বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ছাত্র-শিক্ষক বেতনকাঠামো নয় কেন?

গুঞ্জন রহমান
Published : 10 Sept 2015, 07:10 PM
Updated : 10 Sept 2015, 07:10 PM

VAT ছাত্রছাত্রী দেবে, নাকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেবে, সেটা নিয়ে ফয়সালা হওয়ার আগে ভ্যাট টার্মটা নিয়েই প্রশ্ন আছে। সরকার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা খরচের উপর অন্য কোনো করারোপ না করে ভ্যাট আরোপ করলো কেন? এ থেকে বোঝা যায়, সরকার এইসব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান প্রক্রিয়াকে পণ্য বিক্রি হিসেবে ধরে নিয়ে এবং সেই পণ্যটিকে বিলাসদ্রব্য হিসেবে বিবেচনা করে তার উপর ভ্যাট ধরেছে। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে সরকারকে আগে প্রমাণ করতে হবে যে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পড়াশোনাকে পণ্য তথা বিলাসদ্রব্যে পরিণত করেছে। সরকার যদি এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়, তাহলেই কেবল তাদের ভ্যাট আরোপ করাটা যৌক্তিক হবে, নচেৎ নয়। কেননা, ভ্যাট সাধারণত পণ্য তথা বিলাসদ্রব্যের উপরই ধার্য করা যায়। আর ভ্যাট জিনিসটা বরাবর ভোক্তার উপর প্রযোজ্য হয়। ফলে, সরকার যতই বলুক যে, এটা ছাত্রছাত্রীরা দেবে না, দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, আদতে সেটা ছাত্রছাত্রীর উপরই প্রযোজ্য হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত এটা ছাত্রপ্রতি নির্ধারিত হবে। সরকার যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই আদায় করতে চায়, তাহলে ভ্যাট কেন? অন্য কোনো কর আরোপ করুক।

তবে তারও আগে যেটা জরুরী, তা হলো সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ইউনিফর্ম পেমেন্ট প্লাটফর্মে আনা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেমন ইউজিসি নির্ধারিত বেতন-ভর্তি ফি-সেশন চার্জ-পরীক্ষা ফি ও অন্যান্য ফি'র বাইরে নিজেরা কোনো বর্ধিত ফি আদায় করতে পারে না বা নতুন কোনো ফি যোগ করতে পারে না, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রেও এরকম একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হোক বা ইউজিসি'র মাধ্যমেই একটি ই্‌উনিফর্ম পেমেন্ট রেট করা হোক, যা সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একইসাথে মানতে বাধ্য হবে, যার অতিরিক্ত একটা টাকাও কেউ আদায় করতে পারবে না ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে। এটা করা না গেলে সরকারের সাড়ে সাত পার্সেন্টই কেবল আন্দোলনের ইস্যুতে পরিণত হবে, আড়ালে যে সাতশো পার্সেন্ট গায়েব হয়ে যাচ্ছে, সেটা কারো চোখে পড়বে না।

অতএব, বন্ধুগণ, ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবী আদায়ই শেষ কথা নয়। যদি এই দাবীতে সফল হয়েও যান, তবু আন্দোলনের সুযোগে ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় যে শক্তি আপনাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে, সেই শক্তিকে বৃথা যেতে দেবেন না। রাজপথ যখন দখল করেই ফেলেছেন, দুর্নাম যখন হয়েই গেছে, এবার শেষ দেখে ছাড়ুন। দাবি তুলুন যে – ভর্তি ফি, সেশন চার্জ, পরীক্ষা ফি, মাসিক বেতনসহ অন্য যতরকম ফি শিক্ষাব্যয়ের অন্তর্ভূক্ত, তা দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একই হারে নির্ধারণ করতে হবে। না এক টাকা কম, না এক টাকা বেশি। এবং এটা মনিটরের দায়িত্বে থাকবে সরকারি কর্তৃপক্ষ, সম্ভব হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি।

আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই দাবী মানতে চাইবে না, কারণ এতে তাদের স্বার্থ ক্ষূন্ন হবে, স্বেচ্ছাচারিতার অধিকার ক্ষূন্ন হবে। আপনাদের শিক্ষকেরাও মানতে চাইবে না, কারণ তাতে করে ছাত্র বেতনের মতো শিক্ষক বেতনও ইউনিফর্মড হয়ে যাবে, যার যতটা সাধ্য আদায় করে নেয়ার মওকা ফসকে যাবে। আবার সরকারও মানতে চাইবে না, কারণ ইউজিসি বা অন্য কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষের অধীনে নিয়ে ফেলা মানেই সরকারকে দেশের সমস্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে রিকগনিশন দেয়া, বিপদে আপদে তাদের দায়িত্ব ও দায় নিজের কাঁধে নেয়া।

তো এত সব প্যারামিটার মাথায় রেখে আন্দোলন করতে পারবেন? পারবেন, নিজ নিজ বিশ্বব্যিালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে? আমার ধারণা পারবেন না। কারণ, খুব সম্ভব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তির সময়েই ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা বন্ড সই করিয়ে কোনো রকম আন্দোলন-সংগ্রাম করার অধিকার রহিত করে রাখে। আপনি আন্দোলনে নামবেন, আপনার ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাবে। এ পর্যন্ত যা কিছু ব্যয় করে এসেছেন, সব যাবে পানিতে। আর যেহেতু সেশন গত হয়ে গেছে, পাবলিক বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ভর্তি হতে পারবেন না, অন্য কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও আপনাকে আর নেবে না। জলের মতো অর্থব্যয় করে মাঝ পথে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হবে – ডিগ্রিও নাই, অর্থও নাই! কে এই ঝুঁকি নেবে?

তাহলে আর কী? খামাখা গলা ফাটায়ে কিসস্যু হবে না! যান, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যান… বেকার জ্যাম বাড়ায়েন না!