মুভি: দ্য বয় ইন দ্যা স্ট্রাইপড পাজামাস (২০০৮)

ফাহিম ইবনে সারওয়ার
Published : 25 April 2011, 02:07 PM
Updated : 25 April 2011, 02:07 PM

সিনেমাটা করা হয়েছে আইরিশ লেখক জন বয়নে (John Boyne) এর একই নামের উপন্যাস নিয়ে, যা ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয়। আর ২০০৮ সালে মার্ক হারমেন নির্মাণ করেন চলচ্চিত্রটি। ইংরেজি ভাষায় নির্মিত ছবিটি গড়ে উঠেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ইহুদিদের প্রতি জার্মান সেনাবাহিনীর অত্যাচারের উপর ভিত্তি করে। নাটকীয়ভাবে শেষ হওয়া এই সিনেমা দর্শককে আবেগাপ্লুত করে তোলে।

ছবির মূল চরিত্র ৮ বছরের জার্মান বালক ব্রুনো, যার বাবা জার্মান সেনাবাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ অফিসার। সিনেমার শুরুতে ব্রুনো তার পরিবারের সাথে বার্লিন ছেড়ে বাবার নতুন কর্মস্থলে চলে যায়। ব্রুনোর পরিবারে রয়েছে বাবা,মা এবং ১২ বছর বয়সী বড় বোন গ্রেটেল।

নতুন জায়গায় আসার ব্যপারে ব্রুনোর একদমই মত ছিলোনা, কারন সে তার বার্লিনের বন্ধুদের ছেড়ে আসতে চায়নি। তবুও নতুন জায়গায় বন্ধু খুঁজে পাবার চেষ্টা করে সে। কিন্তু সেনানিবাসে সে তার খেলার সাথী হিসেবে কাউকেই খুঁজে পায়না, শুধুমাত্র তার জানালা থেকে দেখা দূরের খামারের কিছু পাজামা পড়া শিশু ছাড়া। তাও সেখানে তার যেতে মানা।

বাসার পেছনের দিকে একটি দরজা দেখতে পায় ব্রুনো। ব্রুনোর ইচ্ছা আবিষ্কারক (explorer) হবার। পেছনের দরজা দিয়ে তাই সে একদিন বেড়িয়ে পড়ে আবিস্কারের নেশায়। জঙ্গলের পথ ঘুরে সে গিয়ে সেই খামারের কাঁটাতারের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়, সেখানে সে পরিচিত হয় ডোরাকাটা (স্ট্রাইপড) পাজামা পড়া তার বয়সী এক ইহুদি ছেলে, যার নাম শিমুয়েল। নামটা খুবই অদ্ভূত লাগে ব্রুনোর কাছে। এমন নাম এর আগে কখনো শোনেনি সে।

শিমুয়েল তাকে জানায় যে এটা কোন খামার নয়, এটা ক্যাম্প যেখানে ইহুদিদের রাখা হয়েছে। ক্যাম্পের ভেতরে একটা চুল্লি দেখা যায়, সেই চুল্লি থেকে যখন ধোঁয়া ওড়ে তখন বিশ্রী গন্ধ বের হয়।

ব্রুনোর বাসার আশেপাশে স্কুলই নেই যে নতুন বন্ধু হবে। বাড়িতে একজন বৃদ্ধ শিক্ষক দুই ভাইবোনকে পড়াতে আসেন। সেই শিক্ষক দুই ভাইবোনকে জার্মান জাতীয়তাবাদের শিক্ষা দিতে থাকেন এবং বলেন, পৃথিবীতে কোন ভালো ইহুদি নেই। ইহুদি মানেই শয়তান।

এমনকি ব্রুনোর শিক্ষকের ভাষায়, 'তুমি যদি কোনদিন একজন ভালো ইহুদিকে খুঁজে বের করতে পারো, তবে তুমি একজন ভালো আবিষ্কারক হতে পারবে।'

বন্ধুহীন ব্রুনোর নতুন জীবনে একমাত্র বন্ধু হয়ে ওঠে শিমুয়েল। দুই বন্ধু ক্যাম্পের কাঁটাতারের দুই পাশে বসে গল্প করে, খেলে সময় কাটায়। এর মধ্যে একদিন শিমুয়েল জানায় তার বাবাকে সে খুঁজে পাচ্ছেনা, সে ক্যাম্পে সৈনিকদের সাথে বের হয়েছিলো, তারপর আর ফিরে আসেনি। ব্রুনো বলে সে যদি ক্যাম্পের ভেতরে প্রবেশ করে তাহলে তারা দুজন মিলে নিশ্চয়ই শিমুয়েলের বাবাকে খুঁজে বের করতে পারবে।

এদিকে ব্রুনোর মা যখন জানতে পারেন ক্যাম্পগুলোতে চুল্লির ভেতরে ইহুদিদের পোড়ানো হয় এবং নানাভাবে নির্যাতন করা হয়, তখন তিনি তার ছেলেমেয়েদের এই সেনানিবাস থেকে দূরে নিয়ে যেতে চাইলের, কারন তাদের বাড়ন্ত বয়সে এধরনের অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে তাদের জীবনের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ঠিক হয় ব্রুনো এবং তার বোন মায়ের সাথে হাইডেলবার্গে চলে যাবে। কিন্তু ব্রুনো যেতে চায়না, যেমনটি সে বার্লিন ছেড়ে আসতে চায়নি।

যেদিন দুপুরে হাইডেলবার্গ রওনা হওয়ার কথা ব্রুনোর সেদিন সকালেই সে ক্যাম্পের দিকে যায়, উদ্দেশ্য সে আর শিমুয়েল মিলে শিমুয়েলের বাবাকে খুঁজে বের করবে। কাঁটাতারের নিচ থেকে মাটি খুঁড়ে ক্যাম্পে ঢোকে ব্রুনো, আর সবার মতই পড়ে নেয় ডোরাকাটা (স্ট্রাইপড) পাজামা।

কিন্তু ব্রুনো এবং শিমুয়েলসহ অন্যান্য ইহুদিদের সেনারা নিয়ে চলে সেই চুল্লির দিকে আর এদিকে ব্রুনোর খোঁজে ছুটে আসতে থাকে ব্রুনোর বাবা-মা এবং বোন।

মুক্তিকাল: সেপ্টেম্বর ১২,২০০৮ (যুক্তরাষ্ট্র), নভেম্বর ৭,২০০৮ (যুক্তরাজ্য)
দৈর্ঘ্য: ৯৪ মিনিট
ছবিটি প্রযোজনা করেছেন ডেভিড হ্যামেন
পরিচালনা: মার্ক হারমেন
চিত্রনাট্য: নিজের উপন্যান অবলম্বনে আইরিশ লেখক জন বয়নে
চিত্রগ্রহণে ছিলেন: বেনোট ডেলহমে
সম্পাদনা করেছেন: মাইকেল এলিস
সঙ্গীত পরিচালনা: জেমস হরনার
ব্রুনো চরিত্রে অভিনয় করেছে আসা বাটারফিল্ড, শিমুয়েল: জ্যাক স্ক্যানলন।
আরও অভিনয় করেছেন: ডেভিড থিওলিস, ভেরা ফার্মিগা, রুপার্ট ফ্রেন্ড।