সর্বশেষ ‘শিরোনামহীন’ এবং বাংলাদেশি ব্যান্ডের ভাঙা-গড়া

ফাহিম ইবনে সারওয়ার
Published : 9 Oct 2017, 03:26 AM
Updated : 9 Oct 2017, 03:26 AM

শিরোনামহীন ভেঙে গেছে। গান দিয়ে একটা প্রজন্ম তৈরি করেছিল শিরোনামহীন। তাদের জন্য এটা খুবই খারাপ খবর। ক্যাম্পাস লাইফে সন্ধ্যার পর হাঁটতে বের হলে কোথাও না কোথাও থেকে কেউ না কেউ খালি গলায় শিরোনামহীনের গান গাইতে গাইতে চলে যেত। এমনই একটা ব্যান্ড শিরোনামহীন।

শিরোনামহীন ভাঙার খবরটা পড়ে একসাথে সব ব্যান্ড ভাঙার খবরগুলো মনে করতে করতে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল। যা দেখলাম বাংলাদেশে এক ব্যান্ড ভেঙে আরেকটা সফল ব্যান্ড করার উদাহরণ খুবই কম, প্রায়ই নাই বলা চলে। এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় সব ব্যান্ড, ভেঙে যাওয়ার পর ভোকাল-মিউজিশিয়ান কেউই আর আগের অবস্থান ফিরে পাননি।

ব্যান্ড ভাঙার মূল কারণটাই মনে হয় স্টারডম। কে কত বড় স্টার। একজনের সাথে আরেকজনের মনোমালিন্য, হিংসা এইসব করেই বেশিরভাগ ব্যান্ড ভেঙেছে। আর সবসময় কষ্ট পেয়েছে শ্রোতারা যারা ব্যান্ড বলতে পাগল।

স্মৃতি আর নেট ঘেটে এই লেখা তৈরি করা হয়েছে। তথ্য বিভ্রম থাকতে পারে, ভুল থাকার সম্ভাবনাও আছে, তথ্য ঘাটতি আছে। তারপরও ব্যান্ড ভাঙার একটা ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে শুধরে দেব। আর কোন তথ্য যোগ করতে চাইলে সেটাও যোগ করা হবে। লেখাটা ক্রম পরিমার্জন ও পরিবর্ধন এর মধ্যে দিয়ে যাবে।

সোলস-রেঁনেসা-এলআরবি

সোলসের যাত্রা ১৯৭০ এর দশকে চট্টগ্রামে। অনেক ভাঙা-গড়ার পর এখন সোলসের লাইন আপে আছেন পার্থ-নাসিম-মাসুম-আশিক।নিজেদের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়ার জন্য এই লাইনআপে ভালোভাবেই টিকে আছে সোলস। অ্যালবাম না থাকলেও স্টেজে শোতে নিয়মিত তাদের পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশের পুরোনো ব্যান্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম সোলস। নকীব খান, তপন চৌধুরী, আইয়ুব বাচ্চু এক সময় সোলসে ছিলেন। (সোলসে আরো কারা ছিলেন সে তথ্য কারো জানা থাকলে যোগ করতে পারেন)।

১৯৮৫ সালে সোলস থেকে বেরিয়ে নকীব খান গঠন করেন রেঁনেসা। এই ব্যান্ডের সবাই মোটামুটি চাকরি বা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। গানও চালিয়ে যাচ্ছেন। রেঁনেসার ভাঙা গড়ার তেমন কোন খবর শুনি নাই। (কারো জানা থাকলে যোগ করুন)।

আইয়ুব বাচ্চু ১০ বছর লিড গিটারিস্ট হিসেবে সোলসে বাজিয়েছেন। এরপর নিজেই গড়েন এলআরবি। কৈশোর থেকে এলআরবি ব্যান্ডের গান শুনি। দীর্ঘদিন একই সেটআপ দেখেছি। আইয়ুব বাচ্চু-স্বপন-টুটুল-রিয়াদ। রিয়াদ ছিলেন ড্রামার। রিয়াদ একসময় বেরিয়ে যান বা তাকে বের করে দেন আইয়ুব বাচ্চু (ঠিক মনে নাই, জানা থাকলে সংশোধন করুন)। এলআরবি যেহেতু আইয়ুব বাচ্চুর হাতে গড়া ব্যান্ড সেখানে তার সিদ্ধান্তই সব। এরপর নিজের সলো ক্যারিয়ার গড়তে বেরিয়ে যান এসআই টুটুল। বাংলাদেশে ব্যান্ডের ইতিহাসে এসআই টুটুলের এলআরবি ছাড়াটাই মনে হয় সবচেয়ে সম্মানজনক ছিল। তিনি যেমন ব্যান্ড এবং গুরু আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন, তেমনি আইয়ুব বাচ্চুও আশীর্বাদ দিয়েছেন। কোন কাঁদা ছোড়াছুড়ি হয়নি। এসআই টুটুল এলআরবি ছাড়ার পর আর কিবোর্ড নিয়ে কোন ব্যান্ডের সাথে মঞ্চে ওঠেননি, গিটার বাজিয়েছেন। কারণ তিনি এলআরবির কিবোর্ডিস্ট ছিলেন। আর টুটুলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এলআরবিও পড়ে আর কোন কিবোর্ডিস্ট নেয়নি। গিটারিস্ট হিসেবে যোগ দেন মাসুদ। ড্রামার হিসেবে আসেন রোমেল। এখন এলআরবিতে আছেন আইয়ুব বাচ্চু-স্বপন-মাসুদ-রোমেল-শামীম। ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করে এলআরবি। ২৬ বছর হয়ে গেল। এলআরবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে মাত্র দুজন এখনো টিকে আছেন আইয়ুব বাচ্চু আর স্বপন।

ফিলিংস-নগর বাউল-অর্থহীন

জেমসের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের ব্যান্ড ফিলিংস (তবে জেমস ফিলিংস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কিনা জানি না। ফিলিংস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই)। এরপর ফিলিংস বিলুপ্ত হয়ে যায়, তৈরি হয় নগর বাউল। ফিলিংস সম্পর্কে আমার জানার পরিধি কম। তবে যতদূর মনে পড়ে ফিলিংস এর ড্রামার ছিলেন এহসাল এলাহি ফান্টি (তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই)। ফিলিংস বা জেমসের গানে ফান্টির মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট থাকতো। ফান্টি এখন নগর বাউলে আছেন কিনা জানি না। নগর বাউল মানেই জেমস। বাকিদের খবর আর জানি না। ফিলিংস ব্যান্ডে অর্থহীনের সুমনও ছিলেন। সেদিক থেকে দেখলে ফিলিংস ভেঙে দুইটা ব্যান্ড হয় নগর বাউল আর অর্থহীন। ফিলিংস বা নগর বাউলে এক সময় পান্থ কানাই ড্রামার হিসেবে ছিলেন। শোনা কথা, জেমসের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে ব্যান্ড ছেড়েছিলেন পান্থ। পরে 'তান্ডব' নামের একটা ব্যান্ড করেছিলেন পান্থ কানাই। এখন আছেন অণর্ব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস এর সাথে।

ফিডব্যাক-মাকসুদ ও ঢাকা

যাত্রা শুরু ১৯৭০ এর দশকে। ভোকাল মাকসুদ শুরুই করেছিলেন ইংরেজি গান গাওয়া দিয়ে। পরে অন্য বাংলা গান গাওয়া শুরু করেন। ১৯৮৭ এর দিকে পুরোদমে বাংলা রক গান শুরু করে ফিডব্যাক। এই ব্যান্ডে অনেক স্টার। মাকসুদ-ফুয়াদ নাসের বাবু-লাবু রহমান-পিয়ারু খান। ১৯৯৬ সালে ফিডব্যাক ছাড়েন মাকসুদ। মাকসুদ ও ঢাকা নামে নতুন ব্যান্ড করেন তবে ফিডব্যাকের মত জনপ্রিয়তা পায়নি ব্যান্ডটি। মাকসুদের বদলে এখন লুমিন ফিডব্যাকের ভোকাল হিসেবে আছেন। তার গায়কীতে মাকসুদের প্রচ্ছন্ন প্রভাব আছে। 'মেলায় যাইরে' বা 'মৌসুমী' গানটা ফিডব্যাকের হয়ে লুমিন যেমন গান তেমনি মাকসুদও গান।

ওয়ারফেইজ

১৯৮৪ সালের ৫ জুন যাত্রা শুরু করে ওয়ারফেইজ। বাংলাদেশে রক ব্যান্ডের ইতিহাস ওয়ারফেইজ ছাড়া লেখা যাবে না। ওয়ারফেইজ নতুন ধারা তৈরি করেছে বাংলা ব্যান্ডে। ওয়ারফেইজের ফাউন্ডার মেম্বার ছিলেন গিটারিস্ট কমল। প্রথম লাইন আপে ড্রামার টিপু ছিলেন কিনা নিশ্চিত না। তবে দীর্ঘ যাত্রায় ওয়ারফেইজের হাল ধরে রেখেছেন টিপু। তিন দশকের পথচলায় ভাঙা-গড়া হয়েছে প্রচুর। প্রথমে ভোকাল ছিলেন রাশেদ, তারপর সঞ্জয়, তারপর কিছুদিন বালাম, তারপর মিজান।

'জীবনধারা', 'অসামাজিক' অ্যালবামের ভোকাল ছিলেন সঞ্জয়। 'মনে পড়ে', 'বসে আছি' গানগুলো সঞ্জয়ের গাওয়া। 'মহারাজ' গানটা বালামের গাওয়া। মিজানের গাওয়া গানের মধ্যে আছে 'হতাশা', 'যত দূরেই থাকো'। এক সময় বেইজ বাজাতেন কমল, পরে বাবনা বাজিয়েছেন। অথর্হীনের বেজবাবা সুমনও কিছুদিন ওয়ারফেইজে ছিলেন।

ওয়ারফেইজ প্রচুর ভাঙা-গড়ার মধ্যে দিয়ে গেছে। বালাম সলো ক্যারিয়ার করেছেন (ব্যান্ডও করেছিলেন মনে হয়)। মিজান বেরিয়ে যাওয়ার পর বালাম ভোকাল হয়েছিলেন। পরে আবার মিজান ফিরে এসেছিলেন। সবশেষ নারী ও শিশু নির্যাতনের এক মামলায় গ্রেপ্তার হন মিজান। তাকে বাদ দেয়া হয়। পরে মিজান মনে হয় একটা ব্যান্ড করেছেন (নাম জানা থাকলে যোগ করুন)। মিজানের পরে রেডিও অ্যাক্টিভের সাবেক ভোকাল পলাশ ওয়ারফেইজে ভোকাল হিসেবে যোগ দেন।

মাইলস

১৯৮১ সালে মাইলসের যাত্রা শুরু। শুধু বাংলাদেশেই নয় উপমহাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলস। ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ তিন দেশেই মাইলস এক সময় তুমুল জনপ্রিয় ছিল। ২০১০ সালে ব্যান্ডে গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকার প্রতিবাদে বের হয়ে যান শাফিন আহমেদ। সেই সময়ে শাফিন-হামিন দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বের বিষয়টা সামনে আসে। 'রিদম অব লাইফ' নামে নতুন একটা ব্যান্ডও করেছিলেন শাফিন। পরে অবশ্য ওই বছরই মাইলসে ফেরত আসেন শাফিন। মাইলসের লাইন আপে আছেন দুর্দান্ত সব মিউজিশিয়ান হামিন-শাপিন-মানাম-তূর্য-জুয়েল।

আর্ক-স্বাধীনতা-জন্মভূমি

আর্ক ব্যান্ড ভাঙার পরে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আর্ক একটা নতুন ধারা তৈরি করতে পেরেছিল। হাসানের ভোকাল আর আশিকুজ্জামান টুলুর কম্পোজিশন দুইয়ের দুর্দান্ত কম্বিনেশন। আরো ছিলেন পঞ্চম। ১৯৯০ এর দশকে আর্ক যাত্রা শুরু করে। তাজমহল (১৯৯৬), জন্মভূমি (১৯৯৮) আর্কের ইতিহাস সৃষ্টিকারী অ্যালবাম।

আর্ক, হাসান তখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। পরে হাসান আর্ক থেকে বেরিয়ে যান, কিছুদিন সলো ক্যারিয়ার করার চেষ্টা করেন। এরপর 'স্বাধীনতা' নামে একটা ব্যান্ড করেন। সেটা জনপ্রিয়তা পায়নি। পরে আবার 'জন্মভূমি' নামের একটি ব্যান্ড করেন, সেটাও ফ্লপ। আর্কের মত উজ্জ্বল হয়ে আর কখনোই জ্বলতে পারেননি হাসান। অন্যদিকে টুলু কানাডা প্রবাসী ছিলেন, তিনি এখনো কানাডাতেই থাকেন। (টুলু পরে একটা ব্যান্ড করেছিলেন মনে হয়। 'তুমি এমন একটা প্রশ্ন করলে'- গানটা গেয়েছিলেন। ব্যান্ডটার নাম কি কেউ বলতে পারবেন? পঞ্চম কি কোন ব্যান্ড করেছিলেন নিজে?)

বাংলা-প্রেয়ার হল-অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস

এই শতাব্দীর শুরুর দিকে আলোড়ন তৈরি করেছিল 'বাংলা' নামের একটা ব্যান্ড। আনুশেহ-বুনো-অর্ণব। রকিং কম্বিনেশন। ফোক ফিউশন করে পুরো দেশ বিশেষ করে তরুণদের মাতিয়ে রেখেছিল বাংলা নামের এই ব্যান্ড। 'তোমার ঘরে বাস করে কারা', 'ঘাটে লাগাইয়া ডিঙা', 'মন তোরে পারলাম না বুঝাইতে' তরুণদের মুখে মুখে ছিল সে সময়।

আনুশেহ-বুনো একসময় বিয়ে করে। অর্ণব সলো ক্যারিয়ারে ঝুঁকতে থাকে। আনুশেহ-বুনোর বিয়ে ভেঙে যায়। এতসব ঘটনার মধ্যে দিয়ে হারিয়ে যায় ব্যান্ড বাংলা। পরে অণর্ব 'প্রেয়ার হল' নামে একটা ব্যান্ড করেছিল। একটা অ্যালবাম হয়েছিল, কিন্তু ব্যান্ড টেকেনি। এখন অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস নামে একটা ব্যান্ড আছে অর্ণবের। সেখানে বুনো আর পান্থ কানাই মোটামুটি নিয়মিতভাবেই থাকেন। আনুশেহ অনেকদিন ধরেই চুপচাপ।

ব্ল্যাক-তাহসান অ্যান্ড দ্য সুফিজ-ইন্দালো

নতুন লিরিক, মিউজিক, গায়কী, স্টাইল সব ছিল। এত ভালো ভালো গান কিন্তু নিজেদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে গেল ব্ল্যাক। জন-জাহান-টনি-তাহসান-মিরাজ এই ছিল লাইন আপ। ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু। আমার পৃথিবী (২০০১), উৎসবের পর (২০০৩), আবার (২০০৮)।

ব্ল্যাকের সেই সব গান শুনলে আমার কলেজ লাইফের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। কি সময় ছিল! সলো ক্যারিয়ার গড়তে তাহসান বেরিয়ে যান। রোড অ্যাকসিডেন্টে আহত হয়ে ব্যান্ড, গান দুটোই ছাড়েন মিরাজ। জন বেরিয়ে গিয়ে 'ইন্দালো' নামের ব্যান্ডে করেন। তাহসানও একটা ব্যান্ড করেন 'তাহসান অ্যান্ড দ্য সুফিজ' নামে। টনি আর জাহানের ব্ল্যাক এখনো আছে তবে আগের মত আর জৌলুশ নেই।

আর্টসেল

আর্টসেল আছে কি নাই এইটাই মাঝে মাঝে বোঝা যায় না। লিঙ্কন-এরশাদ-সাজু-সেজান। ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু। লিরিক, মিউজিক, গায়কী সবকিছুতেই বড় পরিবর্তন এনেছিল আর্টসেল। তরুণদের চুম্বকের মত টেনেছে আর্টসেলের মিউজিক। অনেকদিন ধরেই কোমায় আছে আমার অনেক প্রিয় এই ব্যান্ড। মনে পড়ে, জাহাঙ্গীরনগরে থাকতে আমাদের শহীদ সালাম-বরকত হলের বিভিন্ন রুমে সবচেয়ে বেশি বাজতে শুনতাম জেমস আর আর্টসেলের গান। সিনিয়রদের পছন্দ ছিল জেমস, জুনিয়রদের আর্টসেল।

চিরকুট

চিরকুট এখনো ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। গত বছর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পিন্টু ঘোষ বেরিয়ে গেছেন। ২০০২ সালে চিরকুটের যাত্রা শুরু। ভোকাল সুমি। লাইন আপে আরো আছেন ইমন-দিদার-পাভেল। এখন চিরকুটের সেরা সময় চলছে। ভালো লিরিক, মিউজিকের গানের জন্য চিরকুট অনেকদিন শ্রোতাদের মনে থেকে যাবে।

শিরোনামহীন

এই লেখা যে কারণে লেখা সেই কারণ হচ্ছে 'শিরোনামহীন'। যে কোন ব্যান্ডেই ভোকাল হচ্ছে প্রচ্ছদের মত। তুহিন বেরিয়ে যাওয়ার পর যেই আসুক না কেন শিরোনামহীনের আগের সেই আবেদন তার শ্রোতাদের কাছে থাকবে না। তাই ধরেই নিচ্ছি দ্বন্দ্ব মিটমাট না হলে শিরোনামহীন হয়তো নিশ্চিত মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যাবে। শীতের রাতে জাহাঙ্গীরনগরের মুক্তমঞ্চে শিরোনামহীনের সুরের মূর্ছনা আমার সারা জীবন মনে থাকবে।

মেঘদল

শিরোনামহীন ভাঙার খবর পাওয়ার পরই আমার প্রথম মাথায় এসেছে মেঘদলের কথা। দুইটা ব্যান্ডই সমসাময়িক। মেঘদল এখন অনেকটাই চুপচাপ। ব্যান্ডের সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। বিরতি দিয়ে দিয়ে কিছু কনসার্ট হয়। এই অবস্থা তাও অনেক ভালো আর্টসেল বা শিরোনামহীনের চেয়ে। মেঘদল যেন না ভাঙে, ঝিম মেরে থাকা বরং অনেক ভালো। মেঘদল থেকে অনেক আগেই বেরিয়ে গেছেন মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। তাতে অবশ্য ব্যান্ডের উপর খুব একটা প্রভাব পড়েনি।

জলের গান

জলের গান যেন কখনো না ভাঙে সেটা মনেপ্রাণে চাই। জলের গানের মিউজিকের মজাটাই আসে এর সদস্যদের ভেতরের খুনসুটি আর মজার সম্পর্কের কারণে। জলের গানের মত ব্যান্ড বাংলাদেশে আর কখনো হবে কিনা জানি না। তাই চাই এই ব্যান্ডটা যেন কখনো না ভাঙে।