এ বর্বরতার শেষ কোথায়

সাজেদুল আমিন চৌধুরী রুবেল
Published : 15 Jan 2012, 04:57 AM
Updated : 15 Jan 2012, 04:57 AM

ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের মহারাষ্ট্র নামের অঙ্গরাজ্যের একটি গ্রামে। গ্রামটি ওই প্রদেশের খোদ মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চ্যাবনের জেলার ভেতরেই। পয়তাল্লিশ বছর বয়স্ক এক প্রৌঢ় মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরানো হয়েছে। প্রহার করতে করতে এক পর্যায়ে মহিলাটিকে উলঙ্গ করে দিয়ে পুরো গ্রাম জুড়ে ঘুরিয়ে এক দল প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসাপরায়ন নরপিচাশ শাস্তি দেবার নাম করে খুব মজা করে দাঁত বের করে হেসেছে।

নির্যাতিত ভদ্রমহিলা এখন হাসপাতালে ভর্তি থেকে বিচারের আবেদন জানিয়েছেন সবার কাছে। অথচ যারা তাকে এভাবে অপমান ও নির্যাতন করেছে তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমনকি মহিলা দলিত শ্রেণীর বলে তার অভিযোগ নিবন্ধিত হতেও অনেক সময় লেগেছে। পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী, ওই ঘটনায় জড়িত ব্যাক্তিরা মুখ্যমন্ত্রীর যথেষ্ট কাছের লোক বলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেরীতেই নেয়নি শুধু, ওদের বিরুদ্ধে যথাযত ব্যাবস্থাও নিচ্ছেনা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মহিলার সাথে দলিত মহাসংগের সভাপতিও বিচারের দাবী জানানোর পরো বিচারের বানী চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী নিভৃতে কাঁদছে।

গত ১৮ ডিসেম্বর '১১ উচ্চ বংশীয় এক যুবতীকে নিয়ে পালিয়ে যায় ওই মহিলার ছেলে। এরপর ওই যুবতীর অভিভাবকরা তাদের মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে এই মর্মে একটি অভিযোগ দাখিল করার পাশাপাশি ওই দলিত মহিলাকে তাদের পালিয়ে যাওয়া মেয়েকে বের করে দেয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে হয়রানিমুলক পন্থায় চাপ প্রয়োগ করে। তিনি তার ছেলে ও ওই মেয়ে পালিয়ে গিয়ে কোথায় বসবাস করছে অর্থাৎ তাদের কোন সঠিক হদিস তার কাছে নেই জানালে পলাতক তরুণীর পরিবার ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গ তাকে ডেকে নিয়ে বর্বরোচিত ভাবে প্রহার ও উলঙ্গ করে দিয়ে নিজেদের উলঙ্গতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় সগর্বে।

সত্যিকারার্থে ভারত ছাড়া বিশ্বের কোথাও এ ধরনের নগ্ন ঘটনা ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই। অথচ ভারত নিজেদেরকে সভ্য দেশ হিসেবেই নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরে বিশ্ব দরবারে। বংশ গৌরবের মতো ঠুনকো মনোভাব কেবল আমাদের ভারত উপমহাদেশেই বিরাজমান। উন্নত বিশ্ব মোটেই এসবের ধার ধারেনা। আমাদের বাংলাদেশেও নারীসমাজ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে নিপীড়িত, নির্যাতিত হন। গ্রামীন সমাজে কখনো কখনো তাদেরকে বিচারের মুখুমুখি হয়ে মোল্লামুসুল্লিদের বেত্রাঘাত সহ্য করতে হয় বটে কিন্তু এভাবে নগ্ন হয়ে পুরো গ্রাম ঘুরার কোন নজির এখন পর্যন্ত ঘটেনি।

আমার প্রশ্ন, পলায়নকারী এ মেয়ের পরিবার বা স্বজনরা না হয় মেয়ে শোকে পাগল হয়ে গিয়ে এ ধরনের অসভ্যতার সুচনা ঘটিয়েছে, কিন্তু পুরো গ্রাম বাসির সামনে এ অন্যায় অসভ্যতা বা পাগলামি করে পার পায় কিভাবে? নাকি গুহা যুগের অন্ধত্ব দখল করে আছে পুরো গ্রামবাসিকে এ ডিজিটাল যুগেও!

এ উলঙ্গতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। জাতপাতের বড়াই করে যারা এ অসহায় মহিলাটিকে এভাবে বেইজ্জতি করলো তারা কিন্তু মুলত আরেকটি মেয়েপক্ষ। যে মেয়ের টানে মধ্যবয়সী এক মহিলাকে নগ্ন করা হল তার রেশ ধরে যদি ওই অপমানিত মহিলার ছেলে হিংস্র প্রতিশোধ পরায়নতায় যুবতি দেহের গোপন লুলুপতা বাজারে বিকিয়ে দেয় তখন কোথায় থাকবে ওইসব উচ্চ বংশের নামে দেয়াল তৈরি করা মানব নামের অসভ্য দানব গুলোর?

এভাবে হিংসা প্রতিহিংসার ফলে নগ্নতা, অসভ্যতা ও বর্বরতা যে কেবল বেড়েই চলবে। সভ্য যুগে পা রেখেও অসভ্য ইতরের বৃত্য থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারছিনা। কিন্তু এভাবে আর কতকাল? এর শেষ কোথায়?