লেখালেখি ও পাঠকের প্রতিক্রিয়া অতপরঃ কিছু কথা

সাজেদুল আমিন চৌধুরী রুবেল
Published : 3 Oct 2011, 03:07 PM
Updated : 3 Oct 2011, 03:07 PM

ক'দিন আগে অনলাইন সংস্করিত একটি পত্রিকায় আমার "ক্ষমতাবান মন্ত্রীদের গনতান্ত্রিক আচরন!" নামে একটি লিখা প্রকাশ হবার পর প্রথমেই যার ফোন পেলাম তিনি হলেন আয়ারল্যান্ডস্থ বাংলাদেশ আওয়ামিলীগের সভাপতি জনাব মিরাজ শিকদার। ভেবেছিলাম আমার কড়া লিখাটি পড়ে তিনি হয়তবা দু একটি কড়া কথা শুনানোর জন্য আমাকে ফোন দিয়েছেন। কিন্তু আমার ভাবনাটা মোটেই সঠিক ছিলনা। বর্তমান আওয়ামি সরকারের কিছু মন্ত্রীদের কড়া সমালোচনা পড়ে একটি ভিনদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের এ সভাপতি আমাকে কোন গরম কথা বলেননি। উপরন্তু লেখাটির ভূয়োশি প্রশংসা করে তিনি তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা বরাবর লেখাটিকে পৌঁছানোর তাগাদা অনুভব করলেন। এ জন্য তিনি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ সভাপতির শরনাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন হলে তাই করবেন বলে আমাকে জানালেন।

গতকাল বিডি নিউজ ব্লগে অন্য আরেকটি লিখা প্রকাশ হবার পর কিছু সম্মানিত পাঠক পক্ষে বিপক্ষে মন্তব্য করেছেন। কেউ হয়তবা পক্ষপাত দুষে দুষ্ট ভেবে আমাকে "বাকশালি" বলে গালি দিতেও কৃপণতা বোধ করেননি। এতে আমি মোটেও আহত হইনি। কোন লেখকের সব লেখাই সকল পাঠক কত্রিক বাহবা পাবে কিংবা সমান ভাবে সমাদৃত হবে এমনটি ভাবার কোনই যৌক্তিকতা নেই। এতে লেখকের যন্ত্রনা বাড়ে। সুতরাং যিনি লিখেন বা লেখক তিনি পাঠকদের প্রতিক্রিয়ার কথাটা মাথায় রেখেই লিখেন। তবে সাম্প্রতিক মন্তব্যকারি সম্মানিত পাঠকদের শুধু এততুকু বলতে চাই, কারো কোন চাওয়া বা পাওয়ার আশা থাকলে কেউ চামচামি বা মুসাহেবির আশ্রয় নেয়। আমি বাক্তগতভাবে যেহেতু স্থায়িভাবে প্রবাসে বসবাস করছি সেহেতু আমার সে লোভ লালসা কোনটাই নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি গলায় ঝুলিয়ে পাখির মতো মাটির গন্ধ নিয়েও যে দেশে বেচে থাকার ঠাই হয়নি সে দেশের কোন রাজনৈতিক দলের বা নেতার ধার ধারার মতো সময় আমার নেই। ভিনদেশের এ সভ্য সমাজে থেকে ( যেখানে কারো কোন কর্ম না থাকলেও সরকারি ভাতা খেয়ে রাজার হালে চলা যায়) যখন দেখি ক্ষুধা বা ঋনের দায়ে মানুষকে কিডনি বিক্রি করতে হয়, শেয়ারবাজার, যোগাযোগা ব্যবস্থা সহ সবকিছুই দুর্নীতির রাহুগ্রাশে বন্দি থাকার পরো সরকারের ক্ষমতাবান মন্ত্রিরা নির্লজ্জের মতো দাঁত বের করে হেসে বলে সব ঠিক আছে, কিংবা বিরোধী দলীয় মহামান্য নেতারা কারনে অকারনে নিছক দলীয় স্বার্থে হরতাল বিক্ষুব বা ধ্বংসাত্মক কার্যাবলীর মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি টাকা ও জাতীয় সম্পদ বিনষ্ট করে, সাধারন জনগনের জানমালকে অনিরাপত্তায় ঠেলে দিয়ে দূর্ভোগ বাড়িয়ে দেয় তখন আমাদের নিজেদেরকে বড্ড অপাংতেয় মনে হয়। বিবেক তাড়িত হই। জাত লিখিয়ে না হয়েও একান্তই নিরপেক্ষ ভাবে মনের কথা গুলো সাদামাটা ভাবে সম্মানিত পাঠক কূলের সামনে বিনয়ের সাথে তুলে ধরার দুর্বল প্রয়াস চালাই। এতে যদি আমার লিখা কারো পক্ষে বা বিপক্ষে চলে যায় কিংবা কেউ দুঃখ পেয়ে অযথাই যাথনায় ভূগেন তাহলে আমি সত্যি দুঃখিত।

ফিরে যাই মিরাজ ভাইয়ের কথায়। আজকের কাদাছুড়াছুড়ির রাজনৈতিক মাঠের নেতা হয়েও তিনি যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছেন তা আমাকে বিমোহিত করেছে। মিরাজ ভাই একজন ভদ্রলোক মানুষ। তিনি বছর দু এক যাবত নিরলস ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন আয়ারল্যান্ডের মতো একটি রাজনৈতিক দীনতা সম্পন্ন দেশে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নামক দলটিকে দাঁড় করানোর জন্য। পদ-পদবির মোহে আচ্ছন্ন কিছু মানুষের বিচ্ছিন্ন কোন্দল, অরাজনৈতিক আচরন, দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা প্রভৃতি প্রতিকুল পরিবেশের মাঝে জীবন ও জীবিকার দায় ঘাড়ে নিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা ও সম্প্রসারন ঘটানো মোটেই ছেলের হাতে মুয়া নয়। তা' ছাড়া গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক কালচারে বিশ্বাসী শিক্ষিত বা উচ্চ শিক্ষিত, ভদ্র ও মার্জিত রুচি সম্পন্ন সুশীল সমাজ বলতে আমরা যাদেরকে বুঝি তাদের অধিকাংশই আজকের এ ঘুনে ধরা সামাজিক বা রাজনৈতিক দলের কোন মাঠেই নামতে আগ্রহি নন। এমতাবস্তায় বিদেশের মাটিতে একটি দলের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়ে একে পূর্ণাঙ্গ ভাবে রুপ দান করাটা যথেষ্ট দূরুহ কাজই বটে। তারপরো সাধুবাদ তাকে এ জন্য যে সমমনা লোকদেরকে নিয়ে তিনি চেষ্টাতো করে চলছেন।

সম্ভবত বছর দুএক আগে প্রখ্যত কলামনিষ্ট জনাব আব্দুল গাফফার চৌধুরীর একটি লিখা পড়েছিলাম। এতে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিকে গ্রাম্য কোন্দলের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। এও বলেছিলেন গ্রাম্য কোন্দলেও একটা রুলস অফ গেমস থাকে। বাংলাদেশের বর্তামান রাজনীতিতে তাও নেই। তাঁর এ সাদাসিদে একেবারেই সত্য কথাটির সাথে সহমত পোষণ করে আরেক ধাপ এগিয়ে আমি বলতে চাই, শুধু বাংলাদেশের রাজনীতিতেই নয়; আয়ারল্যান্ড সহ সারা বিশ্বে বসবাসরত বাঙ্গালীদের রাজনীতিতে, সমাজনীতিতে এমনকি কমিউনিটি জনিত কোন সাদামাটা কাজেকর্মে এ কোন্দল অব্যাহত।

কেন এই পচনদশা! রাজনীতিতো কোন ঠুনকো জিনিস নয়। উস্কনিমুলক কথা, বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে মাঠ গরম করা কিংবা পরস্পরের প্রতি অশ্রন্ধা দেখিয়ে প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার নামতো রাজনীতি নয়। আজ রাজনীতি যে সীমাবন্ধতায় গিয়ে ঠেকছে তা সুদুর অতীতে দেশ যখন বিজাতীয় শাসনের নাগপাশে আবন্ধ ছিল তখনো তেমনটি দেখা যায়নি। যদি তাই হত তাহলে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, শেরেবাংলা, সুভাষ বসু, সোহরাওয়ারদি, ভাসানি ও বঙ্গবন্ধুর মতো দেশরত্ন নেতাদের আবির্ভাব ঘটতনা এ বাংলায়।

যে লিখা দুটোকে কেন্দ্র করে আজকের লিখার অবতারনা মূ্লত আমি কাউকে খাটো করা কিংবা কোন হীন স্বার্থে দলীয় দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে ঐ লিখা গুলো লিখিনি। মন্ত্রীদের অগনতান্ত্রিক আচরন ও লাগামহীন কথা বার্তায় সাধারন আমজনতা যারা রাজনীতি টাজনিতি এতো কিছু বুঝেনা তারা বিষিয়ে উঠছে। অথচ ওদের দ্বারাই সরকার, ওদের জন্যই সরকার। এ সহজ সত্য কথাটা মন্ত্রীরা উপলব্ধি করতে চাননা। আবার বিরোধী দলীয় নেতারা সাধারন জনগনের মঙ্গলের কথা বল্লেও তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচীতে তা ফুটে উঠেনা। তাই একজন হিতাখাঙ্কি হিসেবে আমিও চাই কাগজে প্রকাশিত বিভিন্ন দিক নির্দেশনার আদলেই হোক কিংবা রাজনৈতিক প্রজ্ঞার খাতিরেই হোক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুষ্ট মন্ত্রীদের ও সকল ব্যর্থতার সঠিক প্রতিকারের মাধম্যে এবং বিরোধী দলীয় নেতা বেগম জিয়া গঠনমূলক রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রদান করে দেশে তাঁদের রাজনৈতিক ম্যচুরিটির উদাহরণ সৃষ্টি করবেন।