লাইভ শো’তে হাতাহাতি, টকশো এখন তিক্ত

গৌতম হালদার
Published : 6 May 2015, 07:02 PM
Updated : 6 May 2015, 07:02 PM
এ কথা অত্যুক্তি নয় যে জাতি হিসেবে আমরা বড়ই দুর্ভাগা।এর অজস্র কারণ আছে বটে, তবে সব থেকে বড় কারণ বোধ করি আমাদের মধ্যে সহনশীলতা আর ত্যাগের আদর্শ বিরল। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই আমাদের সকলের মধ্যে "সব আমি একা চাই" মানসিকতাই আমাদের সহস্রাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যকে পলে পলে নিঃশেষ করে দিয়েছে। অবস্থা এমন যে, ভিন্নমতকে গ্রহণ করা তো দুরে থাক, পরস্পরের প্রতি ন্যুনতম সৌজন্যবোধটুকুও প্রদর্শনে আমরা এখন কুন্ঠাবোধ করি। আমরা দিনে দিনে এক বিরল প্রকৃতির হিংস্র জীব-এ পরিনত হচ্ছি, যেখানে মাসল'ই প্রধান আর শেষ কথা।
ব্যক্তিজীবনে আমরা সবাই 'আমিই এক'শ শতাংশ নির্ভুল' মানসিকতার। এরফলে, হাজারো বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও, বর্তমান বাংলাদেশে টিভি টকশো'ই একটিমাত্র জায়গা যেখানে গৃহীত হোক বা নাহোক ভিন্নমতের প্রকাশ সম্ভব। সাধারণত টকশোর আলোচক নির্বাচন করা হয়ে থাকে তাদেরকে, যাদেরকে সমাজ "রিসোর্স পার্সন" হিসেবে গণ্য করে।এদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় সামাজিক রাজনৈতিক ও অন্যান্য সমসাময়িক বিষয় আলোচিত হয়, মানুষ ভেতরের খবরাখবর অবগত হয়। সৃষ্টি হয় সামাজিক গণসচেতনতা, জনমত গঠিত হয় কোনো সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন বিকল্প ও পন্থাপদ্ধতি খুঁজে পেতে। টকশো চরম উত্তেজনাপূর্ণ স্থানও বটে, যেখানে সঞ্চালককে সবসময়ে তৈরী থাকতে হয় অনুষ্ঠান "কাট" করে যুযুধান পক্ষগুলোর ভাষার অশালীন প্রয়োগের জনসমক্ষ হওয়া থেকে রোধ করার জন্য কিংবা রক্তারক্তি হওয়া থেকে নিবৃত করার জন্য।
টকশোতে মারমুখী আচরণ আমরা অনেক দেখেছি। সেগুলো মূলত হয় যখন উভয় বক্তাই হয়ে থাকেন রাজনীতির সক্রিয় নেতা কিংবা কর্মী। ভিন্ন মতাদর্শের অনুসারী হওয়ার ফলেই, নিজ নিজ দলের বা গোষ্ঠির নীতি-আদর্শকে প্রাধান্য দিতেই এমনটি ঘটে থাকে। ইতোপূর্বে একাত্তর টিভিতে সাংসদ জনাব শামিম ওসমান আর মেয়র জনাবা সেলিনা হায়াত্ আইভী'র মধ্যকার নিচু মানের ভাষার প্রয়োগ আমাদের অনেকেরই জানা। বলা প্রাসঙ্গিক তারা দুজনেই রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট আছেন। তবে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের আলোচনায় শারীরিক নিগ্রহ করা কিংবা নিগ্রহের স্বীকার হওয়া ইতোপূর্বে এদেশে ঘটেছে কিনা, আমার ঠিক মনে আসছে না।
ঘটনা ঘটেছে গত চার মে সোমবারে।গভীর রাতে একুশে টিভিতে সরাসরি প্রচারিত একুশের রাত অনুষ্ঠানটিতে "রিসোর্স পার্সন" হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুজন টকশো পরিচিত মুখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুজ্জামান ও মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ।আলোচনায় সম্মানিত ব্যক্তিদ্বয় ব্যক্তিগত আক্রমন ও পাল্টা আক্রমনের এক পর্যায় হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়, যা অনুষ্টানটি "অন এয়ার" এ থাকার কারণে প্রদর্শিত হয় সমস্ত দর্শকদের কাছে। ঘটনাটি ছিলো নিঃসন্দেহে আকশ্যিক এবং দুজন ব্যক্তির নিজের রাগ ও ক্ষোভের উপর নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পরার ফলশ্রুতি।দৃশ্যটি দেশব্যাপী টকশো মহলে বেশ আলোচনার উদ্রেক করেছে, সন্দেহ নেই।

এখন প্রশ্ন হলো, সরাসরি সম্প্রচারিত টিভি অনুষ্ঠানের মান্যবর অতিথিদের এই যদি হয় অবস্থা ! তাহলে এদের কাছ থেকে জাতি কী শিক্ষা নিবে? আর এই শ্রেনির টকশো ব্যাক্তিত্ত্বগণ জাতিকেই বা কী তথ্য বা দিবেন, যার মাধ্যমে জাতির মননে আঘাত করে গড়ে তুলতে পারবেন জাতীয় ঐক্যমত্য? বড় চিন্তার বিষয়!