বিলটি পাশের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের সুদক্ষ কুটনৈতিক পদক্ষেপ আর ভারত সরকারকে এই সুযোগে অন্তর থেকে ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ-এর সাথে ভারতের সাথে, বিশেষ করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস'র সঙ্গে সখ্যতা সবার কাছেই জানা। আমরা এ নিয়ে আমাদের দেশের অভ্যান্তরে, বিশেষ করে বিএনপি'র রাজনৈতিক প্রচারণায়, আওয়ামী বিরোধিতার ইস্যুতে 'আওয়ামী ভারত সখ্যতা' ইতোপূর্বে বেশ জোড়ালোভাবে কাজে এসেছে সেই ৯০ সাল থেকে। দেখেছি নব্বই-এর নির্বাচনে ভারত বিরোধিতার জিগির জনগনকে গলধকরণ করিয়ে কীভাবে রাতারাতি হিরো বনে গিয়েছিল বিএনপি? সেবার শুধুমাত্র ভারত বিরোধী স্লোগানেই বিএনপি আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করতে পেরেছিল, পেয়েছিল দেশের শাসনভার। এমনও ঘটনার স্বাক্ষী আমরা হয়েছি, ভারতের রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ ভ্রমনে, সমস্ত সৌজন্যবোধ আর বাঙালি আতিথেয়তার ঐতিহ্য জলাঞ্জলী দিয়ে, শুধুমাত্র ভারত বিরোধী অবস্থান জনগনের কাছে সুস্পষ্টভাবে পৌছে দেবার সুযোগ নিতেই বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শ্রী প্রনব মুখার্জির সাথে দেখা করেন নি।
বিএনপির রাজনীতিতে ভারত বিরোধিতা একটা গুরুত্ত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। ভারতের বিরোধিতা করতে গিয়ে অন্যকারও প্রতি প্রীতি, এমনকি যে দেশটির অপশাসন, শোষণ আর বঞ্চনার প্রতিবাদে বাঙালী একসাগর রক্ত, ত্রিশ লক্ষ প্রাণ আর তিন লক্ষ মা বোনের জীবনের অমূল্য সম্পদ, সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সেই পাকিস্তান প্রীতিও দেখাতে কুন্ঠাবোধ করেনি বিএনপি। কিছু মানুষ, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও পাকিস্তানের প্রতি ছিল অনুগত, তারা, আর তাদের উত্তরপুরুষদের কাছে এটা বরং ভালই লেগেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রী মনমোহন সিং যখন বাংলাদেশ সফরে আসেন, তখন ভারত বাংলাদেশ দুতরফেই বেশ আশার বাতাস বইছিল তিস্তা জলবন্টন চুক্তি আর ট্রানজিট চুক্তি নিয়ে। হঠাত তা আটকে যাওয়াতে, বিষয়টি নিয়ে সেসময়ে বিএনপি বেশ সরগরম হয়েছিল। আর সেসময়ে চুক্তিদ্বয় স্বাক্ষরিত হলে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভিন্ন রকমই হতে পারতো, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। চুক্তিদুটি না হওয়াতে বিএনপির ভারতবিরোধী প্রচারণার পালে কুসুম হওয়া লেগেছিল, কিছুটা হলেও বেগবান হয়েছিল তাদের সরকার আর ভারত বিরোধী জিগিরও।