আমরা প্রায়সই পত্রপত্রিকায় দেখে থাকি মুক্তিযোদ্ধারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারা যথাযথ সম্মান পাচ্ছে না। জাতীর এই বীরদেরকে এই পড়ন্ত বেলায় একটু সচ্ছলতার সাথে সমাজে টিকে থাকার জন্য সরকার কিছুকিছু অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ভাতা দিচ্ছেন। আবার যারা শিক্ষিত তাদেরকে চাকুরী মেয়াদ বৃদ্ধি বা চাকুরী প্রদানের মাধ্যমে বা অন্য কোনভাবে কিছুটা হলেও সম্মান প্রদানের চেষ্টা করছে। আবার যাদের সন্তানরা চাকুরী জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেছে তাদেরকে সরকারী, আধা সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোটা ভিত্তিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিয়োগ দিচ্ছে। কারন তাদের সন্তানরা সচ্ছল হলে মুক্তিযোদ্ধারাও সচ্ছলতা পাবে।
তত্ববাধায়ক সরকারের সময় পিএসসির চেয়ারম্যান এর মদদে সুবিধাগুলো রদ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এবং তখন অনেক ব্যক্তিবর্গ এটা নিয়ে সমালোচনা করতে যেয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক কটাক্ষ করেছিলেন। বর্তমান সরকার তার সীমিত সম্পদ থেকেই জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিতে চেষ্টা করছে। যা অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সরকারী বা স্বায়ত্ত্বশাসিত বিভিন্ন সংস্থার নিয়োগ বিজ্ঞাপনে মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে প্রমানের জন্য বিভিন্ন সনদ চেয়ে থাকে। যেমন :
১. বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও প্রধান উপদেষ্টা ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান কতৃক স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা পিতা/মাতার সনদের সত্যায়িত কপি।
২. মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব কর্তৃক স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা পিতা/মাতার সনদের সত্যায়িত কপি।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, ইদানিং কিছু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এটা প্রমানের জন্য –
ইউনিয়ন পরিষদ – এর চেয়ারম্যান অথবা
পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অথবা
ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর নিকট থেকে প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এই মর্মে প্রত্যয়ন পত্র দাখিল করতে হবে ।
নিম্নে এরূপ দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তুলে ধরছি-
প্রথমটি ৫ জানুয়ারি ২০১১ দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত পেট্রোবাংলার “নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি”:
বিজ্ঞপ্তিটির শর্তাবলীর ৬ নং ক্লজে লেখা রয়েছে-
“৬। মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে চাকুরী প্রার্থীর পিতা/মাতা মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পত্র সংখ্যা ০৩.০৭৭.০১.০৪৬.০০.০৪.২০১০-৩৫৬ তারিখ ৭.১১.২০১০ মোতাবেক যাদের নাম মুক্তিবার্তায় প্রকাশিত হয়েছিল; অথবা যারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষরযুক্ত সনদপত্র (Certificate) গ্রহণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে প্রমাণকে হিসেবে উহার সত্যায়িত কপি এবং চাকরিপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এ মর্মে ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান বা পৌরসভা /সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।”
সত্যায়িত কপিও নয়, অর্থাৎ প্রতিটি আবেদন করার সময়ই (সরকারী চাকুরির প্রথম বা এক-দুটো আবেদনেই সফল হতে পেরেছেন এমন সৌভাগ্যবান খুবই নগন্য) কাউন্সিলরের কাছে নিজের চৌদ্দগুষ্টির বয়ান এর সহিত তৈল মর্দন করিতে হইবে প্রত্যয়ন পত্রের জন্য।
দ্বিতীয়টি হিসাব মহা নিরীক্ষকের কার্যালয়ের ওয়েব সাইট থেকে নেয়া, ১০.০৪.২০১১ প্রকাশিতঃ
বিজ্ঞপ্তিটির শর্তাবরীর ২(ঝ) নং ক্লজে লেখা রয়েছে-
মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পুত্র/কণ্যা হিসেবে চাকরিপ্রার্থীকে আবেদন পত্রের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পিতা মাতার মুক্তিযোদ্ধার সনদ (উপযুক্ত কতৃপক্ষ কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও প্রতিস্বাক্ষরিত) এর সত্যায়িত কপি সংযুক্ত করতে হবে। একই সাথে আবেদনকারীকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এই মর্মে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত সনদের সত্যায়িত কপি সংযুক্ত করতে হবে।
প্রার্থী একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তা সার্টিফাই করবে স্থানীয় পর্যায়ের একজন জনপ্রতিনিধি।
যে বা যাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে প্রায়শই অভিযোগ ওঠে সন্ত্রাসী হিসেবে,
যাদের বিরুব্ধে প্রায়শই অভিযোগ ওঠে গম চুরির,
যাদের কিছু অংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পত্তির অবৈধ দখলের,
যাদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধই দেখেনি,
যাদের অনেকে বা তাদের পিতা বা পিতামহের বিরুদ্ধে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ
অথবা রাজাকারি বা দালালির অভিযোগ।
মুক্তিযোদ্ধার একজন সন্তান হিসেবে আমি একে অত্যন্ত বিব্রতকর ও অযোক্তিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছি। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থ দেখার দায়িত্ব যে মন্ত্রণালয়ের, এ ব্যপারে সে মন্ত্রণালয়ের সুবিবেচিত ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ করছি।
প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিনা সে ব্যপারে প্রত্যয়ন করার দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের স্থানীয় কমান্ডারদের।
অথবা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্রও কার্যকর করা যেতে পারে।
অথবা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পিতার মুক্তিযুদ্ধের সনদ ও সন্তানের নাগরিকত্ব বা জন্ম সনদ/এসএসসি/জাতীয় পরিচয় পত্র এর মাধ্যমে
পিতা-সন্তান সম্পর্ক যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রত্যয়ন পত্র/সার্টিফিকেট দেয়া যেতে পারে।
Neon বলেছেনঃ
40 bachor aage jini prokitho juddokorecen tar boyos akhon minimum 60years. 60years old lokher sonthan kivabe SSC candidate hoy! R jara real mukthijudda tara sudhu desh cyecilen, tader santhande chakuri na.Tai akhon tai soddho pass kora graduate(22years) ra jodhi dabi kore tar baba mukthijuddo cilen tabe seta kothotuku sotto sei janen…!tai amar mothe next 5 years pore Mukthijudda kota banned kora uccith…tathe sadharon student der proshromer mullo deoa hobe abong tader modde desh prem jagrotho hobe bole mone kori….
মওদুদ মোমেন মিঠু বলেছেনঃ
প্রথমত আমার লেখার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যাচাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে। সে ব্যপারে আপনি কিছুই উল্লেখ করেননি। আপনি মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের সন্তানদের দেয়া সুযোগ সুবিধা এবং প্রকৃত অপ্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার বিতর্কে চলে গিয়েছেন। আপনার মন্তব্য পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিষদগারই দেখা যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত সংক্ষেপে আপনার মন্তব্যের প্রতি মন্তভব্য বলি, মুক্তিযুদ্ধে যারা গিয়েছিলেন তাদের সিংহভাগই ছিল তরুণ বয়সের ও অবিবাহিত। অনেক সংখ্যক মুক্তিযুদ্ধা আছেন যারা তৎকালীন সময়ে এসএসসি পরীক্ষার দিবে বা দিবেন।
২২ বছরে এ দেশে খুব নগন্য সংখ্যক ছেলেমেয়েরা গ্রাজুয়েট হয়। আর তারা সাধারণত প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট হয়ে থাকে। যেখানে সেশন জটের পরিবর্তে কোর্স ডিউরেশনের কম সময়েও পাশ করছে। আর বাংলাদেশে সকল স্টুডেন্টরাতো ৬ বছর বয়স থেকেই স্কুলে যায়, আর পরীক্ষাতে সকলেই পাশ করে, কোন ইয়ার গেপ থাকে না…..তাই না? শহরের গন্ডি ছেড়ে একটু গ্রামে আসুন। এখনো এদেশের ৮০শতাংশ লোক গ্রামে বসবাস করে।
আর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে অত্যন্ত নগণ্য সংখ্যায় কিছু পরিমান ‘অপ্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা’ লিস্টে চলে আসতে পারেন। কিন্তু যে প্রক্রিয়া মেইনটেইন করে মুক্তিযোদ্ধাদের লিস্ট করা হয়েছে তাতে আসার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কেননা ইন্ডিয়াতে কেন ক্যম্প্যে তারা ট্রেনিং নিয়েছে তার লিস্ট, বিগত বিভিন্ন সরকারের সময় করা লিস্ট, স্থানীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মতি (তিনি আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন), ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় বিবেচনার পরেই মুক্তিযোদ্ধাদের লিস্ট করা হয়।
“মুক্তিযোদ্ধাদেরা দেশ চেয়েছিলেন তাদের সন্তানদের চাকুরিনা” মুক্তিযোদ্ধারা দেশে স্বাধীনতার জন্য লড়াই এর পাশাপাশি স্বাধীন দেশে মাথা উচু করে বাঁচতেও চেয়েছেন। আর তাদের সন্তানরাতো চাকুরীর যোগ্যতা অর্জন করার পর অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সাথে প্রতিযোগীতার মাধ্যমেই চাকুরিতে ডুকছেন। আপনি কেন একথা বলছেন তা আপনার কোটা পদ্ধতীর প্রতি বিরুদ্দাচরনই বলে দিচ্ছে। অপনিও চাকরী ক্ষেত্রে কোন না কোন কোটার মধ্যে পড়তে বাধ্য।
মওদুদ মোমেন মিঠু বলেছেনঃ
হয় মুক্তিযোদ্ধা কোটা…
অথবা নারী কোটা…
অথবা পোষ্য কোটা…
অথবা জেলা কোটা…
অথবা উপজাতীয় কোটা…
অথবা প্রতিবন্ধী কোটা…
অথবা পশ্চাদপদ জনসাধারণের কোটা…ইত্যাদি..ইত্যাদি।।
মামুন ম. আজিজ বলেছেনঃ
বেশ কিছূ কথা বলেছেন। যা সবার মনে দাগ কাটার মত
ওয়েব রুলার বলেছেনঃ
“jara real mukthijudda tara sudhu desh cyecilen, tader santhande chakuri na” —- একমত।
” হয় মুক্তিযোদ্ধা কোটা…
অথবা নারী কোটা…
অথবা পোষ্য কোটা…
অথবা জেলা কোটা…
অথবা উপজাতীয় কোটা…
অথবা প্রতিবন্ধী কোটা…
অথবা পশ্চাদপদ জনসাধারণের কোটা…ইত্যাদি..ইত্যাদি। ”
সাধারণ ছাত্র দের কী হবে।কিছু কিছু কোটা গ্রহণযোগ্য , কিছু গ্রহণযোগ্য না।
তবে কোটা কোটা করলে দেশের গুরুত্তপূর্ণ জয়গা মেধা শূন্য হয়ে যাবে.