এর যে আদর্শ মানুষকে , বাঙ্গালী জাতিকে উদ্বুদ্ধ করে এসেছে, সেই স্বপ্ন বা বিশ্বাসের আধুনিক লিখিত রুপ হলো “১৯৭২ সালের সংবিধান” । ঠিক এই কারণেই আমাদের সংবিধান এর মূলনীতি যা ছিলো তা আসলে কোন ধর্মেরই মূল শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক নয়, কেউ যদি এই কথা বলে তা হলো “পিওর প্রপাগান্ডা”।আবার এর পাশাপাশি, ১৯৭২ এর সংবিধানে কি কোন সমস্যা নেই বা ছিলো না? অবশ্যই ছিলো। আসুন দেখি , কেন?
১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রস্তাবনায়; প্রথম ভাগের অনুচ্ছেদ ৭ প্রদত্ত জনগণের সার্বভৌমত্ব এবং সর্বোচ্চ আইন হিসেবে সংবিধানের প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব ; দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহ এবং তৃতীয় ভাগে বিধায়িত মৌলিক অধিকারসমূহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকার। কিন্তু এসকল চেতনা ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের চতুর্থ ভাগ(নির্বাহী বিভাগ), পঞ্চম ভাগ(আইনসভা)এবং ষষ্ঠ ভাগে(বিচার বিভাগ) রাষ্ট্র ব্যবস্থার যেসব বিধি দেয়া হয়েছে তা উক্ত অঙ্গীকার সমূহ বাস্তবায়নের উপযোগী নয়। সংবিধান পর্যালোচনা করলে কারণগুলো পরিষ্কার হয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়তে কি সংস্কার ও পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তা আলোচনা করা যায়।
সুদীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে ধারণকৃত জাতীয় আকাঙ্খা সমূহ এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে উক্ত আকাঙ্খা সমূহ বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার দলিল ১৯৭২ সালের সংবিধান যা ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর বাংলাদেশ গণপরিষদ কতৃক গৃহীত হয়। সংবিধানের প্রস্তাবনায় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ও সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে বলা হয়েছে “ যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে ( মুক্তিযুদ্ধকে জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম আখ্যায়িত করা হয়েছে) ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল:–
১।জাতীয়তাবাদ— যার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে অনুচ্ছেদ ৯এ “ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালী জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি”এবং এর বাইরে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের অন্যকোনো ব্যাখ্যা গ্রহন হবে অসাংবিধানিক।
বহুল প্রচারিত “বাংলাদেশী” কোন জাতীয়তা নয়; “বাংলাদেশী” হলো নাগরিকত্ব। বহু বাঙ্গালী বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে বিশ্বের বহু দেশে বসবাস করেন; তারা বৃটিশ, আমেরিকান প্রভৃতি নাগরিকত্ব এর পরিচয়ে পরিচিত। ভারত, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য ইত্যাদি দেশে যারা বাস করেন তারাও সেখানকার নাগরিক; কিন্তু তাদের সবার জাতীয়তা বাঙ্গালী।যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল তারা বাঙ্গালী হলেও এই বিধিবর্ণিত জাতীয়তাবাদের মধ্যে পড়ে না এবং বাংলাদেশে তাদের কোন জাতীয় অধিকার থাকতে পারে না।
২।সমাজতন্ত্র—(সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি) যার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে অনুচ্ছেদ ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ৩৪, ৪০, ৪২এ। সুতরাং উক্ত অনুচ্ছেদ সমুহে দেয়া বিধির বাইরে বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র সম্পর্কে কোন নিজস্ব মনগড়া ব্যাখ্যা গ্রহনের অবকাশ নেই। অনুচ্ছেদ ১০ “মানুষের উপর মানুষের শোষণ হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে”। অনুচ্ছেদ ১৩ (মালিকানার নীতি) “উৎপাদন যন্ত্র, উৎপাদনব্যবস্থা ও বন্টন প্রণালী সমুহের মালিক বা নিয়ন্ত্রক হইবেন জনগণ এবং এই উদ্দেশ্যে মালিকানা ব্যবস্থা নিম্নরূপ হইবে :
(ক) রাষ্ট্রীয় মালিকানা, অর্থাৎ অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান প্রধান ক্ষেত্র লইয়া সুষ্ঠু ও গতিশীল রাষ্ট্রায়ত্ব সরকারী খাত সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের পক্ষে রাষ্ট্রীয় মালিকানা ;
(খ) সমবায়ী মালিকানা, অর্থাৎ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সীমার মধ্যে সমবায় সমূহের সদস্যদের পক্ষে সমবায় সমূহের মালিকানা এবং
(গ) ব্যক্তিগত মালিকানা অর্থাৎ আইনের দ্বারা নির্ধারিত সীমার মধ্যে ব্যক্তির মালিকানা”।
অতএব বাংলাদেশে ব্যক্তি মালিকানা বিহীন ও সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মালিকানার সমাজতন্ত্র বা কমুনিজম নীতি যেমন অগ্রহণযোগ্য; তেমনি অবাধ ব্যক্তিগত মালিকানাও গ্রহণীয় নয়। আবার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণমুক্ত মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুসরণীয় হতে পারে না। অনুচ্ছেদ ১৪ (কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তি) “রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতি মানুষকে—কৃষক ও শ্রমিককে– এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা”। অনুচ্ছেদ ১৫ (মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা) “রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদন শক্তির ক্রমবৃদ্ধি সাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন, যাহাতে নাগরিকদের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্জন নিশ্চিত করা যায়: (ক) অন্ন,বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা;
(খ) কর্মের অধিকার অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করিয়া যুক্তিসংগত মজুরির বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার;
(গ) যুক্তিসংগত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার এবং
(ঘ) সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্ব জনিত কিম্বা বৈধব্য, মাতৃপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতি জনিত আয়ত্বাতীত কারণে অভাবগ্রস্থতার ক্ষেত্রে সরকারী সাহায্যলাভের অধিকার”।
অনুচ্ছেদ ১৬ (গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব) “নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করিবার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লবের বিকাশ , গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, কুটীরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা , যোগযোগ ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করিবে”।
অনুচ্ছেদ ১৭ (অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা) “রাষ্ট্র –
(ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য,
(খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছা প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য,
(গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করিবে”। সুতরাং এই বিধি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী এবং বেকার সৃষ্টির শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পেশাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা আবশ্যক।এবং এই শিক্ষার স্তর হতে হবে অন্যূন উচ্চ মাধ্যমিক বা দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত যাতে এই শিক্ষা শেষে ছেলেমেয়েরা যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহন করতে পারবে না; তারা যে কোন একটা পেশায় কর্মসংস্থান করতে পারে।
অনুচ্ছেদ ১৮(জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা) “(১) জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবে এবং আরোগ্যের প্রয়োজন কিংবা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত মদ্য ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করিবে।(২) গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করিবে”।
অনুচ্ছেদ ১৯ “(১) সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবে। (২) মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার উদ্দেশ্যে নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করিবার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ সুবিধা দান নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করিবে”।
স্থানীয় অর্থব্যবস্থার প্রবর্তন ব্যতীত সম্পদের সুষম বন্টন সম্ভব নয়।
অনুচ্ছেদ ২০ (অধিকার ও কর্তব্য রূপে কর্ম) “(১) কর্ম হইতেছে কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্তব্য ও সম্মানের বিষয়; এবং প্রত্যেকের নিকট হইতে যোগ্যতানুসারে ও প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী—এই নীতির ভিত্তিতে প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করিবে। (২) রাষ্ট্র এমন অবস্থার সৃষ্টি করিবে, যেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোন ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবে না এবং যেখানে বুদ্ধি বৃত্তিমূলক ও কায়িক- সকল প্রকার শ্রম সৃষ্টিধর্মী প্রয়াসের ও মানবিক ব্যক্তিত্বের পূর্ণতর অভিব্যক্তিতে পরিণত হইবে”। স্থানীয় অর্থব্যবস্থা ব্যতীত সকলের কর্মসংস্থান করা যাবে না।
অনুচ্ছেদ ৩৪ (জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধকরণ) “(১) সকল প্রকার জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ; এবং এই বিধান কোনভাবে লঙ্ঘিত হইলে তাহা আইনত: দণ্ডনীয় অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে”। অনুচ্ছেদ ৪০—(পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা) “আইনের দ্বারা আরোপিত বাধানিষেধ সাপেক্ষে কোন পেশা বা বৃত্তি গ্রহনের বা কারবার বা ব্যবসায় পরিচালনার জন্য আইনের দ্বারা কোন যোগ্যতা নির্ধারিত হইয়া থাকিলে ঐরূপ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন আইন সংগত পেশা বা বৃত্তি গ্রহনের এবং যে কোন কারবার বা ব্যবসায় পরিচালনার অধিকার থাকিবে”।
অনুচ্ছেদ ৪২ – (সম্পত্তির অধিকার) “(১) আইনের দ্বারা আরোপিত বাধানিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন,ধারণ, হস্তান্তর বা অন্যভাবে বিলিব্যবস্থা করিবার অধিকার থাকিবে এবং আইনের কতৃত্ব ব্যতীত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহন, রাষ্ট্রায়ত্ব বা দখল করা যাইবে না”। এখানে মূল উদ্দেশ্য হলো কোন ব্যক্তিকে জীবিকা হারা করে; অথবা উন্নততর জীবিকার ব্যবস্থা না করে সম্পত্তি রাষ্ট্রায়ত্ব করা হবে বেআইনী।কিন্ত বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে মানুষকে বিশেষ করে চাষীদের ভূমিহীন করা হয় এবং বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা না করে কিছু নগদ অর্থ দিয়ে বিদায় করা হয়; যে অর্থ তাকে বা তার পরিবারকে পুনর্বাসনে ব্যর্থ হয়।অথচ তার সম্পত্তি দখল করে যে সম্পদ সৃষ্টি করা হয় তাতে তার কোন অধিকার থাকে না। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং সংবিধান বিরোধী।
৩।গণতন্ত্র– যার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে অনুচ্ছেদ ১১, ২৭, ২৯, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯এ এবং এই সংবিধান সম্মত নয় এমন কোন গণতন্ত্রের চর্চা বাংলাদেশে গ্রহণীয় হবে না। অনুচ্ছেদ ১১(গণতন্ত্র ও মানবাধিকার) “প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানব সত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে”। এই মর্মে স্থানীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রবর্তন না করা সংবিধানের লংঘন।
অনুচ্ছেদ ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা) “সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী”। অনুচ্ছেদ ২৯(সরকারী নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা) “(১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে। (২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের অযোগ্য হইবে না কিংবা সেক্ষেত্রে তাহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না”।
অনুচ্ছেদ ৩১—(আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার) “আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহার যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার, এবং বিশেষত: আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা যাইবে না, যাহাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা,দেহ,সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে”।
অনুচ্ছেদ ৩২(জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার রক্ষণ) “আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না”। অনুচ্ছেদ ৩৩(গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ) “(১) কোন গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাহার মনোনীত আইনজীবির সহিত পরামর্শের ও তাহার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না। (২) গ্রেপ্তাকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে—তাহাকে আদালতে আনয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ব্যতীত—আদালতে হাজির করা হইবে এবং আদালতের আদেশ ব্যতীত তাহাকে তদতিরিক্ত কাল আটক রাখা যাইবে না”। উক্ত বিধিগুলো মান্য করলে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা এবং বিনা বিচারে আটক রাখা উচিৎ নয়।
অনুচ্ছেদ ৩৬ (চলাফেরার স্বাধীনতা) “জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, ইহার যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতি স্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুন:প্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে”। পার্বত্যচট্টগ্রাম সহ বাংলাদেশের যে কোন স্থানে জমি ক্রয় ও বসবাসের অধিকার বাংলাদেশের সকল নাগরিকের অছে।
অনুচ্ছেদ ৩৭ (সমাবেশের স্বাধীনতা) “জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে”। অনুচ্ছেদ ৩৮ (সংগঠনের স্বাধীনতা) “জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংগঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। তবে শর্ত থাকে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারী কোন সাম্প্রদায়িক সমিতি সঙ্ঘ কিম্বা অনুরূপ উদ্দেশ্য সম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারী ধর্মীয় নামযুক্ত বা ধর্মভিত্তিক অন্যকোনো সমিতি বা সঙ্ঘ গঠন করিবার বা তাহার সদস্য হইবার বা অন্যকোনো প্রকারে তাহার তৎপরতায় অংশগ্রহন করিবার কোন অধিকার কোন ব্যক্তির থাকিবে না”। ধর্ম ও সম্প্রদায়ের নামে বাংলাদেশে যে সকল সংগঠন আছে সেগুলো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হলে তা হবে অবৈধ।
অনুচ্ছেদ ৩৯ (চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা) “(১) চিন্তা ও বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল। (২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে—(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের এবং (খ) সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল”। বাংলাদেশে বিনা বিচারে আটক, হত্যা, রিমান্ড ইত্যাদি দ্বারা উক্ত গণতান্ত্রিক অধিকার সমূহ লঙ্ঘিত হচ্ছে; অন্যদিকে ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং সাম্প্রদায়িক সংগঠন সমূহ কর্তৃক অনুচ্ছেদ ৩৮এর শর্ত ভঙ্গ করা হচ্ছে।
৪। ধর্মনিরপেক্ষতা — যার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে অনুচ্ছেদ ১২, ২৮, ৪১এ এবং এর বাইরে তথা সংবিধান বহির্ভূত ধর্মনিরপেক্ষতার অন্যকোনো ব্যাখ্যা নিষিদ্ধ ও অগ্রহণীয়।জামায়াতের নেতারা ধর্মনিরপেক্ষতার যে সব ব্যাখ্যা দেন তাতে সংবিধানের লঙ্ঘন করা হয়।
অনুচ্ছেদ ১২(ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা) “ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য—(ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কতৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার, (ঘ) কোন বিশেষ দর্শন পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন বিলোপ করা হইবে”।এই নৈতিকতার অবস্থান থেকে “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” আসলে বিধি লঙ্ঘন করে।
অনুচ্ছেদ ২৮(ধর্ম প্রভৃতি কারণে বৈষম্য) “(১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে। (২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী,বর্ণ, নারীপুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের অযোগ্য হইবে না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাহার প্রতি বৈষম্য করা যাইবে না”। অনুচ্ছেদ ৪১(ধর্মীয় স্বাধীনতা) “(১) আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষে-(ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে; (খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপসম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে। (২) কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম সংক্রান্ত না হইলে তাহাকে কোন ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহন কিম্বা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশগ্রহন বা যোগদান করিতে হইবে না”।
গণতান্ত্রিক( বিপ্লব নয়)পদ্ধতিতে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় বলা হয়েছে যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন,মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য,স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত থাকবে। প্রস্তাবনায় সংবিধানের মুলনীতি ব্যখ্যার পর প্রথম অধ্যায়ে অনুচ্ছেদ ৭ এ বলা হয়েছে—“(১) প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কতৃত্বে কার্যকর হইবে। (২) জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন; এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে”।
প্রস্তাবনায় বর্ণিত অঙ্গীকার এবং সংবিধানের মূলনীতি; প্রথম ভাগের ধারা ৭এ প্রদত্ত জনগণের সার্বভৌমত্ব তথা সোসিও-পলিটিক্যাল এবং সোসিও-ইকোনমিক ক্ষমতার মালিকানা; জনগণের অভিপ্রায় হিসেবে সংবিধান সর্বোচ্চ আইন ও তার প্রাধান্য; দ্বিতীয় ভাগে প্রদত্ত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সমূহ এবং তৃতীয় ভাগে প্রদত্ত মৌলিক অধিকার সমূহ সার্বিক অর্থে মহান আদর্শ সমূহ যা অর্জনের জন্য আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদের প্রাণোৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং এই আদর্শ ও আকাঙ্খা সমূহ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যা সুদীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে বহু বলিদানের মাধ্যমে জাতীয় অভিপ্রায় ও আকাঙ্খা রূপে সংবিধানে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। অতএব মুক্তিযুদ্ধের রক্তে অর্জিত এই চেতনা বাস্তবায়ন করা জাতীয় অঙ্গীকার ও সকল নাগরিকের দায়িত্ব-কর্তব্য। প্রতিটা রাজনৈতিক দলের জন্যও তা প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব।
কিন্তু, সংবিধানে অনেক অধিকার ও সুন্দর সুন্দর আদর্শের কথা শুধু লেখাই আছে, প্রয়োগ নেই। বরং সরাসরি সংবিধান বিরোধী নানান উদ্ভট ও ক্ষতিকারক নিয়ম কানুন এর প্রয়োগ হচ্ছে। কেন প্রয়োগ হয় না করতে দেওয়া হয় না- তা থাকছে দ্বিতীয় পর্বে। আমাদের সংবিধানের প্রায়োগিক পর্বের নীতিমালাতে প্রচুর গলদ রয়েছে। আর যাতে গলদ নেই, সেই নিয়মের ও প্রয়োগ নেই .
(চলবে)
***
ফিচার ছবি: প্রিয় ব্লগ
***
মুক্তিযোদ্ধার চোখে: সংবিধান, সমস্যা, পর্যালোচনা ও সমাধানে কিছু প্রস্তাব -পর্ব ২
নাহুয়াল মিথ বলেছেনঃ
কী-বোর্ড সৈনিক নয় একজন মুক্তিযোদ্ধার ব্লগ।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হক বলেছেনঃ
অনেক ধন্যবাদ নাহুয়াল । পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।
বুধু বলেছেনঃ
দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হক বলেছেনঃ
অনেক ধন্যবাদ বুধু । ২য় পর্ব দেওয়া হয়েছে।
মাধবীলতা বলেছেনঃ
গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হক বলেছেনঃ
অনেক ধন্যবাদ মাধবী। আশা করি প্রতিটা পর্বেই আপনাকে পাবো।
কৌশিক আহমেদ বলেছেনঃ
“কিন্ত বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে মানুষকে বিশেষ করে চাষীদের ভূমিহীন করা হয় এবং বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা না করে কিছু নগদ অর্থ দিয়ে বিদায় করা হয়; যে অর্থ তাকে বা তার পরিবারকে পুনর্বাসনে ব্যর্থ হয়।অথচ তার সম্পত্তি দখল করে যে সম্পদ সৃষ্টি করা হয় তাতে তার কোন অধিকার থাকে না। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং সংবিধান বিরোধী।”
এই নগদ অর্থ দেবার মধ্যেও কত অব্যবস্থা – হয়রানী!
আপনার নেক্সট পর্ব পড়ার জন্য অপেক্ষায়।
একজন মুক্তিযোদ্ধার ব্লগ পড়ছি – এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। আপনাকে লাল সালাম।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হক বলেছেনঃ
একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ আপনার চোখে পড়েছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। এই সমস্যাটার বিস্তারিত সমাধান পরের দিকে পর্বে থাকছে। এই মুহুর্তে, সংক্ষেপে, যেমন- কারো জমি নিয়ে যদি বাড়ি বানানো হয়, উন্নয়নের নামে, তাহলে ঐ জমি থেকে তার যে আয় হত , সেই আয় থেকে আরো বেশি আয় করার ব্যবস্থা করে দেওয়াই হলো প্রকৃত উন্নয়ন । আর ক্ষতি পূরণের নামে এক কালীন টাকা দেওয়াতে সত্যিকারের ক্ষতিপূরণ হয় না। বরং মানুষ ভূমিহীন হয়ে পড়ে। সম্পত্তিহারা করার অধিকার কোন জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের থাকতে পারে না। সুতরাং, বাড়িঘর বানানোর পরে বেড়ে যাওয়া দামের অনুপাতে জমির মালিকের অংশীদারিত্ব, বা ভাড়া থেকে আয় ( একটা বা দুইটা ফ্লাট দেওয়ার মাধ্যমে) করা যেতে পারে। ফলে যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে তাদের বাস্তু এবং আয় নিশ্চিত থাকছে।
Rafiq বলেছেনঃ
Thanks for your valuable information About “72 Act.
But we didn’t find anything smoothly move on our country.
গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হক বলেছেনঃ
আমাদেরকেই তো করতে হবে, নিজে নিজে কি আর হয়?
আব্দুল মোনেম বলেছেনঃ
আপনার লেখাটা পড়ে অনেক কিছু জানলাম। পরের পর্বগুলোর জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছি। আপনাকে ধন্যবাদ, এমন সময়ে এভাবে লেখার কষ্টটি স্বীকার করার জন্য।
যেহেতু আপনার লেখার শিরোনামটি “সমস্যা, পর্যালোচনা ও সমাধানে কিছু প্রস্তাব” অংশটুকু আছে সেহেতু আপনি সেগুলো নিয়ে পরের পর্বগুলোতে বিস্তারিত লিখবেন তা আশা করাটাই স্বভাবিক। আমি এখনও ঠাহর করতে পারি নি শেষ অবধি অপেক্ষা করাটাই উত্তম হতো কি-না। তবুও লিখলাম এ আশায় যে, ওগুলো আপনি স্পষ্ট করলে আমার অনেক বিভ্রান্তি দূর হবে।
হৈ-হল্লার একটি বিষয় যে ধর্ম তা আমি তো অস্বীকার করতে পাড়ছিনে। এব্যাপরে একটি যুক্তিসংগত অবস্থান আমরা মেনে নিলে অনেক সমস্যার সুরাহা হয়, অন্ততঃ যুক্তির দিক থেকে ও সংবিধান মেনে চলার অঙ্গীকারের দিক থেকে।
ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি নির্ধারণে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২, ২৮, ৪১এ যা বলা হয়েছে তাতে ইসলাম ধর্মের কোন নীতিই ভঙ্গ হয় না তাতে আমার এখন অবধি কোন সন্দেহ তো নেই-ই বরং তাতে ইসলামের নীতিগুলোই প্রতিফলিত হয়েছে।
“এই নৈতিকতার অবস্থান থেকে “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” আসলে বিধি লঙ্ঘন করে” আপনার এ মতের প্রতি আমার সম্পূর্ণ সমর্থন আছে।
কিন্তু আমি সমস্যায় পড়েছি “(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার,” বিলোপের বিষয়টি নিয়ে। এ সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো নীচে দিলাম।
১. ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার’ ও ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের ব্যবহার’ বলতে কি বুঝায়?
২. এরূপ ‘ব্যবহার’ ও ‘অপব্যবহার’ এর মধ্যে কোন ফারাক আছে কি-না?
৩. ব্যবহারটা কখন বাস্তবে সংঘটিত হয়?
৪. অপব্যবহারটা কখন বাস্তবে সংঘটিত হয়?
৫. এক বা সকল বর্তমান দল সংবিধান লংঘন করলে এর দায় নতুন বা ভবিষ্যতে সম্ভাব্য দলের উপর বর্তায় কি-না?
অনুচ্ছেদ ৩৮: “জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংগঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। তবে শর্ত থাকে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারী কোন সাম্প্রদায়িক সমিতি সঙ্ঘ কিম্বা অনুরূপ উদ্দেশ্য সম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারী ধর্মীয় নামযুক্ত বা ধর্মভিত্তিক অন্যকোনো সমিতি বা সঙ্ঘ গঠন করিবার বা তাহার সদস্য হইবার বা অন্যকোনো প্রকারে তাহার তৎপরতায় অংশগ্রহন করিবার কোন অধিকার কোন ব্যক্তির থাকিবে না।”
এখানে দেখা যাচ্ছে ধর্মের নামে বা ধর্মভিত্তিক কোন রাজনৈতিক দল গঠনই ধর্মের অপব্যাহার বলে সাব্যস্ত হচ্ছে। তাই না?
এ-বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ আমার জন্য খুবই উপকারী হতো।
আপনাকে আগাম ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হক বলেছেনঃ
আপনার লেখাটা পড়ে অনেক কিছু জানলাম। পরের পর্বগুলোর জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছি। আপনাকে ধন্যবাদ, এমন সময়ে এভাবে লেখার কষ্টটি স্বীকার করার জন্য।
— আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
যেহেতু আপনার লেখার শিরোনামটি “সমস্যা, পর্যালোচনা ও সমাধানে কিছু প্রস্তাব” অংশটুকু আছে সেহেতু আপনি সেগুলো নিয়ে পরের পর্বগুলোতে বিস্তারিত লিখবেন তা আশা করাটাই স্বভাবিক। আমি এখনও ঠাহর করতে পারি নি শেষ অবধি অপেক্ষা করাটাই উত্তম হতো কি-না। তবুও লিখলাম এ আশায় যে, ওগুলো আপনি স্পষ্ট করলে আমার অনেক বিভ্রান্তি দূর হবে। —- পরের পর্ব গুলোতে অবশ্যই অনেক কিছুর বিস্তারিত ব্যাখ্যা থাকছে।
হৈ-হল্লার একটি বিষয় যে ধর্ম তা আমি তো অস্বীকার করতে পাড়ছিনে। এব্যাপরে একটি যুক্তিসংগত অবস্থান আমরা মেনে নিলে অনেক সমস্যার সুরাহা হয়, অন্ততঃ যুক্তির দিক থেকে ও সংবিধান মেনে চলার অঙ্গীকারের দিক থেকে।
ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি নির্ধারণে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২, ২৮, ৪১এ যা বলা হয়েছে তাতে ইসলাম ধর্মের কোন নীতিই ভঙ্গ হয় না তাতে আমার এখন অবধি কোন সন্দেহ তো নেই-ই বরং তাতে ইসলামের নীতিগুলোই প্রতিফলিত হয়েছে।
“এই নৈতিকতার অবস্থান থেকে “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” আসলে বিধি লঙ্ঘন করে” আপনার এ মতের প্রতি আমার সম্পূর্ণ সমর্থন আছে।
—- সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।
কিন্তু আমি সমস্যায় পড়েছি “(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার,” বিলোপের বিষয়টি নিয়ে। এ সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো নীচে দিলাম।
১. ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার’ ও ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের ব্যবহার’ বলতে কি বুঝায়?
ঊত্তরঃ ব্যবহারিক বা বাস্তবিক প্রয়োগে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে” বা “রাষ্ট্রীয় ভাবে” ধর্মকে ব্যবহার করাটাই আসলে “অপব্যবহার”। এমন কি ইসলাম ধর্মের রাসূল মুহম্মদ (সাঃ) নিজে মদিনা সনদে সাক্ষরের মাধ্যমে নিজেই এর প্রমাণ রেখে গেছেন। এই সনদে কোন বিশেষ ধর্ম বা ধর্মের মানুষকে আলাদা করে উল্লেখ করা বা গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হয় নাই। কারণ ধর্ম যার যার আর রাষ্ট্র সবার। এইটাই ইসলামেরও শিক্ষা।
২. এরূপ ‘ব্যবহার’ ও ‘অপব্যবহার’ এর মধ্যে কোন ফারাক আছে কি-না?
প্রথম উত্তর অনুযায়ী, উদ্দেশ্য যখন রাজনৈতিক , তখন কোন ফারাক নাই।
৩. ব্যবহারটা কখন বাস্তবে সংঘটিত হয়?
সত্যিকার অর্থে ব্যবহার সম্ভব না, ব্যবহার করতে গেলেই সেইটা “অপব্যবহার” এ পরিণত হয়।
৪. অপব্যবহারটা কখন বাস্তবে সংঘটিত হয়?
যখন কোন ধর্মের অনুসারীরা নিজ ধর্মকে রাষ্ট্রীয় আইন কানুন ও এর প্রয়োগের মূল হিসেবে ব্যবহার করে, তখন অন্য ধর্মের বা সংখ্যালঘুদের উপরে তা অপব্যবহার হিসেবে প্রমাণিত হয়। যেমন- ইসলামেই বলা হয়েছে
অর্থাৎ, তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম, আমার জন্য আমার ধর্ম।
অর্থাৎ । ধর্মের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নাই।
সুতরাং, সব মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা ইসলাম নিজে নিশ্চিত করেছে যা বাংলাদেশের সংবিধানের ১২ এবং ৪১ অনুচ্ছেদে ঠিক এই কথাই বলা হয়েছে।
৫. এক বা সকল বর্তমান দল সংবিধান লংঘন করলে এর দায় নতুন বা ভবিষ্যতে সম্ভাব্য দলের উপর বর্তায় কি-না?
এই প্রশ্নটা উদাহরণের মাধ্যমে একটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করলে ভালো হয়, তাতে উত্তর দিতে সুবিধা হত। এই মুহুর্তে এইটুকুই বলতে পারি, যে লংঘন করে , দোষ বা দায় তার উপরেই বর্তায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পরবর্তী নতুন বা সম্ভাব্য দলটি আগের পাপ মোচন করে সামনে এগিয়ে যাবে নাকি সংশোধনের দায় এড়িয়ে নিজেদের সুবিধার জন্য কাজ করবে?
অনুচ্ছেদ ৩৮: “জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংগঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। তবে শর্ত থাকে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারী কোন সাম্প্রদায়িক সমিতি সঙ্ঘ কিম্বা অনুরূপ উদ্দেশ্য সম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারী ধর্মীয় নামযুক্ত বা ধর্মভিত্তিক অন্যকোনো সমিতি বা সঙ্ঘ গঠন করিবার বা তাহার সদস্য হইবার বা অন্যকোনো প্রকারে তাহার তৎপরতায় অংশগ্রহন করিবার কোন অধিকার কোন ব্যক্তির থাকিবে না।”
এখানে দেখা যাচ্ছে ধর্মের নামে বা ধর্মভিত্তিক কোন রাজনৈতিক দল গঠনই ধর্মের অপব্যাহার বলে সাব্যস্ত হচ্ছে। তাই না?
এই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বা রাজনৈতিক দল গঠন করাটা ধর্মের অপব্যবহার কি না- এইটা বুঝতে হলে আমাদের প্রথমেই মনে রাখতে হবে, একটা রাজনৈতিক দল মানুষ কখন এবং কেন গঠন করে? কেউ যদি শুধু ধর্মকে প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে কোন সংগঠন করতে চায়, তাহলে সে রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের চেষ্টাই করবে না। এই ধরনের সংগঠন গুলো সাধারণত সামাজিক বা সেবা মূলক হয়ে থাকে। কিন্তু , একটা রাজনৈতিক দল গঠনের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্যই হলো রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল ও রাষ্ট্রকে পরিচালনা করা।
এখন ধরে নেই, এই রকম একটি ধর্মভিত্তিক দল ক্ষমতায় গেল। তার রাজনৈতিক ম্যান্ডেট কি হবে? নিজের ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করা।
নিজের ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করার উপায় কি?
রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধা , অর্থ ব্যবহার করে সেই ধর্মকে সবার উপরে চাপিয়ে দেওয়া ।
এখন, কেউ যদি না মানে? কেউ যদি অন্য ধর্ম আকড়ে ধরে রাখতে চায়? কেউ যদি নাস্তিক হয়? তখন এই দল কি ভাবে কাজ করবে?
এ সব ক্ষেত্রে ইতিহাস সাক্ষী, নিপীড়ন হবেই। গরিষ্ঠরা সব সময়ই লঘিষ্ঠের উপরে চাপিয়ে দিতে চায়- এইটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তার উপর যদি সংবিধান এটাকে অনুমতি দেয়, তাহলে তো কথাই নেই।
ইতিহাস বলে, যখন যেই জাতি যেই দেশ দখল করেছে, তখন সেই দেশের উপরে নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতি চাপিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্র ব্যবস্থা একটি বিশেষ ধর্মের হাতে পড়লে, রাষ্ট্রের ভিতরে বসবাসকারী ভিন্ন মতের নাগরিকদের অবস্থাও তাই হবে।
এই জন্য, হ্যাঁ, ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠন মানে ধর্মের অপব্যবহার।
আপনাকে আগাম ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। — আপনাকেও ধন্যবাদ।
আইরিন সুলতানা বলেছেনঃ
ব্লগে স্বাগতম আপনাকে। একজন মুক্তিযোদ্ধার ব্লগে আগমণ নিশ্চয়ই ব্লগারদের- যাদের আমরা কী-বোর্ড সৈনিক বলি, অনুপ্রাণিত করবে।
চমৎকার একটি সিরিজ লেখা শুরু করেছেন। অনেক কিছু জানার থাকবে বুঝতে পারছি।
ধর্ম নিরপেক্ষতা অথবা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা, অথবা সংবিধানে বিসমিল্লাহ বহাল রাখা না রাখা নিয়ে কিছু ভাবনা কাজ করে।
ধর্ম নিরপেক্ষতার যারা বিরোধিতা করেন, অর্থ্যাৎ যারা রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্পষ্ট করে লিখিত আকারে দেখতে চান, তাদের যুক্তি কী আসলে?
রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম এর থাকা না থাকা, বা ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র কায়েম করা- এই নিয়ে আমরা যারা মত বিনিময় করি তাদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ধর্ম কী? ধরে নেয়া যায়, এই বিতর্কে অংশগ্রহণকারিরাও মুসলমানই। তারমানে, এটাও একটা চিত্র, যেখানে বোঝা যায়, অন্য ধর্মের লোকেরা সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে কোনঠাসা। সংখ্যালঘুদের কী এই নিয়ে মুক্ত আলোচনার সুযোগ আছে?
রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ করতে পারেনা। সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরু দু’পক্ষই তার কাছে সমান সুযোগের দাবি রাখে।
যদি সংবিধানে বিসমিল্লাহ না থাকে,তবে তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ধর্ম কী করে খাটো হয়? এবং থাকলে কী করে সমুন্নত হয়?
বিসমিল্লাহ রাখা, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার তোরজোর করে, সংখ্যালঘুদের উপর আধিপত্যের জোর দেখানো হচ্ছে না কি?
গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হক বলেছেনঃ
বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে। আমরা যারা যুদ্ধ করেছি, আমাদের পরিবার ও সহযোদ্ধা যারা প্রাণ দিয়েছেন- তাঁরা কেমন বাংলাদেশ চাই- সেইটা আমাদের কাছে খুবই স্পষ্ট ছিলো, এখনো স্পষ্ট। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে , ইচ্ছাকে, স্বপ্নকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ১৯৭২ এর সংবিধানের ১ম, ২য় ও ৩য় ভাগে- মানে মূলনীতির জায়গাটাতে।
কিন্তু, এই লেখার প্রথম দিকে খেয়াল করে দেখুন, আমি বলেছি, অশ্লীল কাঁটাছেড়ারও অনেক আগে- মানে সেই ১৯৭২ এর সংবিধানেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা বাংলাদেশ পরিচালনার চারটি মূলনীতি বাস্তবায়নের জন্য যেই আইন, নির্বাহী ও বিচার ব্যবস্থার প্রবর্তন প্রয়োজনীয় ছিলো – সেই সব অতি দরকারী বিধান গুলো প্রণয়নই করা হয়নি।
সুতরাং, রাষ্ট্র ধর্ম, বিসমিল্লাহ কিংবা ধর্ম নিরপেক্ষতার মত আপাত গৌণ (এবং বহুল আলোচিত) বিষয় গুলি আলাপ না করে বরং সংবিধানের সত্যিকারের জরুরী অসঙ্গতি , সমস্যা ও ইচ্ছাকৃত ভাবে তৈরী করা এন্টি পিপল বিধান গুলো নিয়ে আলোক পাত করতে চাই।
এই লেখার মূল উদ্দেশ্যই হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়নের জন্য উপযোগী সংবিধান কি হওয়া উচিত- সেইটা আলোচনা ও উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরা এবং সেই সংবিধানের বাস্তবায়ন।
অবশ্যই সম্ভাব্য সমাধান সহ। আশা করছি আপনাকে আলোচনায় পাব। অনেক ধন্যবাদ।
আব্দুল মোনেম বলেছেনঃ
আপনার সুচিন্তিত উত্তরের জন্য ও আমার উদ্দেশ্যে প্রতিটি পয়েন্টের বিপরীতে কষ্ট করে লিখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আব্দুল মোনেম বলেছেনঃ
“রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ করতে পারেনা। সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরু দু’পক্ষই তার কাছে সমান সুযোগের দাবি রাখে।”
আমার জানামতে সত্য বলেছেন। সহমত।
“বিসমিল্লাহ রাখা, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার তোরজোর করে, সংখ্যালঘুদের উপর আধিপত্যের জোর দেখানো হচ্ছে না কি?”
দুঃখের কথা কি আর বলব, আইরিন সুলতানা! সমব্যাথী।
ছায়া বলেছেনঃ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে সেই সাথে অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের এবং প্রচারের সমান সুযোগ রাখা হোক। রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার উৎস মুসলমানদের জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা-আলা এবং বাকিদের জন্য জনগণ করা হোক। মনে রাখবেন একটা কথা সঠিক ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষরা তারা তাদের সঠিক অধিকার টুকুই পাবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সঠিক ইসলামী রীতি পালন করে কজন? আর কে ই বা সঠিক ইসলামী শাসন ব্যবস্থার প্রচলন করবে? যোগ্য একজনও আছেন বলে মনে হয়না। আমার মত যারা এরকম চায় তাদের বড় দুর্বলতা এ জায়গাতেই। ইসলাম নিয়ে কথা বললেই নাক সিটঁকিয়ে এমন একটা ভাব নেয় অনেকেই যেন মৌলবাদী(!) আর এর জন্য দায়ী আমরা মুসলমানরাই।
তারপরও আশায় আছি হয়ত একদিন সঠিক ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। তাতে করে শুধু একটি সম্প্রদায় লাভবান হবে না সকল সম্প্রদায়ই হবে। এর ফলশ্রুতিতেই একদিন এদেশে ইসলামের সংখ্যা ১০০হবে(নিশ্চয়ই আমাদের ইসলাম বলে -সত্যকে জানো এবং তার প্রসার ঘটাও)।
ধন্যবাদ।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হক বলেছেনঃ
ধন্যবাদ,
আইরিন সুলতানাকে দেয়া উত্তর দেখুন এবং আরো বলছি—- স্বয়ং রসুলের (সাঃ) নেত্রিত্বে মুসলমানদের গঠিত প্রথম রাষ্ট্র–মদিনা নগর রাষ্ট্র— যার রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম ঘোষণা করা হয় নাই। মদিনা সনদের ৫৩টি ধারা খেয়াল করুন। সেখানে ক্ষমতার উত”স আল্লাহ নয়; মদিনা রাষ্ট্রে বসবাসকারি সকল সম্প্রদায় ও রসুল(সাঃ) একত্রে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি নির্ধারণ করেছিলেন।সকল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা জনগণ দ্বারা নির্ধারিত হয়। যা প্রচলিত আছে মদিনা সনদ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত। বর্তমান বিশ্বে যে সকল মুসলিম প্রধান দেশে গণতন্ত্র আছে সে সকল দেশে পার্লামেন্টে প্রণীত আইনে শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা না থাকায় মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে আজ গণবিক্ষোব চলছে।
ছায়া বলেছেনঃ
ধন্যবাদ আপনাকে।
আমার একটি প্রশ্ন ছিল। প্রশ্নটি হল, আমার দেখার ভুল না হয়ে থাকলে আমি কোনও একটি বই অথবা অন্য কোথাও দেখেছিলাম আল্লাহ বলেছেন – তোমরা আল্লাহ্র প্রণীত বিধি-বিধান মেনে চল এবং আল্লাহ্র বিধি-বিধান অনুযায়ী শাসন কর(কিছুটা ভুল থাকতে পারে আমার লিখায়)। —- এ বিষয়টি নিয়ে একটু পরিষ্কার করবেন কি? যদি আপনার এ সম্পর্কে জানা থাকে বিস্তারিত।
নাহুয়াল মিথ বলেছেনঃ
মহামতী ছায়া স্বপ্ন দেখেছেন
গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হক বলেছেনঃ
ছায়া আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ,
” তোমরা আল্লাহর প্রণীত বিধিবিধান মেনে চল এবং আল্লাহর বিধিবিধান আনুযায়ী শাসন কর”—— এই নির্দেশে এবং কোন দেশের সংবিধান অনুযায়ী শাসনের মধ্যে কোন conflict or confusion নেই। কারন কোন গণতান্ত্রিক দেশের সংবিধানে কখন কোন ধর্ম বিরোধী —–তা সে যেকোন ধর্ম ( হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, ইসলাম) হোকনা কেন——- বিধিবিধান থাকতে পারে না। বাঙ্গলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানে ও কোন ধর্ম বিরোধী বিধান ছিল না। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর সামরিক ফরমান দিয়ে অন্যান্য ধর্মালম্বী নাগরিকদের ধর্ম বিশ্বাসের বিরোধী বিধান সংযোজন করা হয়। তাই আজ আমাদের এই দুর্ভোগ, আমরা অনর্থক তর্ক করে সময় নষ্ট করছি। অথচ সংবিধানের আসল বিষয় যা মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারে তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না।
ছায়া বলেছেনঃ
নাহুয়াল মিথ আমার স্বপ্ন দেখাতে আপনার সমস্যা আছে? আপনাকে কি জোর করে ইসলামে ঢোকার জন্য বলছি? আর মহামতি বলে ব্যাঙ্গ করছেন কেন? আমার চুলকাচ্ছে না দয়া করে চুলকাতে আসবেন না আমাকে।
ধন্যবাদ না বলা সত্ত্বেও চুলকিয়ে দেয়ার জন্য। 😐
ছায়া বলেছেনঃ
গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হক আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ আমার মন্তব্যের রেসপন্স করার জন্য।
একটি বিষয়ে পরিষ্কার করবেন কি? আমাদের মুসলমানদের জন্য গনতন্ত্র সঠিক শাসন ব্যবস্থা নাকি ইসলামি? কোনটা?
আরব দেশে আন্দোলন হওয়ার পেছনে মূল কারণটা হচ্ছে সঠিক যোগ্য নেতার অভাবে।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হক বলেছেনঃ
আইন ও শাসন ব্যবস্থা এক নয়। আইন প্রয়োগ হলো শাসন ব্যবস্থা। প্রয়োজন অনুসারে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ও ইসলামে জ্ঞানি গুণীদের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে— সেটাও এক প্রকারের গণতন্ত্র। শাসন ব্যবস্থা সর্বদা গণতান্ত্রিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ তার বাইরে যে সব শাসন ব্যবস্থা আছে তা হলো—- প্রভুতন্ত্র (দাস সমাজ); রাজতন্ত্র, খালিফাতন্ত্র, বাদশাহীতন্ত্র; একনায়কতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র ইত্যাদি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বাইরে এগুলো গ্রহনীয় হতে পারে না।
যোগ্য নেতৃত্বের অভাব পূরণ করতে এবং নেতা নির্ধারণ করতে ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রয়োজন। নবি, রসুল তো আর আসবেন না।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হক বলেছেনঃ
ছায়া আপনাকে ৪র্থ পর্ব পড়তে অনুরোধ করছি। সেখানে শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন গুলোর উত্তর পাবেন।
ছায়া বলেছেনঃ
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি এটাই চাই —
লেখক বলেছেন:- প্রয়োজন অনুসারে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ও ইসলামে জ্ঞানি গুণীদের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে— সেটাও এক প্রকারের গণতন্ত্র।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হক বলেছেনঃ
সেক্টর কমান্ডাররা তাদের অবস্থা জানিয়েছেন।