ব্যক্তি মানুষ সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশে জীবনযাপন করে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত উক্ত পরিবেশে তার শিক্ষা গ্রহন( অনানুষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক), দর্শনের সৃষ্টি, মানসিক ও চারিত্রিক গঠন সম্পন্ন হয় এবং সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশের সাথে বিক্রিয়া করে সে জীবনধারণের চাহিদা সমূহ পূরণে সক্রিয় থাকে। পরিবেশ বিরূপ, অসংগতিপূর্ণ ও অসহনীয় হলে এডজাস্ট করে; পরিবেশকে নিজের ফেভারে নেয়ার চেষ্টা করে অথবা সম্ভব হলে অন্য পরিবেশে চলে যায়। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশের সাথে মানুষের এই বিক্রিয়া সর্বদা ও সার্বক্ষণিকভাবে চলমান। এই হিসেবে মানুষ ও মানুষের জীবন পরিবর্তনশীল। আর এই পরিবর্তনের শিক্ষা গৃহীত হয় মস্তিষ্কে যা প্রতিফলিত হয় জীবনাচরণে।
ব্যক্তির জীবনযাপনে ন্যায় অন্যায়ের ধারণা, আদর্শ, মূল্যবোধ ইত্যাদি সংজ্ঞায়িত ও নির্ধারিত হয় নিয়ম ও আইনের দ্বারা। মানুষের জীবন ও তার সাথে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তনশীল ও ডাইনামিক। এজন্য নিয়ম ও আইনও পরিবর্তনশীল ও ডাইনামিক হওয়া অত্যাবশ্যক।তবে আদর্শ ও লক্ষ্য সল্প মেয়াদে পরিবর্তনীয় নয়। যে জন্য সমাজের মূল্যবোধ ও জীবনাদর্শ পূরণে রাষ্ট্রের সংবিধান প্রদত্ত বিধানগুলো দীর্ঘমেয়াদী হয়; কিন্তু চিরস্থায়ী নয়। সত্য বলতে কি জীবনের জন্য কোন ইজমই অপরিবর্তনীয় বা চিরস্থায়ী নয়।
কিন্তু সর্বোচ্চ বিবেচ্য বিষয় পরিবর্তনের ধারা ও পদ্ধতি। পরিবর্তন কি একজন, কতিপয় বা বহুজনের ইচ্ছানুসারে বা ক্ষমতাধরের ক্ষমতাবলে হবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ।সমাজ ও রাষ্ট্র যেহেতু বহুজনের(জনগণের) জীবনযাপনের পরিবেশ; সেহেতু পরিবর্তন বহুজনের ইচ্ছানুসারে ও অংশগ্রহণে হওয়া নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব। বহুজনের ইচ্ছানুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বলা হয়। গণতন্ত্রে সবার ঐক্যমতে সিদ্ধান্ত নেয়া বুঝালেও বাস্তবে সবাই একমত হওয়া সম্ভব হয় না। সে জন্য অধিকাংশের ইচ্ছা বা মতকে সবার মত হিসেবে নেয়া হয়। তারপরও যারা দ্বিমত পোষণ করেন তারা সংখ্যালঘু হন। গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠরা প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন এবং সংখ্যালঘিষ্টদের সেটা মেনে নিতে হয়। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা বলে সংখ্যালঘিষ্টদের জীবনের ধর্মবিশ্বাস, ভাষা সস্কৃতি, জীবনাচার ইত্যাদি পরিবর্তন করা বৈধ নয়। বরং তাদের জীবনের স্বকীয়তা রক্ষা করা সংখ্যাগরিষ্ঠদের দায়িত্ব। অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালনায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেবলমাত্র সোসিও- ইকোনমিক এবং সোসিও- পলিটিক্যাল সংক্রান্ত বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
একজন ব্যক্তির চিন্তা চেতনা যখন বহুজনের চিন্তা চেতনাকে প্রভাবিত করে এবং বহুজন যখন উক্ত ব্যক্তির চিন্তা চেতনাকে ধারণ ও অনুসরণ করে সক্রিয় হয়; তখন উক্ত ব্যক্তি সমাজের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। কিন্তু ব্যক্তি চিরস্থায়ী হয় না। সে তুলনায় সমাজ ও রাষ্ট্র দীর্ঘস্থায়ী।সুতরাং সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা ব্যক্তি নির্ভর হলে তা ঝুকিপূর্ণ হয়। কারণ ব্যক্তি ক্ষণস্থায়ী ও পরিবর্তনশীল। বিশেষ করে ব্যক্তি ক্ষমতাধারী হওয়ার পর পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার ঝুকি বাড়ে। অতএব রাষ্ট্র ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যেন রাষ্ট্র পরিচালনাকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ রাষ্ট্র ক্ষমতা অন্যায়ভাবে ব্যবহার করতে না পারে; এটা তাদের সততা ও সদিচ্ছা নির্ভর হবে না।
রাষ্ট্রে উক্ত ব্যবস্থা স্থাপনের পদ্ধতি হলো রাষ্ট্রের সেবাগ্রহীতাদের( জনগণ) দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের নিয়ন্ত্রন করা। জনগণ সর্বদা রাষ্ট্র থেকে মঙ্গলজনক সেবা পেতে চায়। অতএব তারা রাষ্ট্রকে অমঙ্গল জনক হতে দেবে না। দুর্নীতি দমন কমিশন, ন্যায়পাল, পুলিশ, বিচার ইত্যাদি ব্যবস্থা আমলাতান্ত্রিক ও ঘটনা-পরবর্তী ব্যবস্থা এবং সংশোধন মুলক; প্রতিরোধ মুলক ব্যবস্থা নয়।কিন্তু প্রতিরোধ সর্বদা সংশোধনের চেয়ে উত্তম। সুতরাং সর্বস্তরে জনগণের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সমাজ ও রাষ্ট্রকে মঙ্গল জনক করার উপায়।