মানব কণ্ঠঃ অমানবতার কণ্ঠ নিয়ে আত্মপ্রকাশের পদধ্বনি

সাজেদুল আমিন চৌধুরী রুবেল
Published : 10 Sept 2012, 05:49 PM
Updated : 10 Sept 2012, 05:49 PM

গতকাল ছোট ভাইকে ফোন দিলাম। ভেজা কণ্ঠ। চাকরিটা হারিয়ে ফেলেছে অর্থাৎ তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এক যুগেরও বেশী সময় ধরে মিডিয়াতে কাজ করে আসছিলো। আজকের সূর্যোদয়, ভোরের ডাক, দেশ বাংলা, বাংলা বাজারে কাজ করার পর পরিশেষে দৈনিক সংবাদে এসে একটি বিভাগীয় শহরে থেকে বেশ ক'বছর যাবত ব্যুরোচীপের দায়িত্ব পালন করছিলো। এরি মধ্যে একটি জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে সমুজ্জ্বল ভবিষ্যতের তাড়নায় দৈনিক মানব কণ্ঠে "ব্যুরো প্রধান" পদে আবেদন করে ও গত ২ মে ২০১২ ইন্টারভিউ দেয়। কিছুদিন পর জানতে পারে কোন এক অদৃশ্য কারণে সেখানে তাঁর চাকরিটা হয়নি। এক সাবেক ছাত্র শিবির "নেতাকে" ওই পদে নিয়োগ দান করা হয়।

পরবর্তীতে ৩১ মে ২০১২ সহসাই তাকে ফোন করে বলা হয় ২ জুন ২০১২ মানব কণ্ঠ অফিসে উপস্থিত থাকার জন্য। সেখানে গেলে তাকে সারা দেশের প্রতিনিধিদের সাথে ওই বিভাগীয় শহরের "স্টাফ রিপোর্টার" পদে নিয়োগ দেয়া হয়। একজন প্রগতিশীল মনের সাংবাদিক হিসেবে একজন প্রতিক্রিয়াশীল মনের সাংবাদিকের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয় বলে নিয়োগপত্র গ্রহনে অসম্মতি জানালে পত্রিকাটির প্রাক্তন কনসালটেন্ট অফিসার জনাব নাজমুল আশরাফ (যিনি বর্তমানে ইস্তফা দিয়েছেন অথবা অব্যাহতি পেয়েছেন) বললেন, ইন্টারভিউ বোর্ড আপনাকেই ব্যুরো প্রধান হিসেবে সিলেকশন করেছিলো। যে কোন কারনেই হোক ওই বিশেষ ভদ্রলোক নিয়োগ পেয়েছেন। আপনি আপনার মতো কাজ করুন, তিনি তাঁর মতো কাজ করবেন। শর্ত একটাই, যে পত্রিকায় বর্তমানে আছেন তা ছেড়ে এখানে কাজ করতে হবে।" অবশেষে তা মেনে নিয়ে দৈনিক সংবাদ ছেড়ে দিয়ে মানব কণ্ঠে যোগদান করে। একজন পেশাদার রিপোর্টার হিসেবে প্রতিদিন ৭ থেকে ১৫টি খবর সে মানব কণ্ঠে প্রেরন করে। গত জুন ও জুলাই এ দুমাসে অন্তত ৫০০ টি রিপোর্ট ডামি সংখ্যায় পাঠিয়েছে। বিশ্বস্ত সুত্রমতে, সে-ই একমাত্র বিভাগীয় রিপোর্টার যে কিনা সর্বাধিক রিপোর্ট পাঠিয়ে বার্তা বিভাগেরও সন্তুষ্টি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।

এ সময়ের মধ্যে পত্রিকাটির সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন প্রখ্যাত সাংবাদিক জনাব শাজাহান সর্দার। মাঠ পর্যায়ের একজন সাংবাদিক থেকে চৌকস সম্পাদক হিসেবে রয়েছে তাঁর যথেষ্ট সুনাম। তিনি এসেই তাঁর মতো সবকিছু গোছগাছ করা শুরু করলেন। জামায়াতপন্থী ওই ব্যুরো প্রধান সহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কর্মরত বেশ কয়েকজনকে ছাটাই করলেন। তটস্থ অনেকেই তাঁর সাথে ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। কিন্তু "তোষামোদি" করা হবে ভেবে আমার ছোট ভাইটি সম্পাদক মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করা থেকে বিরত থাকে। ভেবেছিল, তাঁর কাজের মুল্যায়ন দেখে তিনি নিজেই হয়তোবা তাকে ঢাকায় তলব করবেন।

না, তিনি তা করেননি। বরং ২৩ আগস্ট ২০১২ পত্রিকাটির মানবসম্পদ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এ, কিউ মাহমুদ উল্লাহ বেশ শক্ত ভাবেই বললেন, " আপনাকে অব্যাহতি পত্র পাঠানোর পরও কাল (২২ আগস্ট) কেন নিউজ পাঠালেন?" মানব কণ্ঠ থেকে প্রেরিত কোন অব্যাহতি পত্র সে পায়নি জানালে মানবসম্পদ প্রধান ২৬ জুলাই ২০১২ তা পাঠানো হয়েছে বলে দাবী করেন। অথচ প্রায় এক মাস অতিবাহিত হলেও এ ধরনের কোন পত্র তাঁর হস্তগত হয়নি। বরং নিয়মিত সে বার্তা বিভাগের ডিকটেশনেই পত্রিকাটিতে খবর পরিবেশন করেছে। এমনকি ২৩ আগস্ট ২০১২ এর ডামি সংখ্যাতেও তাঁর নাম সম্বলিত একটি রিপোর্ট ছাপা হয়। এ ব্যপারে বার্তা বিভাগে যোগাযোগ করা হলে তারা কিছুই জানেনা বলে তাকে জানান। এরপর ২৭ আগস্ট ২০১২ কন্টিনেন্টাল কুরিয়ার সার্ভিস মানব কণ্ঠ থেকে প্রেরিত একটি চিঠি তাকে দিয়ে যায়। খাম খোলে দেখতে পায়, মানব সম্পদ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের স্বাক্ষরিত একটি "অব্যাহতি পত্র" যার মধ্যে তারিখ লেখা রয়েছে ২৬ জুলাই ২০১২ এবং তা ০১ আগস্ট ২০১২ থেকে কার্যকর হবে উল্লেখ রয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, চিঠির মধ্যে ২৬ জুলাই লেখা থাকলেও তা' পাঠানো হয়েছে ২৫ আগস্ট ২০১২এ কন্টিনেন্টাল কুরিয়ার সার্ভিস, গুলশান ১ শাখা থেকে। ২৫ আগস্ট ২০১২এ প্রেরিত চিঠি কিভাবে ০১ আগস্ট ২০১২ থেকে কার্যকর হয় তা আমাদের জানা নেই।

ধরে নিলাম, "প্রবিশান পেরিয়ড" বলতে যেহেতু একটি কথা রয়েছে, তার আলোকে কর্তৃপক্ষ কোন কারণ ছাড়াই তাকে বরখাস্ত করতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এক মাস পরে অব্যাহতি পত্র ইস্যু করে কোন মনমানসিকতায় কর্তৃপক্ষ এক মাস আগে থেকেই তা কার্যকর হওয়ার অনৈতিক দাবী জানান? এ অসংলগ্ন ও অন্যায় কার্যকরী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সম্পাদক সাহেবকে চিঠি লিখে ও পরবর্তীতে সরাসরি যোগাযোগ করেও কোন ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।

জীবন চলার তাগিদে দুটো পয়সা বেশী পাবার আশায় মানব কণ্ঠ কর্তৃপক্ষের শর্তানুযায়ী দৈনিক সংবাদের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ছেড়ে এসে সে কিনা আজ একুল ওকুল দু কোল হারিয়ে পুরোপুরিই বেকার। যন্ত্রের মতো কাজ করে মিডিয়ার পেছনে জীবনটা বিলিয়ে দিলেও মিডিয়াই আজ তাকে ইনসাফ বঞ্চিত করলো। পত্রিকাটি এখনো বাজারে আসেনি। বলতে গেলে আঁতুড় ঘরেই রয়েছে।আত্মপ্রকাশের আগেই আমার ছোট ভাই কিংবা তার মতো অনেকের পেটে লাথি দিয়ে মানব কণ্ঠ যে অন্যায়, অবিচার ও অমানবিক কাজটি করেছে এর বিরুদ্ধে কৈফিয়ত তলব করাটা তাদের মতো মফস্বল "চুনোপুঁটিদের" পক্ষে হয়তোবা সম্ভব হয়ে উঠবে না সত্যি কিন্তু এর সাথে সংশ্লিষ্ট শক্তিধর রুই কাতলাদের আজ না হয় কাল মহান অদৃশ্য শক্তির কাছে জবাবদিহি করতেই হবে।

লিমরিক, আয়ারল্যান্ড
০৮/০৯/২০১২