কামারুজ্জামানের ফাঁসি ও গণমাধ্যমের নজরদারি

ফয়সাল মাহমুদ পল্লব
Published : 11 April 2015, 09:57 AM
Updated : 11 April 2015, 09:57 AM

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর নিয়ে এখনও অন্ধকারে রয়েছে সংবাদ মাধ্যমগুলো। গত ৬ এপ্রিল সোমবার একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। এদিন সকাল ৯ টা ৫ মিনিটে প্রধান নিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

এরপরই শুরু হয় কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতি বরাবর প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করবেন কিনা এমন প্রশ্ন। কিন্তু ইতিপূর্বেই কামারুজ্জামানের পক্ষ থেকে তার আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষা চাইবেন না। সে অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ফাঁসি কার্যকরে প্রায় সব পদক্ষেপ গ্রহন করে কারাগার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেখানে বাদসাধে রায়ের কপি জেলগেটে পৌছানো নিয়ে। রিভিউ পিটিশন খারিজের তিনদিন পর বুধবার তা জেলগেটে পৌছায়। ফলে বিলম্বিত হয় কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি।

বুধবার বিকাল ৪টা ৫২মিনিটে রায়ের কপি পৌছানোর পরপরই জেলগেটে ভিড় জমতে থাকে গণমাধ্যমকর্মীদের। জেলগেটের নিরাপত্তা জোড়দার করা হয় সেইসাথে সারাদেশের নিরাপত্তাও জোড়দার করা হয়। বিধি অনুযায়ী রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর তা কামারুজ্জামানকে পড়ে শোনানোসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে কারা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বুধবারও অজ্ঞাত কারণে রায় কার্যকর করা হয়নি।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কামারুজ্জামানের সাথে জেলগেটে দেখা করেন তার আনজীবীরা। এ্যাড. শিশির মনিরের নেতৃত্বে ৫ আইনজীবী কারাভ্যান্তরে প্রবেশ করে প্রায় ঘন্টাখানেক পরে বাইরে এসে জানান ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেননি কামারুজ্জামান। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন আরো সময় দেওয়া হবে কামারুজ্জামানকে। ফলে বৃহস্পতিবার ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে না এমনটিই প্রচার হতে থাকে গণমাধ্যমে। কিন্তু বিকেলের দিকে একটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন কামারুজ্জমানকে আর সময় দেয়া হচ্ছে না। ফলে জেলগেটে ভিড় বাড়তে থাকে গণমাধ্যমকর্মীদের। কিন্তু পরবর্তিতে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় কারাগারে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে কামারুজ্জামানের বক্তব্য নিয়ে তারপর পদক্ষেপ নিবেন।

সেই মোতাবেক শুক্রবার সকালে কারাভ্যন্তরে প্রবেশ করেন দুজন ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট কারাগার থেকে বেড়িয়ে সংবাদ মাধ্যমকে কোনকিছু না জানিয়ে সোজা চলে যান। ফলে গণমাধ্যম আবারো অন্ধকারে পরে। সংবাদ মাধ্যমগুলো মানুষকে জানাতে পারছিলো না সঠিক সংবাদটি। শুক্রবার সকালে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কামারুজ্জামানকে আর সময় দেয়া হচ্ছেনা এমন বক্তব্য দেয়ার পর আবারও ভিড় বাড়তে থাকে জেলগেটে। ওইদিন সন্ধ্যায় জেলখানায় পাঠানো হয় এম্বুলেন্স, ডাক্তার ফলে গণমাধ্যম ধরেই নেয় আজ রাতেই ফাঁসি হয়ে যাচ্ছে কামারুজ্জামানের। কিন্তু শুক্রবারও যে কোন কারণেই হোক ফাঁসি কার্যকর করা হয়নি।

শুক্রবার রাতে স্বরাষ্ট্রপতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংবাদিকদের বলেন শনিবার রাতে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হবে। সংবাদ মাধ্যমগুলো সে হিসেবে তাদের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম করেছে। কিন্তু আজ শনিবার কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হবে কিনা এনিয়ে সন্দেহও প্রকাশ করেছে অনেক সংবাদ মাধ্যম। ফাঁসি কার্যকরের বিলম্ব নিয়ে সম্পাদকীয়ও লিখেছে অনেক পত্রিকা। তবে দ্রুত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হবে বলে আশাবাদ জানিয়েছে অনেক সংবাদ মাধ্যম।

২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত বছরের ৩ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। চলতি বছর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছায়। ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় কামারুজ্জামানের
পক্ষে রিভিউ আবেদন করা হয়। ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুটিতে মৃত্যুদণ্ড, দুটিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।