‘ঢাকা ভার্সিটির মাস্তান’

ফাহিম ইবনে সারওয়ার
Published : 17 June 2017, 11:26 AM
Updated : 17 June 2017, 11:26 AM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু উচ্চ শিক্ষার জন্য নয়, শিক্ষার্থীরা এখানে শেখেন জীবনের পাঠ। তারপর ছড়িয়ে পড়েন সারা দেশে, বিশ্বে। জাতি হিসেবে আমাদের গর্বের, আশার স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ত্যাগ অনেক। দেশের যে কোন আন্দোলনের সূতিকাগার এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে কোন অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে কখনো ভয় পায়নি। যখন বাংলা ভাষা, আমাদের মাতৃভাষার উপর আঘাত এসেছিল, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে জিন্নাহর সামনেই 'নো নো' বলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এত এত অর্জন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে মানুষের গর্ব, অহংকার তো থাকবেই। এখনো বাংলাদেশের নিম্মবিত্ত, নিম্ম মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের উচ্চ শিক্ষার একমাত্র ভরসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দেশসেরা মেধাবীদের পদচারণায় সব সময় মুখর এই ক্যাম্পাস। তাই তো বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চা বিক্রেতারও অনেক ক্ষমতা। কারণ তার বানানো চা খেয়েই আজ অনেকে মন্ত্রী-আমলা, দেশসেরা লেখক, গায়ক, সাংবাদিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন টোকাই অন্য টোকাইদের চেয়ে বেশি বুদ্ধি রাখে। কারণ সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা চষে বেড়ায়। দেশসেরা মেধাবীদের সান্নিধ্য পায় সে।

আবার এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস যখন আইন ভেঙে বিপরীত দিক থেকে আসে তখন আমাদের আশাভঙ্গ হয়। সেই বাস যখন অসহায় রিকশাওয়ালাসহ যাত্রীদের চাপা দিয়ে যায় তখন আমরা ভীত হয়ে উঠি। আবার যখন দেখি ঢাকা ভার্সিটির স্টিকারওয়ালা গাড়ি থেকে বের হয়ে একজন বলছেন, 'আমরা ঢাকা ভার্সিটির মাস্তান'- তখন আমাদের লজ্জা লাগে। সেই ব্যক্তি যখন নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিচয় দিয়ে তার চেয়ে বয়সে কারো কলার ধরে কথা বলেন, পা ধরে মাফ চাইতে বলেন এবং সেই বয়স্ক ব্যক্তি পা ধরে মাফ চাইতে বাধ্য হন তখন আমাদের আর যাওয়ার জায়গা থাকে না। যেখান থেকে সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ হয়, সেই বিদ্যাপীঠের নাম ভাঙিয়ে যখন কেউ সড়ক আটকে প্রকাশ্য হুংকার দেয়, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর থেকে আমাদের আস্থা উঠে যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন পোর্টালগুলোতে একটি ভিডিও সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাল হয়েছে। একজন বাসের যাত্রী বাস থেকে ভিডিওটি করেছেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে একজন লোক নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিচয় দিয়ে আরেকজন বয়স্ক লোকের কলার ধরে শাসাচ্ছেন। পরে সেই বয়স্ক লোককে পা ধরে মাফ চাইতেও বাধ্য করেন। তখনই তিনি নিজের পরিচয় দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং 'ঢাকা ভার্সিটির মাস্তান' হিসেবে। অবস্থাদৃষ্টে যা বোঝা যায়, বয়স্ক লোকটি কোন এক বাসের চালক। এবং সেই বাসটির সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষকের গাড়ির দূর্ঘটনা ঘটেছে। আর সে কারণেই গাড়ি থেকে নেমে বাস চালকের কলার ধরে শাসিয়েছেন নিজেকে শিক্ষক পরিচয় দেয়া সেই ব্যক্তি।

বাস চালকের দোষে যদি দূর্ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেত, বাস মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যেত। তাকে শাস্তি দেয়ার আরো অনেক উপায় ছিল। কিন্তু এভাবে তাকে অপমান করাটা অমানবিক। আবার সেই অপমানের শক্তি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করাটা ঘোরতর অন্যায়।

ঢাকা ভার্সিটির মাস্তান পরিচয় দিলেও সেই ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নন বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। আলোচিত ব্যক্তি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাকে চিহ্নিত করে অবশ্যই শাস্তি দেয়া উচিত। যে কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নাম ভাঙিয়ে রাস্তায় শাসিয়ে বেড়াবে সেটা তো হতে পারে না। তবে সেই ব্যক্তি যে গাড়ি থেকে নেমেছিলেন সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ব্যবহৃত স্টিকার রয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট যে গাড়িটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষকের। সেই শিক্ষককেও চিহ্নিত করতে হবে। কারণ এই ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ার জন্য তিনিও অনেকাংশে দায়ী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে কেউ অন্যায় করে বেড়ালে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের নাম ভাঙিয়ে এভাবে কেউ মাস্তানি করতে পারে না!