‘মানুষের সেন্টিমেন্ট’ বিবেচনায় সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও ইসলামের সংযুক্তি

গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হক
Published : 2 July 2011, 04:28 AM
Updated : 2 July 2011, 04:28 AM

সংবিধানে বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম যুক্ত করার যুক্তি হিসেবে " মানুষের সেন্টিমেন্ট" এর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উক্ত ধর্মীয় বাক্য সংবিধানে যোগ করা হয়েছিল বন্দুকের বলে এবং জিয়া, এরশাদের প্রেরণা ছিল পাকিস্তানী সেন্টিমেন্ট। সেই পাকিস্তানি সেন্টিমেন্টের ধর্মান্ধ এজেন্টরা ১৯৭৫ সালের হত্যাকান্ড ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ধর্মের লেবাস পরিয়ে পাকিস্তানি করণ করেছিল।যার সাথে জনগণের(মানুষের) সেন্টিমেন্টের কোন সংস্রব নেই।

জনগণের সেন্টিমেন্টের স্রোতে ভোটের প্রবাহ হয়। ক্ষমতার রাজনীতিতে যা গুরুত্বপূর্ণ। তবে সুবিধাবাদী রাজনীতিতে ক্ষমতাই মুখ্য; দেশ ও জনগণের মংগল গৌণ। তাই ক্ষমতায় যাওয়ার প্রবলতা অনেক সময় দেশ ও জনগণের অমংগল ডেকে আনে। ১৯৪৭ সালে জিন্নাহর সাথে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের তৎকালীন ক্ষমতালোভী গোষ্ঠী বাংলাকে ভাগ করে পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিলেন। তবে বাংলা ভাগের জন্য বাংগালী হিন্দু রাজনীতিকরাও একই ভাবে দায়ী ছিলেন।

জনগণের চাহিদা ছিল শাসকদের ( ব্রিটিশ ও হিন্দু জমিদার) শাসন শোষণ, অত্যাচার নিপীড়ন থেকে মুক্তিলাভ। রাজনীতিবিদদের প্রচার ছিল ব্রিটিশ থেকে স্বাধীনতা মুক্তির উপায় এবং মুসলিম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বাংলার মুসলিম জনগণকে ( যারা ছিল গ্রাম গঞ্জের কৃষক) বুঝিয়েছিলেন পাকিস্তান হলে হিন্দু জমিদারদের অত্যাচার থেকে তারা মুক্তি পাবে। সুতরাং জনগণের সেন্টিমেন্ট তৈরী হলো পাকিস্তানের পক্ষে এবং তারা একচেটিয়া ভোট দিলেন। ফলাফল স্বরূপ বাঙ্গলার জনগণ পাকিস্তানীদের শাসন শোষণে আবদ্ধ হলো।

১৯৪৮ সাল থেকে নানা ঘাত প্রতিঘাত ও আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মানুষ পাকিস্তানিদের থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য ঐক্যবদ্ধ হলো; ১৯৭০ সালের নির্বাচনে স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিল এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করলো। জনগণের ( কিছু পাকিস্তানপন্থী যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল তারা ব্যতীত) সেন্টিমেন্ট ও আকাঙ্খা ছিল অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শসন শোষণ মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ যা ১৯৭২ এর সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং ১ম,২য় ও ৩য় ভাগে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান পন্থী ষড়যন্ত্রকারীরা গণ হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের ন্যায় গণ বিরোধী রাষ্ট্রে পরিণত করলো। আজও তারা জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে অপব্যবহারে লিপ্ত আছে। কিন্তু জনগণের সেন্টিমেন্ট তাদের পক্ষে নয় যা ১৯৫৪, ১৯৭০, ২০০৮ সালের ভোটের ফলাফল প্রমাণ দেয়।
সুতরাং কিছু সংখ্যক ধর্মান্ধ পাকিস্তান পন্থীদের সেন্টিমেন্টকে জনগণের সেন্টিমেন্ট বলে ভুল করা কি সর্বনাশা ভুল হচ্ছে না? আমরা কি ভুল পথ থেকে ফিরে আসব, না বর্তমান পাকিস্তানের মত ধ্বংসের পথে যাব?

***
ফিচার ছবি: আন্তর্জাল