অর্থনৈতিক মুক্তি-৫ম পর্ব

গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হক
Published : 17 June 2011, 04:29 AM
Updated : 17 June 2011, 04:29 AM

মানুষের জীবনযাপন প্রণালী সঞ্চয়– বিনিয়োগ– উৎপাদন– বিনিময়– বন্টন– ভোগ আর্থ-সামাজিক চক্রে প্রবাহিত হয়। সমাজের সকল মানুষ উক্ত চক্রের কর্মকান্ডে অংশগ্রহনের মাধ্যমে জীবনধারণ করে। তবে এই অংশগ্রহনের পরিমাণ ও পরিধি ব্যক্তি বিশেষে বিভিন্ন হয়।উক্ত আর্থ-সামাজিক চক্রের প্রতিটা ধাপ গণতান্ত্রিকভাবে সংগঠিত ও পরিচালিত না হলে সমাজে শাসন শোষণ সহ বহুবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়।জনগণের অংশ গ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক সমাজ ও অর্থব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হয়।উক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়-

(ক) পুঁজি ও উৎপাদনের উপায়ের ব্যক্তি মালিকানা থাকবে; তা শ্রমদানকারীদের নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং উৎপাদনের মালিকানাহীন শ্রমিক শ্রেণীর অবসান হবে। শ্রমদানকারী শ্রমিকদের ও সামর্থ অনুযায়ী মূলধনের মালিকানা থাকবে।

(খ) উৎপাদনের উদ্দেশ্য হবে সকল জনগণের চাহিদা পূরণ।

(গ) প্রতিযোগিতা মূলক বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে বিনিময়, বন্টন ও মূল্য নির্ধারণ করা হবে। ক্রেতা বিক্রেতা স্বাধীন চয়েস ও সামর্থ অনুযায়ী বাজারে অংশগ্রহন করতে পারবে।
অর্থনৈতিক চক্রের প্রতিটা ধাপ গণতান্ত্রিক করতে হলে নিম্ন পদক্ষেপ নিতে হবেঃ

১। সঞ্চয় ও বিনিয়োগঃ সঞ্চয়ের শর্ত হলো, যে সঞ্চয় করবে তার ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশী হবে। অর্থাৎ সঞ্চয়কারী আয় (মজুরী,বেতন,লাভ,সুদ, ভাড়া ইত্যাদি) তার জীবনযাপনের চাহিদা পূরণের পণ্য ও সেবার জন্য ব্যয়ের তুলনায় বেশী হতে হবে। তাছাড়া সঞ্চয়ের ইনসেনটিভ তথা সঞ্চিত পুজি বিনিয়োগ করে আয় করার সুযোগ থাকতে হবে। সঞ্চয়কারী যাতে মুক্ত স্বাধীন বিনিয়োগ পরিবেশে প্রতযোগিতা মূলক লাভে বিনিয়োগ করতে পারে তার গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকতে হবে। বিশেষ করে মূলধন ও পুঁজি মালিকানার গণতন্ত্রায়ন করতে হলে স্থানীয় পর্যায়ে( থানা ও জেলা) পুজি বাজার, শেয়ার মার্কেট ও স্টক মার্কেট গড়ে তুলতে হবে।

২। বিনিয়োগ ও উতপাদনঃ পণ্য ও সেবা উৎপাদনকারী ফার্ম ও কারখানা প্রতিষ্ঠান সমূহ গণতান্ত্রিকভাবে গঠিত ও পরিচালিত হতে হবে। পরিচালনাকারী পরিষদ বিনিয়োগকারীদের দ্বারা নির্বাচিত হবে।ব্যক্তি মালিকানার সুযোগ নিয়ে মনোপলি, মূল্য বৃদ্ধি, মজুতদারি ইত্যাদি সমস্যা নিরসনে সরকার ও স্থানীয় পার্লামেন্ট(স্থানীয় সংসদ) কার্যকরী ব্যবস্থা নেবে।

৩। বিনিময় ও বন্টনঃ উৎপাদিত পণ্য ভোক্তাদের কাছে পরিবহন ও বাজারজাতের জন্য উৎপাদকদের তত্ত্বাবধানে পরিবহন ব্যবস্থা ও চেইন মার্কেট থাকবে। পরিবহন ও বাজার ব্যবস্থা নির্বাচিত পরিষদ ও স্থানীয় পার্লামেন্ট বা সংসদ দ্বারা পরিচালিত হবে।

৪। বন্টন ও ভোগঃ প্রতিযোগিতা মূলক বাজার ব্যবস্থায় ভোক্তারা যাতে পণ্য ও সেবা ক্রয় করতে পারে তার জন্য সবার কর্ম সংস্থান ও উপযুক্ত পরিমাণ আয়ের সুযোগ থাকতে হবে। পণ্য ও সেবার বাজার মূল্যের সাথে ক্রয় ক্ষমতার সামঞ্জস্য বজায় রাখতে অর্থব্যবস্থার পরিচালনা গণতান্ত্রিক হতে হবে।

মানব সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা নিত্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বহমান। ক্রমাগত নতুনত্বের ধারায় যেমন নব নব পণ্য ও সেবা উৎপাদন করা হয়; তেমনি উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তন ও উন্নয়ন হয়।পরিবর্তনশীল
প্রযুক্তির সাথে উৎপাদনকারী ও শ্রমিকদের জ্ঞান ও দক্ষতার উন্নতি সাধন প্রয়োজন হয়। নতুবা পেশাহারা হয়ে বেকারে পরিণত হতে হয় এবং দেশ ও উৎপাদন বিহীন আমদানি নির্ভর হয়। বাংলাদেশের কামার, কুমোর, তাতী, গোয়ালা, জেলে, মুচী,ছুতোর প্রভৃতি পেশাজীবিরা উন্নত প্রযুক্তির কাছে পরাজিত হয়ে বেকার দিনমজুরে পরিণত হয়েছে।বাংলাদেশে যারা শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের মঙ্গলের জন্য রাজনীতি করেন( বিশেষ করে বামপন্থী) তাদের উচিত হবে গ্রামে গঞ্জে দলের নেতৃত্বে দক্ষ কৃষক, শ্রমিক সৃষ্টির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ( কৃষি বিজ্ঞান, পলিটেকনিক, চিকিৎসা বিজ্ঞান, শিল্প বিজ্ঞান) গড়ে তোলা। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন, পেশার আধুনিকায়ন, এবং কর্ম সংস্থানের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের রাজনীতি আজ অতি দরকারী।তৃণমূল পর্যায় হতে জনগণের আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়নই সমাজ বদলের রাজনীতি। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি সরকার বদল করে; জনগণের ভাগ্য বদল করে না।