এ অপমান শধু কামালের নয়, পুরো জাতির

সাজেদুল আমিন চৌধুরী রুবেল
Published : 1 April 2015, 11:13 AM
Updated : 1 April 2015, 11:13 AM

"গরীব দেশের মানুষ বলে কি ওরা যাচ্ছেতাই ব্যবহার করবে আমাদের সাথে? এর একটা বিহিত হওয়া উচিৎ।" আইসিসির সভাপতি মুস্তফা কামালকে বিশ্বকাপের ট্রফি বিজয়ী দলের অধিনায়ক ক্লার্কের হাতে তুলে দিতে না দেওয়ায় এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আমার ক্রিকেটভক্ত এক বন্ধু।

এক আইরিশ সহকর্মী বেশ আক্ষেপের সাথে বললেন, "বিজয়ীর হাতে ওয়ার্ল্ডকাপ তুলে দেয়ার জন্য তোমাদের কামালকে সুযোগটি না দিয়ে আইসিসি মোটেই ভাল কাজটি করেনি। ইট'স ভেরি শেম।"

সত্যি শেম। কিন্তু কারো মাথা না থাকলে যেমন মাথাব্যথা থাকেনা কিংবা কান ও নাক না থাকলে যেমন শ্রবণ ও ঘ্রানশক্তি থাকেনা তেমনি কারো লজ্জাবোধ না থাকলে তার লজ্জা থাকে কি করে! আইসিসির যদি বিন্দু পরিমান লজ্জা ও আইনের প্রতি ভীতি ও শ্রদ্ধাবোধ থাকতো তাহলে প্রতিষ্ঠানটি এভাবে একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে যেতে পারতোনা। সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট টুর্নামেন্টে আইসিসির বেতনভুক্ত কর্মচারী হয়েও আম্পেয়াররা পারসিয়ালিটির মাধ্যমে বাঙ্গালিদের মনে যে ক্ষতের সৃষ্টি করেছে তার দাগ শুকাতে না শুকাতেই আবারো হৃদয়ে পীড়ন ঘটিয়ে সংস্থাটি আরেকটি নতুন ঘটনার জন্ম দিয়েছে।

পৃথিবীর সর্বত্রই যে কোন আচার অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণীর কাজটি সাধারণত সভাপতিই করে থাকেন। আইসিসির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। গঠনতন্ত্রে সভাপতিকে ট্রফি প্রদানের মর্যাদা দান করলেও "আইসিসির কোড অফ কন্ডাক্ট" ভাঙ্গার অভিযোগ এনে বর্তমান সভাপতি মুস্তফা কামালকে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ বিজয়ী অধিনায়ক ক্লার্কের হাতে ট্রফি তুলে দিতে দেয়নি। ধুর্ততার আশ্রয় নিয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ভারতীয় নাগরিক শ্রী নিবাসন আইনের তোয়াক্কা না করে অনেকটা গায়ের জোরেই সভাপতিকে মর্যাদা বঞ্চিত করেন। বর্তমান আইসিসি প্রেসিডেন্ট যদি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড বা অন্য কোন শক্তিশালি দেশের নাগরিক হতেন তবে কি নিবাসনের পক্ষে এ অপমান সুচক দুর্ব্যবহারটি করা আদৌ সম্ভব হতো?  সভাপতি একজন বাংলাদেশি বলেই কি তাকে এভাবে অপমান অপদস্থ করে নিবাসন এতো সহজে পার পেয়ে যাচ্ছে?

ট্রফি তুলে দেয়া নিয়ে মি নিবাসন যে সস্তা ও নিকৃষ্ট মনের পরিচয় দিয়েছেন তাতে সচেতন বিশ্ব তার উপর বমি উদ্গিরন করলেও এ কথা বলতেই হয় কামালকে অবমাননার মাধ্যমে যে অপমান তিনি করেছেন তা কেবল ব্যক্তি কামালের অপমান নয়, এ অপমান পুরো জাতির।

তাই আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে নিজেদেরকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে হলে এ অপমানের দাতভাঙ্গা জবাব দেয়া প্রয়োজন। এ জন্য শুধু কামাল সাহেবকে একা লড়লে চলবেনা। বিসিবি সহ অন্যান্য নেতৃ বৃন্দকেও এগিয়ে এসে শক্তিশালী ভুমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতের শরনাপন্ন হওয়া যেতে পারে।

ক্রিকেটপ্রেমী জনগণেরও ভুমিকা রয়েছে। ইচ্ছে করলে তাঁরা ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাও করে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদলিপি জমা দিতে পারেন।

দেশ ও জাতির মর্যাদা রক্ষায় সরকারের গুরু দায়িত্বকে অস্বীকার করার কোন জো নেই। খবরে দেখলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে এ অবাঞ্চিত ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্ত এখানেই শেষ নয়। সরকারকে আন্তর্জাতিক ভাবে আরও কৌশলী হতে হবে। এবং এ অপমানের প্রতিকার নেয়ার জন্য জনাব কামালকে যখন যেভাবে সহযোগিতা বা পরামর্শ প্রদানের প্রয়োজন হয় তখনই সরকারকে উদার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

মনে রাখতে হবে, আঘাত ও অপমানের মধ্যে আঘাতের কথা সহজে ভুলা গেলেও অপমানের কথা অত সহজে ভুলা যায়না।

লিমরিক, আয়ারল্যান্ড